Monday, August 25, 2025

অন্ধকারের উৎস হতে, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

খা কর জখ্ম দুয়া দি হমনে
বস্ ইউঁ উম্র বিতা দি হমনে ।

রাত কুছ এয়সে দিল দুখতা থা
য্যায়সে আস্ বুঝা দি হমনে ।

সন্নাটে কে শহর মে তুঝকো
বে-আবাজ সদা দি হমনে ।

হোশ যিসে কহতি হ্যায় দুনিয়া
উয়ো দিবার গিরা দি হমনে ।

ইয়াদ কো তেরি টুটকে চাহা
দিল কো খুব সজা দি হমনে ।

দেখকে যিসকো দিল দুখতা থা
উও তসবির জ্বলাদি হমনে ।

আ ‘ শাহজাদ ‘ তুঝে সমঝায়ে
ক্যুঁকর উম্র গঁবা দি হমনে ।।

( কথা : ফারহাত শাহজাদ ।
সুর ও কণ্ঠ : গুলাম আলি । )

রাগ ইমনে বাঁধা এই গজলটির একটি আশ্চর্য টান আছে । এ গানের পরতে পরতে গাঁথা বিষাদ ও ব্যর্থতার গ্লানি । কিন্তু গানটি শেষ হওয়ার পর এক দারুণ উপলব্ধি হয় । মনে হয় ব্যর্থ প্রণয়ের আঘাত কখনো কখনও যেন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় । অপ্রাপ্তি ও ব্যর্থতা যেন জীবনকে চিনিয়ে দেয় ভোরের আলোর মতো ।
যন্ত্রানুষঙ্গে এই গানে বাঁশির অনবদ্য ব্যবহার গানের বেদনাকে অপরূপ এক প্রতিষ্ঠা দিয়েছে । এই গানের মূল কথা তো প্রেমে ব্যর্থতার ইতিহাস বর্ণনা ।

আঘাত এখানে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে । দ্বিতীয়বার আর ও মুখো হয়নি জীবন । যন্ত্রণার সেই রাতে আশার সমস্ত দীপ নিভে গেছে । শান্ত সুন্দর নিরালা শহরে সবসময়ই বেসুরে বেজেছে কবির কাতর নিবেদন। বিশ্বাসের দরজা চিরদিনের জন্য ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে । জীবন বর্ণহীন হয়ে গেছে । স্মৃতিতে আচ্ছন্ন অবুঝ হৃদয় কঠোর সাজা ভোগ করেছে । একজন চরম ব্যর্থ , চূড়ান্ত হতাশ ও নিঃসীম নিঃসঙ্গ প্রেমিকের করুণ উপাখ্যানের শেষে এই হাহাকার নিয়ে কীভাবে জীবন কেটে গেলো তারই স্বরলিপি লিখেছেন কবি ‘ শাহজাদ’।
আঘাতেই তো জন্ম সুরের । অশান্তির আঘাত ছাড়া কীভাবেই বা বাজতো বীণা ?

আপাত নেতিবাচক এই গজলটি কি কোনোভাবেই কোনো প্রেরণা যোগায় না ? মনের অতল অন্ধকারে কি কোনো আলোর দিশা দিতে পারে না এই গানটি ?

পারে , অবশ্যই পারে । দিতে পারে এক অন্যরকম আলোর সন্ধান । যা ব্যাপ্তিতে অসামান্য । নেতি দিয়ে নেতি নাশ হয় যে । যেমন বিষে বিষক্ষয় । এ গানের অন্তেও সেই আশ্চর্য উপলব্ধির দরজা খোলে । যা একই সঙ্গে নির্মোহ এক ভাবের জন্ম দেয় । বাসনানিস্পৃহ এই মহৎ অনুভূতি নতুন পথের দিশা দেয় । ভেঙে পড়া হৃদয় আবার নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ।

