Monday, November 3, 2025

‘বিস্ময় বিনয় পাঠ’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

ধরি প্রেমিক = X

প্রেমিকা = Y
আকাশের অনেক উঁচুতে
চাঁদ উঠেছে
সেই চাঁদ = Z
এই নিয়ে তুমি কাটিয়ে
দিলে সারা সন্ধ্যে
অথচ কোনো সমাধানে
পৌঁছতে পারছ না
ওদিকে দাঁত দিয়ে নখ
কাটতে কাটতে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে হাতে তালুতে

কী দরকার ছিল তোমার
এভাবে কবিতার সঙ্গে
অঙ্ককে মেশাতে যাওয়ার
( বিরামচিহ্নহীন এই কবিতাটি )

আমি পনেরো হাজার কবিতা লিখেছি । কেন লিখেছি কেউ জানে না , আমিও জানি না । না লিখলে বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হতো না, আমার ক্ষতি হতো । লিখতে লিখতে বুঝেছি , কবিতা লিখলে দুঃখ ভোলা সম্ভব । কিন্তু দুঃখ ভুলে গেলে আর কবিতা লেখা যায় না ।

এসব কার লেখা ? এমনও লেখা যায় ? এসব লিখেছেন বিনয় মজুমদার । কিন্তু মনে রাখতে হবে এ ‘ বিনয় ‘ সে ‘ বিনয় ‘ নয় । এ বিনয় যেতে চান দেশান্তরে , যেখানে ফুলের মুক্তি আছে ।

সকল ফুলের কাছে এত
মোহময় মনে
যাবার পরেও
মানুষেরা কিন্তু মাংস
রন্ধনকালীন ঘ্রাণ
সবচেয়ে বেশি ভালবাসে ।

আর কিছুই যদি না লিখতেন বিনয় , শুধুমাত্র ‘ ফিরে এসো চাকা ‘ কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি অমরত্বের দাবিদার থাকতেন ।

আমি মুগ্ধ ; উড়ে গেছ ;
ফিরে এসো , ফিরে এসো ,
চাকা ,
রথ হয়ে , জয় হয়ে , চিরন্তন
কাব্য হয়ে
এসো ।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে
গান হবো , প্রেম হবো ,
অবয়বহীন
সুর হয়ে লিপ্ত হবো
পৃথিবীর সব আকাশে ।

শয়নভঙ্গির মতো অনাড়ষ্ট সহজ বিকাশ জাগতিক সাফল্যের চেয়েও বেশি কাম্য মানুষের কাছে , এই ভাবনা সম্বল করে আকাশে ডানা মেলেছিলেন বিনয় কবি তাঁর আশ্চর্য কাব্যভাষায় ভুবন ভরিয়ে দিতে ।

উপবিষ্ট মশার উড়ে যাওয়া ইষৎ সঙ্গীতময় হয়ে ওঠে যে মরমী কবির কাছে , মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারসের উড়ে যাওয়া দেখে বিস্মিত হন যিনি, তাঁরই নাম বিনয় মজুমদার । তিনি গূঢ় এক প্রশ্ন রেখে গেছেন , ‘ ভালবাসা দিতে পারি , তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম ? ‘ সতত প্রবহমান এক অন্যতর ভাবের নদী , এক অনন্য মায়াময় আকাশ যিনি এঁকে দিয়ে গেছেন বাংলা কবিতার অপরূপ ক্যানভাসে , তিনিই অদ্বিতীয় বিনয় মজুমদার , যিনি জীবনধর্মে বাউল , অথচ বয়সে গাণিতিক । একদিকে আত্মসমাহিত অন্যদিকে আত্মঘাতী ।

ফিরে এসো চাকা , আমার ঈশ্বরীকে , হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ , অঘ্রাণের অনুভূতিমালা , কবিতা বুঝিনি আমি , নক্ষত্রের আলো , আমিই গণিতের শূন্য ইত্যাদি কবিতার বইগুলো পড়ে বিনয়কে কিছুটা চেনা যায় ঠিকই , কিন্তু কতটা ?

