প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার সকাল ৮.২০ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। পরিবার সূত্রে খবর দীর্ঘ রোগভোগের পর বৃহস্পতিবার ভোররাতে পরিস্থিতির অবনতি হয়। এরপর তড়িঘড়ি চিকিৎসকরা বাড়িতে এলেও শেষরক্ষা হয়নি। দীর্ঘদিন ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে এমন পরিস্থিতি। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তবে এদিন কোনওভাবেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া। ইতিমধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে ঝাড়গ্ৰাম সফর বাতিল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম জমানার দ্বিতীয় ও শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জানা গিয়েছে, কদিন ধরেই জ্বর ছিল। বুধবার বাড়িতে রক্তপরীক্ষাও করা হয়। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই চিকিত্সা চলছিল তাঁর। কারণ হাসপাতালে থাকতে পছন্দ করতেন না তিনি।

বামপন্থী পরিবারে বেড়ে ওঠার সংস্কৃতি বুদ্ধদেবের উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের পর ১৯৬৪ সালে সিপিআই (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি) ভেঙে সিপিএম বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) তৈরি হয়। এর দু’বছর পর ১৯৬৬ সালে বুদ্ধদেব সিপিএমের সদস্য হন। তার আগে পর্যন্ত তিনি বাম-মনস্ক একজন ছাত্র ছিলেন, সাহিত্যের নানা ধারায় যাঁর বিচরণ। দলে যোগ দেওয়ার পরও মূলত দলীয় পত্রপত্রিকা সম্পাদনা এবং লেখালেখির দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।

এরপর পশ্চিমবঙ্গ প্রবেশ করল নতুন এক পর্বে। ১৯৭৭। রাজ্যে বামফ্রন্টের দায়িত্বগ্রহণ। সাধারণ মানুষ আঁকড়ে ধরল এক লাল পতাকাটা। ৭৭-এর নির্বাচনে উত্তর কলকাতার বিধায়ক নির্বাচিত হলেন বুদ্ধবাবু। দায়িত্ব মিলল তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের, যা পরে তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগ হয়। তারপর ১৯৮৭-তে পেলেন পুরো ও নগরোন্নয়নের দায়িত্ব। সিপিএমের পতন- অভ্যুদয়- বন্ধুর পথে তিনিই ছিলেন কান্ডারী, চিরসারথী। দীর্ঘ ২৪ বছর যাদবপুরে বিধায়ক হিসাবে রাজ করেছেন বুদ্ধদেব।

সালটা ১৯৯৯। জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্বকালের শেষ লগ্ন। জ্যোতিবাবু অসুস্থ। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন বুদ্ধদেব। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে প্রথম অধিষ্ঠান। সেই চেয়ারেই থেকে গেলেন তিনি। ২০০১-এর ১৮ মে ১৩তম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। ২০০৬ সালেও এল বিশাল জয়। সেই জয়ের ইতিহাস আজও অমলীন। তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক ভোটের কিছুদিন আগে অনীল বিশ্বাস মারা যান। বুঝেছিলেন তাঁরাই জিতবেন। ২৩৫! ১৪ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের ধারেকাছে কেউ আসেনি। ফলঘোষণা হয়েছিল ১১মে। রেকর্ড আসন জিতে সপ্তমবার সরকার গঠন।
