আগে একটাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের (Bank Account) সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে ছিল ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। তবে এখানেই যে শেষ নয়, সেটাও জানা গিয়েছিল তখনই। এবার সামনে এলো আন্দোলনকারী ডাক্তারদের তহবিলের নটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য। সব মিলিয়ে যার মোট অঙ্ক ৪ কোটি ৭৫ হাজার টাকা। প্রশ্ন এই পরিমাণ টাকা তাঁদেরকে বা কারা দিলেন এবং কী উদ্দেশে তাঁরা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছেন? কথায় কথায় স্বচ্ছতার দাবি তোলা জুনিয়র ডাক্তাররা (Junior Doctor) এই বিষয়ে আলোকপাত করবেন কি? এই ৯টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের (Bank Account) টাকার তথ্য মিলেছে সঞ্জয় ভদ্রের সূত্রে। সঞ্জয় ভদ্রের পোস্ট নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছতা ও তদন্তের দাব জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। ‘সেবাধর্মে’র নামেই না কি এই কোটি কোটি টাকা উঠছে। অথচ যে কাজের নামে টাকা উঠছে সেই ‘সেবাধর্ম‘ শিকেয় তুলে দাবি আদায়ে লাগাতার বিভিন্ন আন্দোলনের অজুহাতে পরিষেবা ব্যাহত করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা (Junior Doctor)। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট রেজিস্টার অব অ্যাসিওরেন্সের দফতরে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন হিসেবে নাম নথিভুক্ত করিয়েছে। ১৬ অক্টোবর সেখানে ব্যালেন্স ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। যে এনজিও-নামে যে এই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তারা নিজেদের কাজ হিসেবে দিয়েছে রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষার মতো ‘সেবাধর্মে’র। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর ট্রাস্ট গঠনের পর কটা রক্তদান, চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির করেছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট? তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই টাকার উৎস নিয়েও।
৯টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা তথ্য:
১. ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট – এইচডিএফসি – ১.৭কোটি
২. এম/এস ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম – বিওআই – ৯৫ লাখ
৩. মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন – এসবিআই – ৩১ লাখ
৪. সেন্ট্রাল কলকাতা ইউনাইটেড ডক্টরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন – এক্সিস – ৩১ লাখ
৫. ৪র্থ পিলারওয়েথপিপল – এক্সিস – ৭৫০০০/-
৬. শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ – পিএনবি – ৭.৫ লাখ
৭. সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম – পিএনবি – ১৭ লাখ
৮. অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস – ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক – ২০.৫ লাখ
৯. প্রিয়া লাকরা/রিয়া বেরা/শিবম গারোদিয়া – এসবিআই – ২৮ লাখ
মোট অঙ্ক দাঁড়ায় ৪০০৭০০০/-
তথ্য সূত্র: সঞ্জয় ভদ্র

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক দেখা দিয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া ঠিকানা নিয়ে। ঠিকানা হল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাস কেবি হস্টেলের ৩২ নম্বর রুম। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে সরকারি ছাত্রাবাসের ঠিকানা কেন? সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনও ট্রাস্টের সম্পত্তি হিসেবে সরকারি সম্পত্তিকে ব্যবহার করা যায় কি? এই নিয়ে নবান্নের বৈঠকেও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। দফতরকে না জানিয়ে সরকারি হাসপাতালের ছাত্রাবাসের ঠিকানা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা কতটা আইনসঙ্গত সে বিষয়ে মুখ্যসচিবকে প্রশ্ন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)।

এই যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে রিয়া বেরার নামে যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাতে রয়েছে ২৮ লক্ষ টাকা। এই রিয়া বেরাই কিন্তু যে পাঁচ জুনিয়র ডাক্তার তিলোত্তমার ময়নাতদন্তের ঘরে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। সঞ্জয় ভদ্র লিখছেন, এই অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে একটি শুধু পুরনো, বাকি সবই হয়েছে এই আন্দোলনের সময়। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের সময় জুনিয়ার ডাক্তাররা অনেকেই না কি পার্সোনাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে অনলাইনে টাকা পাঠানোর জন্য বলেছিলেন।

এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি নিয়ে স্বচ্ছতা ও তদন্তের দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ।
