তসলিমা নাসরিনের বইকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্ক বাংলাদেশে। বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের বইমেলায় নিষিদ্ধ হয়ে গেল লেখিকার বই ‘চুম্বন।’ এই বইটি রাখায় ‘সব্যসাচীর’ স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু কট্টরপন্থী ইসলামী প্ররোচনা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। নোটিজেনরা এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেউ কেউ এর প্রতিবাদে লিখেছেন, ‘অমর একুশে বইমেলা আরেকবার কলঙ্কিত হল। তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করায় সব্যসাচীর স্টলে হামলা চালিয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। আক্রমণ করা হয়েছে প্রকাশক দম্পতি শতাব্দী ভবকে।’

ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন তসলিমা। ফেসবুক পোস্টে তার প্রশ্ন, চুম্বন কেন বইমেলায় নিষিদ্ধ ? যেহেতু বইটি আমার লেখা। তিরিশ বছর আগে আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল তখনকার সরকার। তিরিশ বছর আমার বই বলতে প্রায় কিছুই প্রকাশিত হয়নি বাংলাদেশে। তারপরও আমার লেখাকে এত ভয় ? এখন গল্পগ্রন্থ চুম্বনটিও ইউনূস সরকার নিতে পারছে না ? আগের সরকারগুলো যত না স্বৈরাচারী ছিল, এই ইউনূস সরকার তাদের চেয়ে হাজার গুণ বেশি স্বৈরাচারী। চুম্বন বইখানা পড়ে দেখুন মিস্টার ইউনূস এবং বাংলা আকাডেমির পরিচালক। মানবিক গল্পগুলো নিষিদ্ধ করতে মন চায় কেন আপনাদের ? সন্ত্রাসীরা যা খেতে চাইছে, সেটাই তাদের খাওয়াচ্ছেন আপনারা। এভাবেই বাক স্বাধীনতার বিপক্ষে, মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে যাচ্ছেন। এভাবেই সন্ত্রাসীদের শক্তিশালী করছেন।

তিনিও আরও লিখছেন, মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা বইমেলার সব্যসাচী স্টল গুঁড়ো করে দিতে চেয়েছে। সুতরাং বইমেলা কর্তৃপক্ষের কী করা উচিত ? সব্যসাচী স্টলের সবার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। যে সন্ত্রাসীরা স্টল গুঁড়ো করে দেওয়ার, ধ্বংস করে দেওয়ার, প্রকাশককে আর লেখককে খুন করার হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। তা না করে তারা প্রকাশককে বলেছে বাংলা আকাডেমির বইমেলা থেকে বই সরিয়ে নিতে। সন্ত্রাসীরা থেকে যাবে, বই সরে যাবে। এই হল প্রো-সন্ত্রাসী ক্ষমতাবানদের বিচার।

বইমেলায় যে তার উপর হামলা হতে পারে, আগাম আশঙ্কা ছিল বলেই সোমবার রাতে হামলার সময় সনজানা বইমেলা প্রাঙ্গনে থাকলেও দোকানে ছিলেন না। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরাই সরিয়ে নিয়ে যান তাকে। কিন্তু দোকান বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যান তার স্বামী শতাব্দী ভব। শেষ পর্যন্ত দোকান বন্ধ করে তাকে যখন বের করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, সে সময় ফের ভবর উপর চড়াও হন এক দল মানুষ। পুলিশ না থাকলে তিনি কতটা অক্ষত থাকতেন সে বিষয়ে সন্দিগ্ধ সনজানা-ঘনিষ্ঠরা।


সনজানা জানিয়েছিলেন, প্রতি বছর তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ বইমেলায় প্রত্যেক বছর সেই বই বিক্রিও হয়। সে দেশে তসলিমার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় অল্পবিস্তর হুমকিও পেতে হয়। কিন্তু কোনও দিনই তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। তাই ডাকাবুকো অভিনেত্রী এ সব নিয়ে মাথা ঘামাননি কখনও। এ বছরও তিনি প্রকাশ করেছেন তসলিমার বই। তার পর থেকেই একের পর এক হুমকিবার্তা আসছে তার কাছে।

অন্যদিকে, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আওয়াজ তুলে ‘সব্যসাচী’ কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, “তসলিমা নাসরিনের কলমের ক্ষমতা দেখুন। তসলিমা নাসরিন একটা নাম। এই নামে ওদের তাসের ঘর কেঁপে কেঁপে ওঠে। যুক্তির যুদ্ধে যে লড়াই চলছে, সেই লড়াই আমি চালিয়ে যাব। যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমি আমার লড়াই চালিয়ে যাব। বইটি বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাবে না। তসলিমা নাসরিনের আর কোনও বইও হয়তো মেলায় পাওয়া যাবে না। আমি অনলাইনে বিক্রি করার চেষ্টা করব। অনলাইনে কোন কোন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে আমি জানিয়ে দেব। আমার একটা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর আছে, ওখানে পাওয়া যাবে। আপনার মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীলতার পাশে থাকুন। এই মৌলবাদ, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদকে রুখে দিন।”

–

–

–

–

–
