সম্প্রতি হাওড়ার শিবপুরে রামনবমীর মিছিলে একদল উন্মত্ত যুবক, তাদের হাতে শুধু তলোয়ার নয়, ছিল আগ্নেয়াস্ত্রও। সেই শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হিংসা ও অশান্তির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে ফের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার হুমকি। দেখানোর জন্য নয়, চমকানোর জন্য এবং প্রয়োজনে তার যা কাজ সেটাই হবে। মেদিনীপুর দলের শিক্ষক সেলের একটি পথসভায় যোগ দিয়ে এভাবেই হুশিয়ারি দিলেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর আরও সংযোজন, “কেউ বাপের বেটা হলে, গ্রেফতার করে দেখাক”।

শিক্ষক সেলের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হুমকির সুরে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি এডভান্স এক বছর আগে বলে যাচ্ছি পরের বছর যদি এই পরিবেশ তৈরি করে কারণ তখন লোকসভা নির্বাচন থাকবে মে মাসে আর এপ্রিল বা মার্চ মাসে হবে রামনবমী। রামনবমী এবছরের থেকে আরও বড় হবে আগামী বছর। বেশি লোক নিয়ে করব। আর যদি আপনি সুরক্ষা দিতে না পারেন তাহলে দিলীপ ঘোষ তরবারি নিয়ে সামনে দাঁড়াবে। কোন বাপের বেটা আমাকে আটকায় দেখব। আমি পুরো সমাজকে বলব হাতিয়ার নিয়ে রাস্তায় নামতে। আর সেই তলোয়ারটা দেখানোর জন্য নয়, চমকানোর জন্য। আর তলোয়ারের যে কাজ, দরকার হলে সেটাই হবে। দিলীপ ঘোষ বলছে, পারলে এরেস্ট করে দেখাক। কোন বাপের বেটার দম আছে। দিলীপ ঘোষ খাটির গরুর দুধ খেয়েছে, তোদের মতন মাদার ডেয়ারির দুধ খায়নি যে রক্ত জল হয়ে গিয়েছে। মনে করবেন না কয়েকটা লোককে খেপিয়ে দিয়ে আমাদের ধর্ম কর্ম বন্ধ করে দেবেন। যুগ যুগ ধরে আমরা ধর্ম কর্ম করে এসেছি। আমার পূর্বপুরুষরা থেকেছে আমার উত্তর পুরুষরাও এখানে থাকবে। তাই রামনবমীও হবে কৃষ্ণ জন্মজয়ন্তীও হবে।”

এখানেই থেমে থাকেননি দিলীপবাবু। বিজেপি নেতা বলেন, এখানকার হিন্দু সমাজকে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে বাড়িতে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে উৎসব হলে রাস্তায় কেউ না বেরায়, মেলায় না যায়, বিয়ের শুভযাত্রায় না বেরোয়, দুর্গাপূজা, কালী পূজা, সন্তোসী পূজা, নীল পুজো থেকে শুরু করে আমরা অন্যান্য যে পুজোতে শোভাযাত্রা বের করি সেগুলো যাতে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই বন্ধ করে দেশকে বিভাজন করা হয়েছিল তাই প্রত্যেকটি উৎসবেতে ঢিলপাটকেল দিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছে। আমি প্রতিবাদ করছি, অনেকে হয়তো কষ্ট নিয়ে বেরিয়েছি আমি এখানে ঘোষণা করছি যদি এরকম বারবার আক্রমণ হয় হিন্দু সমাজের উপরে, আজ খালি হাতে বেরিয়েছিলাম কাল ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থন থাকবে এবং হিন্দুরা হাতিয়ার নিয়েই রাস্তায় বেরোবে। কারো দম থাকলে আটকাক। আমাদের বাড়িতেও অস্ত্র আছে। কারণ প্রত্যেকটি দেবী দেবতাদের হাতেই অস্ত্র আছে। অস্ত্র দিয়েই তাদের পুজো হয়। রাম এবং শ্রীকৃষ্ণ ছোটবেলা থেকেই মায়ের কোলে থাকতেই হত্যা করা শুরু করেছিল। ৬ দিন বয়সে পুতনাকে বধ করেছিল শ্রীকৃষ্ণ। আর শৈশব অবস্থা থেকেই রাক্ষসদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তীর ধনুক দিয়ে রাম, দোষীদের দমন করার জন্য এসেছিলেন। তার ভক্ত হচ্ছি আমরা। কেউ যদি চোখ দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে হিন্দু সমাজকে আটকে রাখবে, ঘরের মধ্যে বন্ধ করবে ভাবে তাহলে খুব ভুল করছে।

সংখ্যালঘুদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, মুসলিম সমাজের লোকদেরকে বলছি এই পবিত্র মাসে আপনাদের মাথা ঠিক রাখুন। এই দুর্নীতিগ্রস্থ চোর ধান্দাবাজ রাজনীতিবিদ যারা আপনাদের ভরকাচ্ছে তাদের কোথায় যাবেন না। আপনাদের এই দেশে থাকতে হবে হিন্দু সমাজের সঙ্গেই থাকতে হবে।হিন্দু সমাজই আপনাদের সুরক্ষার গ্যারেন্টি। কাল ভাইপোও থাকবে না পিসিও থাকবে না। কেউ তিহারে যাবে কেউ ভুবনেশ্বরে যাবে। আপনারা কোথায় যাবেন? কে দেখবে আপনাদের কে? এই হিন্দুরাই দেখবে। তাই হিন্দু সমাজের সাথে যদি বন্ধুত্ব থাকে শান্তি থাকে তবে এরাই সুরক্ষা দেবে। না হলে ইতিহাস জানেন আপনারা মায়ানমারে কি হয়েছিল।
