Saturday, November 8, 2025

কার্নিভালই বিসর্জনে দুর্ঘটনা এড়ানোর পথ

Date:

Share post:

দেবাশিস বিশ্বাস

মালনদীতে বিসর্জনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কেন এই দুর্ঘটনা? সেটা ভাবা বেশি জরুরি। রাজ্য জুড়ে গ্রাম-গঞ্জে যে ভাবে বিসর্জন নামক পর্বটি হয় তা প্রত্যক্ষ করলে অনেকেই ঘবড়ে যাবেন। শত নয়, সহস্র লোকের ভিড়, অতি অপরিসর জায়গা, তার মধ্যে নানা বাজি (রংমশাল থেকে চকলেট বোম)। তার মধ্যে সিদ্ধি বা অন্যান্য মাদক সেবন করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উদ্দাম নৃত্য, ছোট নদীর চরে তীব্র ভিড়। এর সঙ্গে রয়েছে পুজো কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা। সব আমলে এটা হয়েছে। কারণ এই দিনটার জন্য বহু মানুষ গ্রাম-গঞ্জে সারা বছর অপেক্ষা করেন।
এর পাশাপাশি আছে প্রকৃতির খেয়াল। উত্তরবঙ্গের (North Bengal) তরাই, ডুয়ার্স ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এসব জায়গায় বেশ কিছু ছোট ছোট নদী আছে। যেখানে সারা বছর তেমন জল থাকে না কিন্তু বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে। বন্যা ও হয়। জল বাড়ে রাত ভোর বৃষ্টি হলে, এলাকা প্লাবিত হয়, রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। এটা সাধারণ বান। আবার বৃষ্টি থামলে জল দ্রুত নেমেও যায়। কিন্তু কিছু বাণ আসে একেবারেই আচমকা। অতি অল্প সময়ে প্রবল প্লাবন। এটাকে “পাগলা বান”, “ঝটকা বান”, “হরপা বান” বলা হয়। ঝাড়গ্রামের দুলুং, তরফেনি ইত্যাদি নদীতে দেখি। হরপা খুব ই কম আসে। এই পাগলা বান আসলে যদি কেউ নদীর কাছে থাকলে বিপদ ভয়ানক হতেই পারে। তবে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দারুণ সাঁতার জানেন বলে তেমন বিপর্যয় হয় না। আর তাঁরা জলে একটা আওয়াজ শুনে আন্দাজও করতে পারেন। জঙ্গলমহলেও বহু ছোট সেতু আছে ওই নদীর উপর দিয়ে, যার উপর দিয়ে সারা বছর বাস-লরি যাতায়াত করে। কিন্তু বানের সময় রাস্তা উপচে যায় জলে, তখন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার জল নেমে গেলে চলে। কিন্তু পাগলা বান আসলে সব হিসেব গুলিয়ে যায়। আমি নিজে পাগলা বানে একটা ১০ চাকার বড় লরিকে পুরো ভেসে যেতে দেখেছিলাম।
মনে রাখতে হবে, পাগলা বান সাধারণত বর্ষাকালেই হয়। বছরের অন্য সময়ে তেমন দেখা যায় না। দুর্ভাগ্য এই বছর দুর্গাপুজোও (Durga Pujo) বর্ষাতেই হয়েছে। তাই বিপদ একটা ছিল। তা সত্বেও মিলিয়ে নেবেন ওই জায়গায় সামনে বছর ও বিসর্জন হবেই।

বরং ভাবা উচিত নির্দিষ্ট বিসর্জনের জায়গায় ঘাট ভালো ভাবে বানানো হোক, সেখানে বিপদ মোকাবিলার ব্যবস্থা রাখা হোক, প্রচুর মানুষ যেন আসতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হোক। রাখা হোক ডুবুরি, অ্যাম্বুল্যান্স। এরকম কিছু জায়গায় শোভাযাত্রা (কার্নিভাল) করেই সব প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা হোক। আমার মতে, কার্নিভাল বন্ধ করার মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। হয়তো ওই কার্নিভালই সমাধানের পথ।

 

spot_img

Related articles

মতুয়া-ফায়দা লোটার চেষ্টা: অনশন মঞ্চে হঠাৎ হাজির বাম-কংগ্রেস!

বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরোধিতা করাই বাংলার বাম নেতৃত্ব ও কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের স্বভাবসিদ্ধ। বিরোধিতার পর্যায়টা এক এক সময়ে...

জন্মদিনে চরম অসৌজন্য! অভিষেককে নিয়ে বিজেপির পোস্টে সরব নেটদুনিয়া

বাংলায় বরাবর সৌজন্যের রাজনীতি দেখিয়ে এসেছে সব রাজনৈতিক দল। বাম আমলে সিপিআইএম নেতা থেকে তৃণমূল বা কংগ্রেস নেতাদের...

আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা, অনুশীলনই বন্ধ রাখল মোহনবাগান

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে মোহনবাগানের(Mohun Bagan) সিনিয়র দলের অনুশীলন। খবর অনুযায়ী, আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা। টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়...

জন্মদিনে মানুষের ভালবাসা মনে করিয়ে দেয় কর্তব্য: ভিড়ে মিশে গেলেন অভিষেক

সকাল হওয়ার অপেক্ষা নয়। রাত ১২টা বাজার অপেক্ষায় ছিল বাংলার বিপুল জনতা। জননেতা, তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক...