প্রথমে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ল্যান্ড স্লাইড ভিক্ট্রি। তারপর থেকে সব পুরসভা ভোটে সবুজ সুনামি। তবে, এই সাফল্য যেন দলীয় নেতা-কর্মীদের মাথা ঘুরিয়ে না দেয়। মঙ্গলবার, নজরুল মঞ্চে দলের সাংগঠনিক বৈঠক থেকে সেই বার্তাই দিলেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)।

প্রথমেই মহিলা দিবসে দলের সব মহিলাদের স্বাগত ও অভিনন্দন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে বিজেপির (BJP) পরিকল্পিত নাটকের তীব্র নিন্দা করেন মমতা। যেভাবে গণতান্ত্রিকভাবে জিতে আসা একটি সরকারের কাজ ভণ্ডুল করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার প্রতি তীব্র ধিক্কার জানান তিনি। বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, “ওরা হেরে গিয়েও ঝামেলা করেছে। হাউস বানচাল করার টার্গেট ছিল। আমাদের মেয়েরা গতকাল লিড নিয়েছে। মেয়েরা শৃংখলাবদ্ধ ভাবে গণতন্ত্রের সম্মান রক্ষা করেছে।”
আরও পড়ুন:অন্যের অসুবিধা করে নিরাপত্তা চান না অভিষেক: বাড়ির সামনের ব্যারিকেড সরানোর অনুরোধ

এরপরই দলীয় নেতৃত্বের প্রতি দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, দলের বিরোধী কাজ করলে প্রথমে সতর্ক, তারপর শোকজ এবং তারপর বহিষ্কার করা হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, “কারও না পোষালে বেরিয়ে যান। একলাখ কর্মী ভালো কাজ করবে আর একজন খারাপ করবে, সেটা দল নেব না। কয়েকজনের জন্য পার্টি কেন সাফার করবে? দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি তৈরি করে দিয়েছি। দলের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্দলদের নিয়ে গাড়িতে করে ঘোরা! দলের প্রার্থী থাকা স্বত্ত্বেও কয়েকজন এটা করছেন। প্রথমে অ্যালার্ট করব, তারপরে শোকজ করব, দুবার শোকজ করার পরেই বহিষ্কার করে দেব।” আগামী দিন পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে। মানুষের ওপর ভরসা রাখতে হবে।


পুরভোটে জিতে যেকোনো কাউন্সিলরই চেয়ারম্যান হতে পারেন। কিন্তু তাই বলে নিজেকে কেউকেটা মনে করা চলবে না- সাফ জানিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। “রাজনীতি করে খাওয়ার জায়গা নয়, সেবা করার জায়গা। একবার জিতে গিয়েছি বলে সব হয়ে গিয়েছে তা নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে”- বার্তা মমতার।

এরপরই জনসংযোগের উপর জোর দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। প্রথমেই বলেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা তিনি জানান পরীক্ষার সময় কোনও ছাত্র-ছাত্রীর কী সমস্যা হচ্ছে, তার দিকে নজর রাখতে হবে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের। তবে, এ ক্ষেত্রে কখনোই দলবেঁধে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ছাত্র ফ্রন্টে কাজ হচ্ছে, কয়েকটা জায়গায় ঠিক করতে হবে। জয়া দত্তকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চেয়ারপার্সন করার কথা ঘোষণা করেন মমতা। এর পাশাপাশি, 5 মে থেকে 21 জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের তৃণমূলের জনসংযোগ অভিযান চলবে এইসময় ব্লকে ব্লকে গিয়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সুবিধা অসুবিধার কথা জানতে হবে। কারও বাড়িতে পাত পেড়ে খেলে, সেখানে বাজার করে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তৃণমূল নেত্রী।

বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন চলছে এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিধায়ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অধিবেশনে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সকালে সই চলে গেলাম, আবার বিকেলে গয়ে সই করে দিলাম সেটা চলবে না। বিধায়কদের প্রতিদিন আসতে হবে। অনুমতি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকা যাবে না। এটাকে স্কুল-কলেজের মতো দেখতে হবে। মন্ত্রীরা বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন বাইরের কোনও কর্মসূচি রাখবেন না।

দলের সংগঠন বাড়ছে রাজ্যের বাইরে দেশের কোনায় কোনায় সেখানে যাতায়াতের জন্য তৃণমূল সাংসদের নিজেদের টিকিটে যাতায়াতের পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছেন, দরকার হলে সঙ্গে দলের কাউকে নিয়ে যান। শুধু গাড়িতে নয়, স্কুটি-বাইক-সাইকেলে যাতায়াত করে।

ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ম উদ্বিগ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যুদ্ধের এই আবহে কে দোষী, কে নয় আমরা জানি না। আজ কত ছাত্র ছাত্রী সংকটে। নিজেরা কষ্ট করে ফিরে আসছে। আর ওরা এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কত করেছে।”
নির্বাচনের সময় অভিযোগের জেরে বনগাঁ ও নদিয়াতে সভাপতি বদল করা হয়েছে। তৃণমূলের সমস্ত শাখা সংগঠন এর একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সমন্বয়ে তৈরী করে কাজ করার বার্তা দেন মমতা।

তৃণমূল নেত্রী জানান, গোয়ায় তিন মাসে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের নাম। “ইউপিতে গিয়েছিলাম, অখিলেশরা খুব সম্মান দিয়েছে। যেখানে যেরকম সুবিধা হবে যাব। সব জায়গায় লড়াই করতে হবে তা নয়।”

সাংগঠনিক বৈঠক থেকেই ২০২৪-এ বিজেপিকে দিল্লি থেকে হঠানোর ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, “বিজেপিকে হারাতে হলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন।২০২৪-এ বিজেপিকে সরাতে বাংলাই পথ দেখাবে।”

দার্জিলিংয়ের শান্তি ফিরে আসায় এবং নির্বাচন হওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশি বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্রুত GTA নির্বাচন করা হবে বলে আরও একবার জানিয়েছেন তিনি।