কতটা ধরা যায় এই রহস্যকবিকে , যাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে রয়ে গেছে ধরা দিতে দিতেও শেষমেশ হাতের নাগাল এড়িয়ে শিশিরের শব্দের মতন টুপ করে ঝরে পড়া । চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা … গানের মতো পবিত্র ও নিষ্কলুষ এই অসামান্য কবির কবিতা পরিভ্রমণে আশ্চর্য এক ঘোর লাগে আমাদের , যে ঘোর কাটে না খুব সহজে ।

প্রশ্ন থেকে যায় ‘ প্রকৃত সারস ‘ চিনবো কীভাবে ?
কীভাবে চক্রবর্তী হয়ে যায় চাকা ? নাকি চাকা অন্যকিছু ! যদি সত্যিই ফিরে আসতো চাকা , তাহলে কি জীবন বদলে যেতো কবির ? কবি যেতে চান যেখানে ফুলের মুক্তি আছে । ফুলের মুক্তি হয়ে গেলে আর কি কবিতা লেখা যায় ? উনিই তো লিখেছেন , দুঃখ ভুলে গেলে আর কবিতা লেখা যায় না । কোলাহলের মধ্যে নৈঃশব্দ রচনার প্রয়াসী , সুদূরের পিয়াসী বিস্ময় বিনয় কবি । বিনয়ের প্রেমের কবিতাও কি জীবনের গাণিতিক হিসাব নয় ? আর তাঁর প্রেমজীবন ?

অনেক কিছুই তবু বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্র নয় লিখিত বিশ্লিষ্ট রূপ গণিতের আকাঙ্খাময় হয় না , সেসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত গণিতসূত্রের নির্যাস দর্শনটুকু প্রয়োগ করেই বিশ্লেষণ করা একমাত্র পথ , গণিতশাস্ত্রীয় দর্শনের বহির্ভূত অতিরিক্ত দর্শন সম্ভবপর নয় ।

প্রভাবিত করার অসম্ভব ক্ষমতাসম্পন্ন এই দুর্লভ কবির আত্মবিক্ষণ প্রকৃতই অসামান্য । কবির আরাধ্য জীবন ও ব্যক্তিজীবন আলাদা করে ভাবতে গিয়ে পাঠকের মনে সারাবেলা বাজতে থাকে এক মধুর গাণিতিক সিম্ফনি । এই সুর ছেড়ে যায় না কখনও ।

আমাকে মনে রেখো
পৃথিবীর লোক
আমি খুব বেশি দেশে
থাকিনি কখনো ।
আসলে তিনটি মাত্র দেশে
আমি থেকেছি , এখন
আমি থাকি বঙ্গদেশে ,
আমাকেও মনে রেখো
বঙ্গদেশ তুমি ।

spot_img

Related articles

ঝুলনকে নিয়েই সাফল্যের উদযাপন স্মৃতিদের, বাঙালির গর্ব বিশ্বকাপজয়ী রিচা

পঙ্কজ রায় থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা ঝুলন গোস্বামী, ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে বাংলার মুখ অনেকেই। কিন্তু সৌরভ-ঝুলনদের পাশে ছিল...

মায়ানগরীতেই স্বপ্নপূরণ, এক নজরে ব্যাটে বলে ধামাকাদার ম্যাচের স্কোর বোর্ড

মুম্বইকে বলা হয় মায়ানগরী। কত স্বপ্ন এখানে সফল হয়। এই মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২০১১ সালে ২ এপ্রিল ওয়ানডে...

ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মেয়েরা: শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর ও ক্রীড়ামন্ত্রীর

রবিবারের মধ্যরাতে রচিত হল নতুন ইতিহাস। প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মহিলা ক্রিকেট ব্রিগেড। ইতিহাস রচনা হওয়ার রাতে ভারতীয়...

দীপ্তি-শেফালিদের হাত ধরেই বিশ্ব জয়ের তৃপ্তি, ইতিহাস সৃষ্টি হরমনপ্রীতদের

বিশ্বসেরা ভারত(India)। মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া। মুম্বই ইতিহাস সৃষ্টি ভারতীয় মহিলা দলের। প্রোটিয়াদের ...