নিম্ন হোক কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেরই খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নেয় রুটি (Bread)। পাশাপাশি অনেকেরই শরীরে রক্তে উচ্চচাপের (Blood Pressure) কারণে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হয় ভাত (Rice)। রুটিকেই আঁকড়ে ধরে জীবন অতিবাহিত হয় তাঁদের। চিকিৎসকরা জানান, ভাতের থেকেও শরীরে ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে রাখতে রুটির গুণগত মান ভাতের থেকেও অনেক কদম এগিয়ে। কিন্তু জানেন এই রুটি কবে, কোথায় এবং কিভাবে আবিষ্কার হয়েছিল? সম্প্রতি সেই রহস্যই উদঘাটন করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষকদের মতে, আনুমানিক যীশুখ্রীষ্টের জন্ম সময় কিংবা তারও আগে থেকেই শুরু হয়েছিল এই রুটির আবিষ্কার ও প্রচলন। আনুমানিক ৬ হাজার বছর আগে অর্থাৎ ৮০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরীয়দের হাত ধরেই প্রচলন হয়েছিল এই খাবারের। যদিও সেই সময় সমাজ এত উন্নত না থাকায় মোটা শস্য দানা জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে তাল পাকানো হতো। তারপর গরম পাথরের উপর সেই মণ্ড রেখে উত্তপ্ত ছাই দিয়ে তা সেঁকে নেওয়া হতো। এইভাবেই প্রথম রুটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল মিশরীয়রা। পরবর্তীকালে, সমাজ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং খাদ্যের যোগান ঠিকঠাক রাখতেই আনুমানিক ২৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুকুশ উপত্যকায় শুরু হয় চাষাবাদের কাজ। এরপরই ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইস্ট ব্যবহার করে রোমে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রুটি। এছাড়াও ৪৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রীসে প্রথম বেকিং রুটি তৈরির কৌশল আবিষ্কার করা হয়।

তবে সম্প্রতি সময় যত গড়িয়েছে নানা দেশে বিভিন্ন স্বাদ ও আকারের রুটি বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র রুটি নয় চাপাটি-সহ বাকরখানি, লুচি, পরোটা, নান একাধিক দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এই সকল জনপ্রিয় রুটির তালিকার মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ না কর্রলেই নয়।

- তালিকার প্রথমেই রয়েছে ইংল্যান্ডের নাম। গবেষকদের মতে, মধ্যযুগে ওই দেশে প্রচলন ছিল ব্রেকিং রুটির। কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গা দখল করেছে ইংলিশ মাফিনস এবং ক্রামপেট। যদিও ময়দা দিয়ে তৈরি করা এই দুই প্রকারের রুটি বহুদিন ধরেই দেশের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। যদিও ঐতিহ্য বহন করার মতোই স্বাদে ও সৌন্দর্যে অতুলনীয় এই রুটি। মূলত, ক্রামপেট তৈরিতে ইস্টের পরিবর্তে বেকিং সোডার ব্যবহার করা হয়, এই রুটি জ্যাম বা মাখন দিয়ে খাওয়া যায়।
- রুটির জনপ্রিয়তায় তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফ্রান্স। এই দেশের জনপ্রিয় রুটির নাম ‘বাগুয়েত’। এই রুটির স্বাদকে টেক্কা দিতে পারা মুশকিল।
- ব্রাজিলের মাটিতে তৈরি হওয়া একপ্রকার কন্দ কাসাভাকে ব্যববহার করে সেই সেই দেশে তৈরি হয় রুটি এবং কেক। কন্দ দিয়ে তৈরি হওয়ার সেই রুটি পছন্দ করেন মানুষ।
- জার্মানিতে রাই বা যব দিয়ে তৈরি হয় পৃথিবী বিখ্যাত কালো রুটি ‘পামপারনিকেল’।
- আমেরিকার দক্ষিণে গমের বদলে ভুট্টা দিয়ে তৈরি হয় রুটি। ওই দেশের বেশিরভাগ মানুষই ব্রেকফাস্টে গরম রুটি খাওয়া পছন্দ করেন। ভুট্টা দিয়ে তৈরি এই রুটিগুলোর কোনোটির নাম বাকহুইট, হোমিনি ও জনি কেক।
- ইতালিতেও পাওয়া যায় ভিন্ন স্বাদের রুটি। ময়দা, নুন, অলিভ ওয়েল ও পিয়াজ মিশিয়ে তৈরি করা হয় ওই দেশের জনপ্রিয় রুটি ফোকাক্সিয়া। এই রুটি যেমন তরকারির সঙ্গে খাওয়া যায় ঠিক তেমনই পিজ্জা কিংবা স্যান্ডউইচ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
- পোল্যান্ডের জনপ্রিয় রুটি বাগেলস। দেশবাসীর কাছে এই রুটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।