Tuesday, November 11, 2025

চূড়ান্ত হতাশার বহিঃপ্রকাশেই গণপিটুনি! মত মনোবিদদের, মাস কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ মেয়রের

Date:

Share post:

মৌসুমী বসাক ও জয়িতা মৌলিক

প্রথমে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি। তারপরে মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খাস কলকাতা ও সল্টলেকে গণপিটুনিতে মৃত্যু। এই ঘটনাগুলি দাঁড় করিয়ে দেয় এক সামজিক ব্যাধির সামনে। যার সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন, রাজনীতি- কোনও কিছুরই সম্পর্ক নেই। আছে শুধু হতাশা আর তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের। শনিবার, এই বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচির শেষে এই প্রবণতা রুখতে মাস কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দেন তিনি। আর মনোবিদদের মতে, মানুষের মনে উচ্চাঙ্খা, না পাওয়া, ক্ষোভ থেকেই এই নৃশংস আচরণ।

গণপিটুনি সম্পর্কে মেয়র বলেন, “এটা কদিন ধরেই হচ্ছে। বিভিন্ন গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। আমি গণপিটুনি দেব কেন? আমার যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তা হলে আমি পুলিশকে জানাব। যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তা হলে অপরাধীর শাস্তি হবে।“ ফিরহাদের কথায়, “আইন নিজের হাতে নেওয়া একটা মারাত্মক প্রবণতা। কেউ ছেলেধরার নামে মারছে, কেউ ডাইনি অপবাদে মারছে। এখানে দেখলাম, মোবাইল চোর বলে মারছে। মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে, পুলিশ পর্যন্ত যাওয়ার মানসিকতাই নেই। ঘটনা ঘটেছে, এক্ষুনি কিছু করতে হবে। এটা অত্যন্ত বিপদজ্জনক এক সঙ্কেত।“

মনোবিদ মুক্তলেখা ভট্টাচার্যের মতে, চাওয়া-পাওয়ার সামঞ্জস্য থাকছে না। না পাওয়া থেকে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবাদটা তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। তখন এই ভাবে ক্ষোভটা প্রকাশ করছেন। মুক্তলেখার মতে, একা থাকলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু অনেকের সঙ্গে মিলে দুঃসাহস তৈরি হয়। অনেক সময়ই দেখা যায়, খুব শান্ত মানুষও রাস্তায় কাউকে মারধর করা হচ্ছে দেখে দু-ঘা মেরে দেন। মনের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা আর না পাওয়ার হতাশার বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে গণপিটুনির মত নৃশংস আচারণ।

মনোবিদদের মতে, মানুষের মতে আকাশকুসুম চাহিদা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই চাহিদা মেটাতে না পারায় হতাশা তৈরি হচ্ছে। সেটা সব সময় অর্থ বা মূল্যবান বস্তু তা নাও হতে পারে। কেরিয়ার বা কোনও পছন্দের মানুষকে পাওয়ার কামনাও হতে পারে। সেই চাহিদা পূরণ না হলেই তা থেকে হতাশার সৃষ্টি হয়। সেটাই পরিণত হয় আক্রাশে।

বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের মনোবিদ অভিষেক হংসের মতে, হতাশা আর ক্ষোভের থেকেই ঘটছে এই গণপিটুনির ঘটনা। হতাশা কোথায় প্রকাশ করবে? তাৎক্ষণিক রাগ থেকেই এইভাবে একজনকে হাতের কাছে পেয়ে সেই আক্রোশ মিটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তাঁর মতে, সবাই যে মারছেন এমন নয়, অনেকে বাঁচাতেও এগিয়ে আসছেন। এর থেকে বাঁচতে জনসচেতনা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন অভিষেক হংস।

কলকাতার মেয়রের (Firhad Hakim) কথায়, আজ আমি কাউকে মারছি, কাল আমি কোথাও গেলে অন্যেরা আমাকে মারবে। এ ভাবে চললে সমাজ শেষ হয়ে যাবে। এর থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মাস কাউন্সেলিং-এর পরামর্শ দেন ফিরহাদ।





spot_img

Related articles

ধর্মেন্দ্রর অবস্থার অবনতি, রাতেই হাসপাতালে ছুটলেন শাহরুখ-সলমন

বর্ষীয়ান বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর (Dharmendra) শারীরিক অবস্থার অবনতি। রাতেই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে গেলেন শাহরুখ-সলমানরা (Shahrukh Khan - Salman...

সলমনই হামলার মাস্টারমাইন্ড? দিল্লি বিস্ফোরণে গ্রেফতার ব্যবহৃত গাড়ির মালিক

সাদা রঙের একটি হুন্ডাই আই–২০ গাড়ি ধীরে ধীরে এসে ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে থামতেই মুহূর্তের মধ্যে ঘটে বিস্ফোরণ। সোমবার...

দিল্লি বিস্ফোরণের জের: কলকাতার সব থানাকে সতর্ক করেছে লালবাজার, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চলছে নাকা চেকিং

দিল্লির লালকেল্লার কাছে মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে দেশের রাজধানীর পাশাপাশি হাই অ্যালার্ট (High...

দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর! ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, গ্রেফতার গাড়ির মালিক

দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার ১। বিষ্ফোরণ হওয়া গাড়ির মালিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের...