Sunday, August 24, 2025

পুজোয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এক মঞ্চে! চমক ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘের 

Date:

Share post:

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ঘ

পুজোর ক’দিন ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘে এক মঞ্চে হাজির ছিলেন মোদি, মমতা, রাহুল গান্ধী। নিশ্চয়ই ভাবছেন এটা কী করে সম্ভব? রাজনীতির আঙিনায় তিনজনই যুযুধান প্রতিপক্ষ। তাদের এক মঞ্চে আনলেন কী করে উদ্যোক্তারা? হয় মশাই হয়। বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়।

আসলে তাঁদের কাঠের পুতুলের মূর্তি দিয়ে সাজানো হয়েছিল দেবী দুর্গার মণ্ডপ।  ৭৮তম বর্ষে  ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘের এ বারের পুজোর থিম ছিল ‘কাঠের পুতুলের জীবন’। আর দর্শকরাও যে পুরো ব্যাপারটাই বেশ উপভোগ করেছেন , তা পুজোর ক’দিন এই মন্ডপে ভিড় দেখেই মালুম পাওয়া গিয়েছে।

প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল পৃথক মঞ্চ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। তাদের মূর্তি গড়া হয়েছিল বক্তৃতা দেওয়ার আদলে। আবার রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেই মঞ্চের সামনেই রাখা হয়েছিল বইয়ের সারি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছিলেন একটি মঞ্চে। তাদের সামনে ছিল পেট্রোল পাম্প ও রান্নার গ্যাস। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তির জন্য তৈরি হয়েছিল একটি পৃথক মঞ্চ। যেখানে তাঁর মূর্তির সঙ্গে জ্বলজ্বল করছিল রাজ্য সরকারের সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা।

শিল্পী সমর সাহা জানিয়েছেন, প্রায় দুবছর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে যাওয়া শিল্পীদের কাজ ফিরিয়ে দিতেই এই থিম বেছে নেওয়া হয়েছিল। উদ্যোক্তাদের অভিনব চিন্তাধারার বাস্তবায়নের সুযোগটা তাই তারা ছাড়তে চাননি। এক কথায় রাজি হয়ে যান। প্রায় ২ হাজার কাঠের পুতুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই অভিনব মণ্ডপ।

পুজো কমিটির কর্তারা জানিয়েছেন, নতুনগ্রামের ২০টি পরিবার গত তিন মাসের নিরলস পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন এই পুজোর মণ্ডপ। পারিশ্রমিক ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা এই পরিবারগুলোর হাতে তুলে দিয়ে পুজো উদ্যোক্তারা তাদের শিল্পীসত্তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- শেষপর্যন্ত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি প্রকাশ করল CBSC বোর্ড

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি থেকে শুরু করে করোনাকালে দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার মতো গুরু দায়িত্ব পালন করে তারা বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন, পুজো মানে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা নয়। পুজো মানে সামাজিক দায়িত্ব পালন, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগ, প্যাশন।
আসলে সারা বছরই তারা কোনও না কোনও সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সে রক্তদান শিবির হোক অথবা বস্ত্র বিতরণের মতো অনুষ্ঠান । এবার তারা যে চিন্তাভাবনার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে একদিকে যেমন আছে সাহস আর মুন্সিয়ানা, অন্যদিকে অভিনবত্ব । লকডাউন এর সময় যখন বর্ধমানের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত নতুনগ্রামের শিল্পীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শিল্পকীর্তি কে সম্মান জানিয়ে এমন গুরুদায়িত্ব তারা তুলে দিয়েছিলেন । তাই পুজোর ক’দিন নতুন গ্রামের শিল্পীদের ঠিকানা ছিল ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিমায় রূপ দান করেছিলেন শিল্পী সুশান্ত দাস । আবহের মুর্ছনায় দর্শনার্থীদের মাতিয়ে রেখেছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব পন্ডিত মল্লার ঘোষ। জয় ইলেকট্রিক ও বাকু ইলেকট্রিকের আলোকসজ্জা পুরো পরিবেশকে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছিল । সব মিলিয়ে এবারের পুজোয় সবার প্রথম ডেস্টিনেশন ছিল ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ।

advt 19

 

spot_img

Related articles

আবেগঘন বার্তা দিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় চেতেশ্বর পূজারার

ভারতীয় ক্রিকেট দলের বহু টেস্ট জয়ের স্বাক্ষী তিনি। বহু ম্যাচে একা হাতে ভারতকে বাঁচিয়েওছেন। এবার সেই চেতেশ্বর পূজারাই(Cheteshwar...

বিহারে এত পাক নাগরিক! জানেই না প্রশাসন

বাংলার অরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ নিয়ে চিৎকার করছেন অমিত শাহ। এবার সীমান্তে অমিত শাহের (Amit Shah)...

চলন্ত ট্রেনের ওপর ছিঁড়ে পড়ল বিদ্যুতের তার, আতঙ্কিত যাত্রীরা

বড়সড় ট্রেন দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা। সঠিক সময়ে ট্রেন দাঁড় না করালে রবিবার সকালেই ঘটে যেত এক ভয়ঙ্কর...

দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশে সবচেয়ে ধনী মুখ্যমন্ত্রী কে? রইল তালিকা

দেশে কোটিপতি মুখ্যমন্ত্রীদের ভিড়ে ব্যতিক্রম শুধু একজন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বর্তমানে দেশে সবথেকে গরিব মুখ্যমন্ত্রী তিনি।...