জেলে বসে পড়াশোনা করে পিএইচডি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। তার পরেও তাঁর পিএইচডি করার ক্ষেত্রে ‘অনাবশ্যক জটিলতা’ তৈরি করে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুকোমুকি হয়ে এমনই অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, এই বিষয়ে কথা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কারামন্ত্রী অখিল গিরির সঙ্গে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অর্ণব বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য পিএইচডি-র প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কুণালের বক্তব্য, পরীক্ষায় ভাল ফল করা সত্ত্বেও অর্ণবকে পিএইচডি করতে বাধা দিচ্ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বয়ং গৌতম চন্দ্র।

এদিন কুণাল বলেন, পিএইচডি করার জন্য যা যা করার দরকার তা অর্ণব করে ফেলেছেন । পিএইচডি করার প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েছেন যার অর্থ পিএইচডি করার যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। অথচ এক অদ্ভূত জটে তার পিএইচডি করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে আটকে দেওয়া হচ্ছে। কুণাল এদিন অভিযোগ করেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। এটা হতে পারে না। কোন মাওবাদী কিসের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেটা আইনের বিষয়। তিনি একের পর এক মেধার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যে জায়গায় পৌঁছেছেন, সেখানে রাজ্যপাল নিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্য কীভাবে এই জট তৈরি করতে পারেন, সে প্রশ্নও তোলেন কুণাল। হুগলি জেলে আছেন অর্ণব দাম। তিনি অনশনের কথা বলেছেন জেল কর্তৃপক্ষকে।
কুণাল জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত আন্তরিক অর্ণবের বিষয়টি নিয়ে। ইতিহাস বিভাগ অর্ণব দামকে পিএইচডি করতে দেওয়ার বিষয়ে আন্তরিক। ইতহাসের অধ্যাপিকা সৈয়দ তানভীর নাসরিন পরিষ্কার বলেছেন, যা যা সাহায্য করার করা হবে। অথচ উপাচার্য অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন তুলেছেন। উপাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, একজন জেলবন্দি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করবেন? প্রয়োজনে অর্ণবকে হুগলি জেল থেকে বর্ধমান জেলে ট্রান্সফার করা হবে। সেখান থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কাছে, সেখান থেকে তিনি পড়াশোনা করবেন। কারামন্ত্রী অখিলগিরিকেও উপাচার্য চিঠি দিয়েছেন। কারামন্ত্রী জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যেই ইতিবাচক উত্তর কারা দফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।তবে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার ক্ষেত্রে এক জন গবেষককে ‘নিয়মিত’ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন কুণাল।


তার অভিযোগ, এই উপাচার্য অত্যন্ত সংকীর্ণমনা এবং নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। আমরা চাই অর্ণব পিএইচডি করুক। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কারামন্ত্রী, কারা বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ, সবাই এ ব্যাপারে আন্তরিক। অথচ উপাচার্য অযছা ইচ্ছাকৃতভাবে জটিলতা তৈরি করছেন। আমি ধন্যবাদ দেব তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের মনিশঙ্কর মন্ডলকে, তারা আজ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সোচ্চার হয়ে এই দাবি তুলেছেন, যে অর্ণব দামকে পিএইচডি করতে দিতে হবে।
কুণালের সাফ কথা, কবে কোন ঘটনায় অন্য রাজনীতিতে জড়িয়ে মাওবাদী হিসেবে জেল খাটেছেন। অথচ তার মেধা দিয়ে তিনি পিএইচডি করার জায়গায় পৌঁছেছেন। একজন সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাইছেন অথচ তাকে বাধা দিচ্ছেন উপাচার্য। শুধু তাকে আটকে দিতে গিয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সবার পিএইচডি বন্ধ থাকবে এটা চলতে পারে না।
