Thursday, November 13, 2025

ডাবল ইঞ্জিন সরকার, ওয়ান নেশন আর ওয়ান ইলেকশন, সুমন ভট্টাচার্যর কলম

Date:

Share post:

সুমন ভট্টাচার্য

ডাবল ইঞ্জিন সরকারটা নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপির খুব প্রিয় স্লোগান। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের সময়ও বহুবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এই স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে। মোটামুটিভাবে গোদা বাংলায় এই স্লোগানের মানে হচ্ছে, কেন্দ্রে যে দলের সরকার থাকবে, রাজ্যেও সেই দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আনলে কী হবে? মোদি এবং শাহের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তাহলে কেন্দ্রী এবং রাজ্য সরকার হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে, উন্নয়নের রথ গড়গড়িয়ে চলবে।

করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা এই ডাবল ইঞ্জিন বা কেন্দ্র-রাজ্য যুগলবন্দির অসাধারণ উদাহরণ দেখতে পেলাম। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের সরকারের পারফর্মেন্সের দরুণ করোনায় মৃতদের দেহ গঙ্গায় ভাসতে শুরু করল আর কেন্দ্র এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকল। এইটা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহদের আসল ডাবল ইঞ্জিন। তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী যেহেতু বাংলায় ডাবল ইঞ্জিনের সরকার হল না, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন সেই শব গঙ্গা থেকে তুলে নিয়ে দাহের ব্যবস্থা করছে। আমরা যখন ডাবল ইঞ্জিনের সরকার আনিনি, তখন এই দায়ভার তো আমাদেরই, মানে বঙ্গবাসীর।

আরও পড়ুন  – টিকাকরণে অগ্রাধিকার পাবেন কারা, তালিকা প্রকাশ রাজ্যের

ডাবল ইঞ্জিন যদি স্লোগান হয়, তাহলে ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন মোদী শাহ র এজেন্ডা। অর্থাৎ গোটা দেশে একই সঙ্গে লোকসভা এবং রাজ্যগুলির জন্য বিধানসভা নির্বাচন হবে। গেরুয়া শিবিরের স্বপ্ন, তাহলেই গোটা দেশে একসঙ্গে বিজেপির শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে, আর কোনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকবে না। আসলে ভারতবর্ষের ফেডারেল কাঠামো বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে, বহুস্তরীয় সমাজকে আরএসএস বা গেরুয়া শিবির একদম বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান ই একমাত্র সত্য, কন্যাকুমারিকা থেকে কাশ্মীরের বিভিন্নতার বাস্তবকে বিজেপি স্বীকার করতে চায় না| আরএসএস এবং বিজেপি এক অদ্ভুত কূপমন্ডুকতার কারণে বা এক্কেবারে ফ্যাসিবাদী ঢংয়ে সবকিছুকে এক ধাঁচে ঢেলে ফেলতে চায়।

আসলে যেহেতু আরএসএস বা বিজেপি একেবারে অন্তর থেকে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তুলে দিতে চায়, তাই এই ধরনের এজেন্ডাকে নিয়ে এগোয়, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের স্লোগান তোলে। এবং আমজনতাকে বা ভোটারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আশার কথা, এই করোনা কাল এবং অতিমারী মোকাবিলায় মোদী-যোগীদের ব্যর্থতা তাঁদের যাবতীয় রাজনৈতিক স্লোগানের অসারত্বকে একেবারে সামনে এনে দিয়েছে। যে রাজ্য থেকে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের উত্থান, সেই গুজরাটের করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা আর কঙ্কালসার স্বাস্থ্য পরিষেবা আসলে বলে দেয় প্রশাসন বা কল্যাণমুখী জনপ্রশাসন বলতে কী বোঝায়, সেটা এখনও গেরুয়া শিবির জানে না।

২০১৪ থেকে গুজরাট মডেল গেলাতে গেলাতে আসলে বিজেপি দেশের কী হাল করেছে, সেটা এই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখিয়ে দিয়ে গেল। এরপরে ডাবল ইঞ্জিনের তত্ত্ব মেনে সব রাজ্যে বিজেপির সরকার স্থাপিত হলে দেশে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারতো, তা ভেবেই শিউরে উঠতে হয়। গঙ্গা দিয়ে লাশের মিছিল আর থামতো না!

সুখের কথা বাংলা সেই চাকাকে উল্টে দিয়েছে। বাংলার দেখানো পথে যদি গোটা দেশ হাঁটতে শুরু করে, তাহলেই সবার মঙ্গল।

Advt

spot_img

Related articles

“রিচার নামে স্টেডিয়াম ইতিহাস হয়ে থাকবে”, উচ্ছ্বসিত ঝুলন

শিলিগুড়িতে রিচা ঘোষের(Richa Ghosh)  নামে স্টেডিয়াম হচ্ছে শিলিগুড়িতে। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের নামে...

‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-র ট্রেলার-পোস্টার লঞ্চে ‘বাবা-মেয়ে’র রসায়নে চিরঞ্জিৎ-রুক্মিণী

অর্ণব মিদ্যার ছবি 'হাঁটি হাঁটি পা পা'-র ট্রেলার ও পোস্টার লঞ্চের জমজমাট অনুষ্ঠান হল ফ্লোটেলে। বৃদ্ধ বাবা ও...

লক্ষ্য ২০২৭! ২৫ নভেম্বর শুরু ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে। রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস...

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে স্বচ্ছতা আনতে চালু অনলাইন অডিট ব্যবস্থা

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এ বার থেকে সমস্ত সমবায় সমিতি...