লোকসভা ভোটের প্রচারে রামমন্দিরকে ইস্যু করতে চেয়েছিল বিজেপি (BJP)। সেই কারণে অসম্পূর্ণ মন্দিরেই হয়েছে বিগ্রহ স্থাপন-যেটা শাস্ত্র বিরোধী বলছেন স্বয়ং দেশের শঙ্করাচার্যরা। কিন্তু মোদি সরকারের সব চেষ্টায় জল ঢেলে সামনে উঠে আসছে তাদের ব্যর্থতা- বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। সিএসডিএস-লোকনীতি নামে একটি গবেষণাধর্মী সমীক্ষা সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশ।

সামনের সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যাবে লোকসভা নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দলেরই প্রচার তুঙ্গে। কোন ইস্যুকে প্রচারে সামনে আনছে রাজনৈতিক দলগুলি? ভোটাররাই বা কী কী বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন? এই সব জানতে সমীক্ষা চালায় সিএসডিএস-লোকনীতি। তাতেই যে তথ্য সামনে এসেছে, তা দেখে ঘুম উড়েছে গেরুয়া শিবিরের। কারণ, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন হওয়া রামমন্দির (Ram Mandir) বেকারত্ব-দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জ্বলন্ত ইস্যুগুলিকে ঢাকতে পারছে না। ভোটের বাজারে শীর্ষে রয়েছে কর্মসংস্থানের সমস্যা। এরপরেই রয়েছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি।

রামমন্দির উদ্বোধনকে সামনে রেখে ভোট বৈতরণী পার করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু মোদি সরকারের আমলেই দেশে বেকারত্ব সর্বোচ্চ তা ভুলে যায়নি দেশের যুবসমাজ। সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় তিন-পঞ্চমাংশ ভোটার মনে করেন, ৫ বছর আগের তুলনায় এখন একটি চাকরি জোগাড় করা খুবই কঠিন। মাত্র ১২ শতাংশ সহজে চাকরি জোগাড় করতে পেরেছেন। ২০১৯-এর পর থেকেই দেশে বেকারি ও মূল্যবৃদ্ধি চরম আকার নিয়েছে বলে মত গ্রামীণ ভোটারদের। ৩২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন উন্নয়নে লাভবান হয়েছেন ধনীরা।

বিরোধীদের বিরুদ্ধে লাগাতার কেন্দ্রীয় এজেন্সি- CBI, ED, আয়কর দিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে মোদি সরকার। অ-বিজেপি দলগুলির নেতানেত্রীদের বাড়িতে চলা তল্লাশি, গ্রেফতারি, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ভোটাররা ভাবছেন না। তাঁরা নিজেদের রোজকার সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপি নেতৃত্ব রামমন্দিরকে যতই ইস্যু করার চেষ্টা করুক সাধারণ মানুষের মনে তা প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। এগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মানতে নারাজ ভোটাররা।

সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, এবারের ভোটে বেকারত্ব, জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম, উন্নয়ন এইগুলির ভিত্তিতেই নিজেদের ভোটাধিকার প্রদান করবেন আমজনতা। এর জেরে বেকারি থেকে মূল্যবৃদ্ধিই বিজেপির (BJP) মাথা ব্যথার কারণ হবে। তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhisgek Banerjee), বারবারই তাঁর ভাষণে বলেন, উন্নয়ন ও চাহিদাকে সামনে রেখে ভোট দিন। তৃণমূলের কথায়, ধর্ম পালন হবে, ঘরে, মন্দিরে, মসজিদে, গুরুদ্বার ও চার্চে। ভোট হবে উন্নয়নের নিরিখে। সিএসডিএস-লোকনীতি-র সমীক্ষায় বলছে, একই কথা। জনগণ রামমন্দির নয়, কর্মসংস্থানকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

মাত্র ৮ শতাংশ ভোটার দুর্নীতি এবং রামমন্দিরকে বড় ইস্যু বলে মনে করছে। অর্থাৎ সিংহভাগ মানুষ -৯২ শতাংশ এটাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। পাশাপাশি কৃষক আন্দোলনও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যর দাবিকে সমর্থন করেছেন ৬৩ শতাংশ ভোটার। সব মিলিয়ে এই সমীক্ষার রিপোর্টে যে মোদি সরকারের কপালে ঘাম জমছে তা বলাই যায়।