এক ব্যর্থতা আর এক ব্যর্থতাকে চাপা দেয়, ভুলিয়ে দেয়। আর অন্ধকার ?
অন্ধকারেরও নানা রঙ হয় । হালকা , জমাট , গভীর , অগভীর , ফিকে , নিকষ এইসব নানা রঙ ।
ছায়াছবি পথের পাঁচালীতে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অতি দরিদ্র এক পরিবারের জীবনযুদ্ধ গহন অন্ধকারেও আলোর দিশা দেয় । যে ছবির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যর্থতা , যন্ত্রণা ও শোকের হাহাকার । ছোট্ট দুর্গার মৃত্যুর পরে সর্বজয়ার সংসারে যেন স্হায়ী আঁধার নেমে আসে । চিরদিনের বসতবাড়ি ছেড়ে অপুরা পাড়ি দেয় অন্যত্র । চোখের জলে শেষ হয় ছবি । তবু দুঃখ -শোকের আবহ ভেদ করে কোথাও যেন জীবনের অমোঘ বাস্তবতা বুঝে নিতে এক ধরনের প্রত্যয় তৈরি হয় বুকের ভেতরে । হাহাকারের মাঝে , একবুক শূন্যতার প্রান্তরে দাঁড়িয়েও মনে হয় এই শোক-তাপ-মৃত্যু ও জীবনযন্ত্রণার অন্য তীরে রয়েছে এক অনন্য জীবন , এক সীমাহীন শুশ্রূষা ।
ক্রমশ ভাঙতে ভাঙতে একেবারে খণ্ডবিখণ্ড হওয়ার পর নতুন করে গড়ে নেওয়ার সুর যেন শুনতে পাওয়া যায় বাস্পীভূত বাতাসে । মাটিতে পাওয়া যায় মন কেমন করা সোঁদা গন্ধ । এই অনুভুতির নাম বোধহয় বিষে বিষক্ষয় ।হরিহরদের অপরিসীম দুঃখ ও বেদনার কাছে নিজেদের সংসারযন্ত্রণা তুচ্ছ মনে হয় । তখনই দমে থাকা মন ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পায় । দু্ঃখের পথেই বোধহয় দুঃখকে অতিক্রম করা যায় ।

ধ্বংসের বুকে দাঁড়িয়েও নতুন আশায় বুক বাঁধতে ভালোবাসে মানুষ । ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খোঁজে । বিষাদ , শোক ও বিপন্নতার অন্ধকার থেকেও উজ্জীবনের প্রেরণা খুঁজে নেয় দুর্গত মানুষ । নিকষ আঁধারেও সকলে খোঁজে কান্তিময় অভ্রভেদী আলো । পেয়েও যায় । যদি না পেতো তাহলে মৃত্যুর অনিবার্য অভিঘাতে বিদীর্ণ হয়েও গান বাঁধতো না মানুষ , কবিতা লিখতো না , ছবিও আঁকতো না ।

গজলে ভূমিকা বা মুখবন্ধ থাকে । এই গানের ভূমিকায় কী বলছেন আহমদ ফারাজ সাহেব ? দেখা যাক ।

করুঁ না ইয়াদ মগর
কিস্ তরহ ভুলাউঁ উসে
গজল বাহানা করুঁ
ঔর গুনগুনাউঁ উসে ।

বো খার খার হ্যায়
শাখ-এ-গুলাব কি মানিন্দ
ম্যায় জখ্ম জখ্ম হুঁ ফিরভি
গলে লগাউঁ উসে ।

ভুলতে চাইলেই কি ভোলা যায় ? গজল তো ছলমাত্র । আসলে সবটাই তার স্মৃতিচারণ । কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়েও গোলাপকে সমাদরে বরণ করি আমরা ।

ভালোবাসা যদি হয় মহৎ আলো , তাহলে বলতেই হয় অসফল ভালোবাসা মহোত্তম আলো । বিরহের বিশাল আকাশে মিলন যেন মিটমিটে এক তারা মাত্র । ব্যর্থ প্রেম জীবনের মহোত্তম উপলব্ধি। ব্যর্থতার গহন অন্ধকার থেকে উৎসারিত যে আলো তা প্রকৃতই কান্তিময় । দিক নির্দেশক । নেতির ক্ষমতা অসীম, অনিঃশেষ ।

অতলান্তিক নেতিই বিশুদ্ধতম ইতির উৎসমুখ ।

আরও পড়ুন- SSC Recruitment: নবম-দশমে ১৩৮৪২ টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগে তৎপরতা রাজ্যের

spot_img

Related articles

নির্বাচনী মামলা! পাল্টা হলফনামা দিতে নিজেই হাই কোর্টে অভিষেক

নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়েছিল তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবারের (Diamond Harbour) সাংসদ তথা তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের...

পথ দেখায় বাংলা: মমতার পথেই গণেশপুজোয় অনুদান মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের!

বাংলা আজ যা ভাবে গোটা ভারত তা ভাবে কাল। এই স্বতঃসিদ্ধ বাক্যটি সম্প্রতি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ফের একবার...

“যেকোনও পুরুষ আমার চেয়ে হেমাকে বেশি পছন্দ করত”, ধর্মেন্দ্রর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে মন্তব্য প্রকাশের

ধর্মেন্দ্র (Dharmendra) এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরের (Prakash Kaur) বিয়ে হয় ১৯৫৪ সালে। অভিনেতার বলিউডে অভিষেকের কয়েক...

নিয়োগ মামলা: ইডির তল্লাশি বিধায়কের বাড়ি, আত্মীয়ের বাড়িতে

নির্বাচন এগিয়ে এলেই বিজেপির তার তদন্তকারী সংস্থার অস্ত্রগুলোকে এগিয়ে দিতে থাকে। তদন্তকারী সংস্থা ইডি বা সিবিআই আজ পর্যন্ত...