ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের শেষ হাসি হাসল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। ঘাসফুল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাপসী রায়কে হারালেন ৪,৩৫৫ ভোটে। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের জমানত বাজেয়াপ্ত হল। ২০২১ সালে এই আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হল। উপনির্বাচনে সেই আসন পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আসন পুনরুদ্ধারের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে শেষ ল্যাপের প্রচারে গিয়ে ধূপগুড়িকে চলতি বছরের মধ্যে মহাকুমা করার প্রতিশ্রুতি ছিল অভিষেকের মাস্টার্স স্ট্রোক। অভিষেক বলেছিলেন, ‘চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই ধূপগুড়ি মহকুমা হবে। একবছর বা দেড় বছরে হবে এটাও আমি বলতে পারতাম। সব থেকে বেশি আমি বলতে পারতাম ধূপগুড়িকে মহকুমা কীভাবে করা যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। কিন্তু আমি সরাসরি বলছি হবে, করে দেখাব। সেই প্রতিশ্রুতি কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছি। ধূপগুড়ির দায়-দায়িত্ব এই সভা থেকে আমি নিয়ে গেলাম।” বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ও স্বীকার করে নিলেন শেষলগ্নে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ধূপগুড়িকে মহকুমা করার ঘোষণা-ই ভোটের ময়দানে তাঁকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।

এদিন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর ধূপগুড়িবাসীকে অভিনন্দন জানালেন অভিষেক। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, “ঘৃণা ও ধর্মান্ধতার রাজনীতিকে হারিয়েছে উন্নয়নের রাজনীতি। ধূপগুড়ির সার্বিক উন্নতির জন্য আমরা মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ধুপগুড়ির প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ।”

Thank you #Dhupguri, for embracing the politics of development over hatred and bigotry. Saluting every AITC worker for their tireless efforts in connecting with the people. We’re committed to leaving no stone unturned in ensuring Dhupguri’s all-round development. 🙏🏻
জয় বাংলা 💪🏻
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) September 8, 2023
এদিন ভোটগণনা ঘিরে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। গণনাকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে জারি ছিল ১৪৪ ধারা। পাশাপাশি ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। প্রথমে পোস্টাল ব্যালটের গণনা, তারপর ইভএম। ২টি রুমে ১৪টি করে টেবিলে ভোটগণনা। মোট ১০ রাউন্ড ভোট গণনা হয়। সপ্তম রাউন্ড পর্যন্ত ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষ তিন রাউন্ডে বাজিমাত করেছেন তৃণমূল প্রার্থী।

২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের মিতালি রায়। কিন্তু, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে মিতালিকে হারিয়ে জেতেন বিজেপির বিষ্ণুপ্রসাদ রায়। তাঁর মৃত্যুতেই ফের নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে ধূপগুড়ি কেন্দ্রে। শুভেন্দু অধিকারীর মতো রাজ্য বিজেপির তাবড় নেতা ধূপগুড়ির মাটি।কামড়ে পড়ে থেকেও দলীয় প্রতীকে জেতাতে পারলেন না। আবার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মিতালি রায় ভোটের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যান রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হাত ধরে। কিন্তু তাঁর দলবদল বুমেরাং হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অন্যদিকে, বাম প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু সিপিএম প্রার্থীর গোহারা হারালেন। বামের ভোট এবারও চলে গেল রামে।