একুশের বিধানসভা ভোটের পর সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন, বাংলা জুড়ে ব্যাপক সাফল্য এলেও মতুয়া গড়ে ছাপ ফেলতে ব্যর্থ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার ভোটেও তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে রানাঘাট ও বনগাঁ লোকসভা আসন। মতুয়া অধ্যুষিত এই দুই লোকসভা কেন্দ্রে এবারও দাগ কাটতে পারেনি জোড়াফুল শিবির। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে, এই দুই আসনের অন্তর্গত ১৪টি বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে—তৃণমূল এগিয়ে মাত্র দুটি জায়গায়, বাকি ১২টিতে বিজেপি। ফলে মতুয়া গড় বেশ মাথাব্যথার কারণ তৃণমূলের।

২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এই ১২টি বিধানসভা আসনের দিকে বিশেষ জোর দিতে চাইছে তৃণমূল। বড় মা বীণাপাণিদেবী বেঁচে থাকাকালীন মতুয়াদের একটা বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সমর্থন দিত। কিন্তু তাঁর প্রয়াণের পর মতুয়া ভোট ব্যাংকের প্রায় পুরোটাই বিজেপির বাক্সে। তাই মতুয়া সম্প্রদায়ের সব অংশের মানুষের সমর্থন যাতে আগামিদিনে তৃণমূলের ভোট বাক্সেই আসে, সেই টার্গেট নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, রানাঘাট কেন্দ্র থেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। একইভাবে বনগাঁ থেকেও ফের জিতেছেন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। এই দুই আসনের সার্বিক ফলাফলের রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের হাতে। রিপোর্ট নিয়ে পর্যালোচনাও শুরু হয়েছে।
আগামী মাসে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে উপনির্বাচন। এরপর বাগদা কেন্দ্রেও ভোট হবে। তবে তৃণমূলের লক্ষ্য ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন ভোটের আগে গোটা মতুয়া গড়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী।

তথ্য বলছে, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট রয়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৭ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৯৬ ভোট (৫০.৭৮ শতাংশ)। অন্যদিকে, তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারীর সংগ্রহ ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪৯৭ ভোট (৩৮.৬৫ শতাংশ)। ১ লক্ষ ৮৬ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছে বিজেপি। কিন্তু গতবার এই কেন্দ্রেই তাদের জয়ের ব্যবধান ছিল ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪২৮ ভোটের। ফলে বিজেপির জয়ের মার্জিন কমলেও তৃণমূল এখনও এই লোকসভা আসনে শক্ত ভিত তৈরি করতে পারেনি। কারণ এই কেন্দ্রে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা বেশি। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল শুধুমাত্র নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে। এই লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বাকি শান্তিপুর, রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ ও চাকদহে এগিয়ে আছে বিজেপি। তবে সংগঠনের ফাঁকফোকর ভরাট করে আগামিদিনে এখানে জোড়াফুল ফোটানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তৃণমূল। তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার দিকটিও উঠে এসেছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে।

অন্যদিকে, বনগাঁ কেন্দ্রে শান্তনু ঠাকুর ভোট পেয়েছেন ৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৫০৫ (৪৮.১৯ শতাংশ)। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাসের সংগ্রহ ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮১২ (৪৩.২৫ শতাংশ)। উনিশে ভোট পেয়েছিল বিজেপি ৪৮.৮৫ শতাংশ এবং তৃণমূল ৪০.৯২ শতাংশ। এবার তৃণমূলের ভোট বাড়লেও মতুয়া সম্প্রদায়ের সকলের সমর্থন মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বনগাঁয় গিয়েছেন। রাজ্য সরকার বনগাঁ ও মতুয়া সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু তারপরেও ভোটযন্ত্রে সমর্থনের খামতি কেন? বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা বেশি। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে সেখানে স্বরূপনগর বিধানসভা ক্ষেত্রে তৃণমূল এগিয়ে। কিন্তু কল্যাণী, হরিণঘাটা, বাগদা, রনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ ও গাইঘাটায় এগিয়ে বিজেপি।
