আসানসোলের কম্বল বিতরণের ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। সেই বিষয়কেই হাতিয়ার করে এবার গেরুয়া শিবির তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তুলোধনা করল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। রবিবারই নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এবং আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসানসোলে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, শশী পাঁজা, মলয় ঘটক। এছাড়াও রয়েছেন যুব তৃণমূল সভানেত্রী সায়নী ঘোষ ও বিধায়ক বিবেক গুপ্ত।

এদিন সকালে আসানসোলের কালনা এলাকায় গিয়ে প্রথমে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। শুধু মৃতদের পরিবারের সঙ্গেই নয়, এদিন আহতদের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো মৃত ও আহতদের পরিবারকে পাশে থাকার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যেরও ঘোষণা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

এরপরই সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি ও শুভেন্দুর নোংরা রাজনীতির চেহারা তুলে ধরেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এদিন মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, একটি বিশাল অপরাধ হয়েছে। প্রথমত কর্মসূচীর জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত যে স্থানটি চয়ন করা হয়েছিল সেই স্থানে ৫০০ লোক ধারণের ক্ষমতা রয়েছে কী না তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। আর বিজেপি বুঝতে পেরেছিল কর্মীসভা বা দলীয় সভার নামে ৫০০ লোক আসবেন না। আর সেকারণেই ধর্মের নামে একটি কম্বল বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লোক জোগাড় করার জন্য ৫ হাজার কুপন বিলি করা হয়েছিল। যেখানে এত লোক ধরার জায়গা নেই সেখানে জোর করে এত লোককে কম্বল দেওয়ার নামে নিয়ে আসা হল এবং এক মর্মান্তিক পরিস্থিতি তৈরি করা হল। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, কম্বলের জন্য মানুষের প্রাণহানি হল। এর দায় কে নেবে? আজ আমরা প্রতিনিধি দল হিসেবে এখানে এসেছি। আমরা যখন মৃতদের পরিবারের কাছে পৌঁছলাম তখন তাঁরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। যে ৩ জন মানুষ মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে এক ১৪ বছরের মেয়েও ছিল। তাঁর কী বেঁচে থাকার অধিকার ছিল না? এর জবাব বিজেপি দেবে তো?

এছাড়া মন্ত্রী শশী পাঁজা প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় পুর প্রতিনিধি চৈতালি তিওয়ারিকেও এর জবাব দিতে হবে। এরপরই শুভেন্দুকে একহাত নিয়ে শশী পাঁজা বলেন, যার সভা ছিল, তিনি শুধু টুইট করেই নিজের দায় সেরেছেন। একবার ঘটনাস্থলে এসে মানুষের পরিস্থিতির কথা জানতে চাননি। আমরা ধিক্কার জানাই। এর বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। আমরা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে কিছু অর্থসাহায্য পৌঁছে দিতে এসেছি।
মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, আমি এখানে অনেক বছর করেছি। কিন্তু আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। এরপরই শুভেন্দু অধিকারীকে একহাত নেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি অভিযোগ করেন, উনি শুধু জ্যোতিষীর মতো ডেট ঠিক করেন। ওনার পুরোটাই স্ট্যান্টবাজি। কিন্তু যে মাঠে ৫০০-এর বেশি মানুষ ধরে না। সেখানে বাইরে থেকে মানুষ এনে শুভেন্দু অধিকারীর সভা হিট দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এসব করতে গিয়ে একবারও ভাবা হয়নি কত মানুষের জীবনকে তারা বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এরপরই বাবুল জানান, যেকোনও মৃত্যুই অত্যন্ত মর্মান্তিক। ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বাবুল প্রশ্ন তোলেন, কথায় কথায় শুভেন্দুবাবু বলেন দিল্লি থেকে নির্দেশ এসেছে। এমন কোনও মানুষ নেই যিনি পরিবারগুলির পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারবেন? সরকারের তরফ থেকে ২ লক্ষ টাকা মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন। ৫০ হাজার টাকা এখানকার মেয়র ও কর্পোরেশন দিয়েছে। এরপরই বাবুল প্রশ্ন তোলেন, বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন তাতে কোথাও লেখা নেই শুভেন্দুকে গ্রেফতার করা যাবে না।

মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানান, আমি এখানে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। তাঁরা জানিয়েছেন, শিব চর্চার নাম করে নিয়ে গেল আর হাতে কুপন দিয়ে গেল কম্বল দেবে বলে। আর এমন দুর্ঘটনার পর তাঁদের একবারও সময় হল না আমাদের একবার খবর নেওয়ার? এরপরই মন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন তাহলে এদের কাজ কী লোককে জড়ো করে আনা? তবে কী শুভেন্দু অধিকারীর সভায় আর লোক হয় না? শুভেন্দুর সভায় লোক আনতে গেলে কম্বল দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে? পাশাপাশি পার্থর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গদ্দারি করে ২০১৪ সালে মোদি, অমিত শাহের হাত ধরেছিলেন শুভেন্দু। সেই এখন অমিত শাহের দলে থেকে অন্য কোনও দলের হাঁটু ধরছেন না তো? প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ বলেন, এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। শুভেন্দু এত বড় বড় কথা বলছেন? উনি এতটা দূরে চলে গিয়েছিলেন যে উনি একবারও মৃত ও আহত মানুষদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারলেন না? বাংলার মানুষ আপনাদের মুখের উপর যোগ্য জবাব দিয়েছে এবং কম্বল দেওয়ার নাম করে ভোট কেনার সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষ আপনাদের দেওয়া কম্বল গায়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। যদি প্রকৃত অর্থে মানুষের পাশে থাকতে হয় তাহলে প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকুন। যেটা একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেন।

পাশাপাশি সায়নী আরও বলেন, ৫ টা ভোট পাওয়ার জন্য ৫টা কম্বল বিতরণ করলে লাভের লাভ কিছুই হবে না। দলের কর্মী সমর্থকরা যখন মার খাচ্ছেন তখন সাইডে গিয়ে বলছেন ডোন্ট টাচ মাই বডি। আর যখন মানুষ মারা যাচ্ছেন তখন টুইটারে লিখছেন, আমি কোনও একসময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করব। মানুষ এর জবাব গণতান্ত্রিক উপায়ে দেবেন। তৃণমূল যুব সভানেত্রী বলেন, হিসেব নেবে মমতা, জবাব দেবে জনতা।

বিধায়ক বিবেক গুপ্ত অভিযোগ করেন, যে ৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা বা তাঁদের খবর নেওয়া দূরে থাক, নিজের ঘরে এসিতে বসে আরাম করে টুইট করছেন। আমি জানতে চাই বাঙালিদের নিয়েই কী শুধু রাজনীতি হবে? এখানে মানুষকে কী মানুষের মর্যাদা দেওয়া হবে না? এখানে আপনাদের রাজনীতি করতে হলে তৃণমূলের সঙ্গে করুন কিন্তু কম্বল বিতরণের নাম করে নিজেদের আসল চরিত্র সামনে নিয়ে আসবেন না।
