Sunday, November 9, 2025

বৃদ্ধ বয়সে আইন পাশ করে ছেলের মৃত্যুর ন্যায়বিচার ছিনিয়ে আনলেন বাবা

Date:

Share post:

পুত্রশোকে ভেঙে পড়া নয়, চেয়েছিলেন সঠিক বিচার। সেই কারণে ৭২ বছর বয়সে আইন পাশ করে ছেলের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে লড়াই করেছেন। এবং জিতলেন সুভাষ সরকার (Subhas Sarkar)। ২০১০ সালে মৃত্যু হয় তাঁর ৩৩ বছরের পুত্র সপ্তর্ষির। অভিযোগ ছিল চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে অবশেষে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত গাফিলতির অভিযোগ মেনে নিয়ে দুই চিকিৎসককে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ক্ষতিপূরণের মামলা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করেছেন সুভাষ সরকার। সেই ঘটনাতে ইতিমধ্যেই চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ (Police)।

টাকি হাউজ স্কুল থেকে মাধ্যমিক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সপ্তর্ষি সরকার (Saptarshi Sarkar)। ২০০৫-এ কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেন। নয়ডায় (Noida) পোস্টিং হয়। সেই সময় থেকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কয়েকবার চিকিৎসার পরে ভুবনেশ্বরে বদলি হন তিনি। কিন্তু সপ্তর্ষি কলকাতায় ফিরে আসেন। ২০১০ সালের অগাস্টে তাঁকে কলকাতার গড়িয়াহাটের ডোভার মেডিক্যাল সেন্টার নামে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১১ অগাস্ট রাতে সপ্তর্ষি আত্মঘাতী হন। শৌচালয়ের ভিতরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কী ভাবে তিনি আত্মঘাতী হলেন, দড়ি কোথায় পেলেন? এই সব অভিযোগ তুলে মামলা করেন সুভাষ।

আদালতে লড়াই শুরু হয়। কিন্তু শুনানির দিন শুধুই পিছিয়ে যাচ্ছিল। ফলে নিজেই ছেলের মামলা লড়বেন বলে ঠিক করেন সুভাষ সরকার। ৬৯ বছর বয়সে শুরু করেন আইন পড়া। ৭২ বছর বয়সে আইন পাশ করেন। ২০১৯ সালে বিশেষ আবেদন করে নিজেই ছেলের মামলা লড়তে শুরু করেন সুভাষ। কিন্তু করোনাকালে দুবছর দেরি হয়। অবশেষে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত সপ্তর্ষির মৃত্যুতে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ মেনে নিয়ে দুই চিকিৎসক ধ্রুবজ্যোতি শী ও জ্যোতিরিন্দ্র নাগকে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

তবে, মামলা চলাকালীন ওই নার্সিংহোমের মালিক ডা: ধ্রুবজ্যোতি শী মারা গিয়েছেন। ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত ধ্রুবজ্যোতির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি ডা: জ্যোতিরিন্দ্র নাগ। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান।

তবে, এতদিন পরে হলেও বন্ধুর মৃত্যুর সঠিক বিচার হওয়ায় সন্তুষ্ট টাকি হাউজের সপ্তর্ষির সহপাঠীরা। তাঁর ব্যাচমেট পার্থসারথি সাহা, ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’কে জানান, “সপ্তর্ষি ন্যায় বিচার পাওয়ায় আমরা খুশি। অকালে বন্ধুকে হারিয়ে খুব কষ্ট হয়েছিল। এবার ওর আত্মা শান্তি পাবে।” পার্থ জানান, শুধু লেখাপড়াতেই নয়, খেলাধুলাতেও খুব ভালো ছিলেন সপ্তর্ষি। শট পাট ছোড়ায় কোনও দিন দ্বিতীয় হননি। কিন্তু জীবন তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছে ধরা ছোঁয়ার গণ্ডির বাইরে।

spot_img

Related articles

কাশ্মীরে সরকারি হাসপাতালে জঙ্গি যোগ! চিকিৎসকের লকার থেকে উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র

মুখে যতই বড় বড় কথা বলুন না কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূস্বর্গে যে জঙ্গিদের কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে তার আরও এক...

টানা দুদিন তাপমাত্রা কুড়ির নীচে, রবির সকালে দক্ষিণবঙ্গে ভরপুর শীতের আমেজ 

উইকেন্ডে পারদ পতন অব্যাহত, আগামী সপ্তাহের মাঝে মাঝে পর্যন্ত শীতের আমেজ (Winter in Weekend) পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবে...

KIFF: রবিবাসরীয় ফিল্মোৎসবে হলিউড ক্লাসিক ‘ব্লু ভেলভেট’ দেখার সুযোগ, দুপুরে ফেলুদার নস্টালজিয়া!

দেখতে দেখতে তিন দিন পার, উদ্বোধনের দিনটাকে হিসেবের মধ্যে ধরলে আজ ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (31st...

বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত! পুরুলিয়ার সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ দেবাংশুর

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে নেই। নইলে বিজেপি রবীন্দ্রনাথকে রোহিঙ্গা ও নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত। শনিবার পুরুলিয়া শহরের...