Sunday, August 24, 2025

পূর্বসূরি বসুকেই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন মমতা, অভিজিৎ ঘোষের কলম

Date:

Share post:

অভিজিৎ ঘোষ

মঙ্গলে ঊষা, বুধে পা।

বুধবার সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ।

পরপর তিনবার, হ্যাট্রিক।
বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসুর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরল কৃতিত্ব। বুধবার রাজভবনে শপথের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হবে আর এক ইতিহাস। বাংলার একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি টানা তিনবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসলেন। দেশেও টানা তিনবারের রেকর্ড শীলা দীক্ষিতের সঙ্গে তিনি ভাগ করে নিচ্ছেন।

২০১১ সালের জয়ের চাইতেও ২০২১-এ মমতার জয় অনেকটাই এগিয়ে। কারণ কী?

২০১১-তে বাম বিরোধী মনোভাব রাজ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিল বছর তিনেক আগে থেকেই। বিকল্প চাইছিলেন, কম-বেশি সর্বস্তরের মানুষ। মমতা ২০০১, ২০০৬-এ যেটা পারেননি, সেটা পারলেন ২০১১-তে। সব বিরোধী স্রোতকে একসূত্রে বাঁধলেন। মানুষ বিশ্বাস করলেন, বিকল্প মনে করলেন, ভরসা করলেন, ভোট দিলেন।

আরও পড়ুন- ও মোদিজি, বাংলার যেখানে পা রাখলেন, সেখানেই তো হারলেন ! কণাদ দাশগুপ্তর কলম 

২০২১-এর ভোটে মমতাকে নামতে হয়েছে একরাশ নেগেটিভ ইস্যুকে সামনে নিয়ে। সেগুলো কী?

এক. ১০ বছর শাসনের নেতিবাচক দিক

দুই. কোভিড মহামারীর মাঝ মধ্যিখান থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করা

তিন. আমফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর হাল ফেরানো

চার. একের পর এক মামলায় প্রায় ৯ বছর ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ

পাঁচ. রাজ্যে প্রকৃত লগ্নি কার্যত নেই

ছয়. রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ নেই

সাত. পুরভোট হয়নি

আট. কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ

নয়. প্রচুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করেও রোগীর চাপে বেহাল কলকাতার হাসপাতাল। রমরমা অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালগুলির

১০. সিন্ডিকেটের অভিযোগের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে শাসক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগে

তালিকা আরও বাড়তে পারে… কিন্তু কোন কারণে এই ‘না’-এর বাধা টপকালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? যারা দু’ বছর আগে লোকসভায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ভোট দিলেন না। কেন?

১. করোনার সময়েও পেট্রল-ডিজেলের মাত্রাছাড়া দাম

২. গ্যাসের দামে আগুন

৩. সবজির বাজারে আগুন দেশ জুড়ে

৪. আমফানে সাহায্যের নামে ভিক্ষা দেওয়া

৫. কোভিডে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে নরকযন্ত্রণা

৬. ভোটের আগে থেকেই শুরু হলো তদন্তের নামে এজেন্সিকে দিয়ে বিরোধীদের ভয় দেখানো

৭. দল বদলের নামে নানা প্রলোভন, কখনও কখনও টাকার অঙ্ক আকাশ ছোঁওয়া

৮. মুখ্যমন্ত্রী আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুৎসিত আক্রমণ। শুধু তাই নয়, তদন্তের নামে তাদের বাড়িতেও এজেন্সি পাঠানো। ভোটের আগের দিন মদন মিত্রর পুত্র কিংবা অনুব্রতকে নোটিশ পাঠানো

৯. কমিশনকে পার্টি অফিসের মতো ব্যবহার

১০. পার্টির এলাকার নেতার মতো রাজ্যপালকে ব্যবহার

১১. প্রধানমন্ত্রী -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, একগাদা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী, বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের রোজ রাজ্যে এসে দিদিকে হঠানোর ডাক আসলে বিজেপির দুর্বলতাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এ রাজ্যের নেতারা যে এক একটা মাকাল ফল, তা অমিত শাহরা নিজেরাই বুঝিয়ে দিয়েছেন

১২. ভোটের আগের শেষ ৬ মাসে একের পর এক প্রকল্প। স্বাস্থ্যসাথী, দুয়ারে সরকার ডিভিডেন্ট দিয়েছে মারাত্মক। এছাড়া কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজশ্রী, বিনা পয়সায় রেশন তো ছিলই

আরও পড়ুন- প্রবীর ঘোষালের মুখে কাদের প্রশংসা? দলবদলের জল্পনা রাজনৈতিক মহলে

১৩. মারাত্মক স্লোগান, বাংলা তার মেয়েকেই চায়… ভাইরাল। আর তারপর ‘খেলা হবে’

১৪. বিজেপি ক্যাডার ভিত্তিক দল হলেও তৃণমূলকে আন্ডার এস্টিমেট করেছিল। সুচারুভাবে সংগঠন সাজিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁকে কাঠামো সাজিয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত কুমার। কলকাতায় বসে পুরুলিয়ার পারভেলিয়ার সংগঠনের চিত্র মাউসের ক্লিকে হাতে এসেছে। কোনও ঢাক-ঢোল বাজেনি। কৈলাশ বিজয়বর্গীর মতো ‘মূর্খরা’ এই প্রক্রিয়া বুঝতেই পারেননি। প্রত্যেকের জনসভা, মিছিল, ব্যানার, ক্যাম্পেন সব বেঁধে দিয়েছিল সংগঠন। আর কৈলাশরা ভেবেছেন দলটা হাওয়ায় চলছে। এই দুজনকে পেড়ে ফেলতে পারলেই খেল খতম!!!

এবারের লড়াইটা ছিল রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে একটা অঙ্গ রাজ্যের প্রধানের লড়াই। যেটা একসময় জ্যোতি বসুকে করতে হয়েছে। তখন ছিল কংগ্রেস, এখন বিজেপি। যার উপর ভর করে বসু ২৪ বছর ছিলেন মহাকরণে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে এগোচ্ছেন, তাতে যেন পূর্বসূরি বসুর কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন!

আরও পড়ুন- মোদির কেন্দ্র বারাণসী থেকে রামজন্মভূমি অযোধ্যা ও কৃষ্ণভূমি মথুরাতেও বিপর্যয় বিজেপির

Advt

spot_img

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...