Sunday, August 24, 2025

পালকে পাখির ছবি: সিনিয়র আইপিএস কল্যাণের প্রতিভায় মুগ্ধ কলকাতা থেকে হায়দরাবাদ 

Date:

Share post:

জয়িতা মৌলিক

 

পুলিশের গলায় গান, পুলিশের কলমে সাহিত্য, পুলিশের তুলিতে রং। কড়া মেজাজের সঙ্গে এসবের সমাপতন খুব একটা বিরল নয়। তবে যে আঙুল মসৃণ ট্রিগারে, তাই স্বচ্ছন্দে চলে পাখির পালকের উপর; আলতো তুলির টানে। একেবারে অন্য ধরনের এই আর্ট ফর্ম যিনি অসাধারণ ভাবে আয়ত্ত করেছেন তিনি ডিআইজি-সিআইডি কল্যাণ মুখোপাধ্যায়  (DIG-CID Kalyan Mukhopadhyay) । সাহিত্য অনুরাগী বলে পুলিশ মহলে বেশ নাম আছে তাঁর। কবিতা-গল্প লেখার পাশাপাশি ক্যানভাসে স্বচ্ছন্দে চলে তাঁর পেন্সিল-ইজেল। তবে পাখির পালকে ছবি আঁকা একটা অন্যরকম শখ এই সিনিয়র আইপিএসের (Ips)।

হঠাৎ এরকম ইচ্ছে হল কেন? ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’কে কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানান, করোনাকালের বেশ কিছুদিন আগে এই ভাবনা মাথায় আসে। কংক্রিটের জঙ্গলে কমছে পাখির সংখ্যা। সেইসময় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পালক কুড়িয়ে পান তিনি। মনে হয়, আগামী দিনেই পালকটাই থেকে যাবে, পাখির আর দেখা মিলবে না। সে ভাবনা থেকেই পাখির পালকে পাখির ছবি আঁকার আইডিয়া আসে।

কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানান, দেখতে নরম-সরম হলেও পাখির পালকের ছবি আঁকা কিন্তু খুব কঠিন। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মেই পালকের উপর থাকে একটা মোমের আস্তরণ। রং পিছলে যায় তাতে। আঁকার আগে জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় পালক। তারপরে অত্যন্ত সরু তুলি দিয়ে অতি নরম ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলতে হয় ছবি। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই সবটা ভেস্তে যাবে। কারণ, নরম পাখির মতোই অভিমানী তার পালক। ব্রাশের সামান্য অভিঘাতও সহ্য হয় না তার।

টার্কি থেকে কোয়েল, পায়রা- সবার পালকেই ছবি এঁকেছেন এই দুঁদে আইপিএস অফিসার। বর্তমানে তিনি হায়দরাবাদের সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমিতে একটি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। সেখানকার ডিরেক্টর অতুল করোয়ালকে সেই পালকের ছবি এঁকে উপহার দিয়েছেন তিনি। যা দেখে তাক লেগে গিয়েছে সবার। পালক দুটি ওই ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতেই সকালে হাঁটতে বেরিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া।

ছোটবেলা থেকে আঁকা শেখেননি কল্যাণ মুখোপাধ্যায়। সাধারণ পরিবারে মফস্বলে বড় হওয়া ছেলেটির বাবা-মা লেখাপড়াতেই শিখিয়ে ছিলেন। আঁকাটা প্যাশান। ডিআইজি-সিআইডির কথায়, চাপ কমানোর দাওয়াই। যেটা উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিদরাও। ক্যানভাস, কাচ বা পাখির পালকে ছবি ফুটিয়ে তুলতে যে পরিমাণ মনঃসংযোগ প্রয়োজন হয়, তাতে অন্য চিন্তাগুলো নিমেষে উধাও হয়ে যায়। সঙ্গে থাকে সৃষ্টির আনন্দ। তাই স্বল্প বিরতির মধ্যে রং-তুলির খেলার পরে আবার কাজের জগতে নতুন উদ্দীপনায় ফিরে যাওয়া যায়। কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের এই শিল্প সৃষ্টির ফ্যান কলকাতার অনেক শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্তাও।

 

 

spot_img

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...