হলফনামায় সম্পত্তি লুকিয়েছেন অগ্নিমিত্রা, নির্বাচন কমিশনে তথ্য সম্বলিত অভিযোগ দায়ের

সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, যা ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩৩এ ধারাকে লঙ্ঘন করেছে।

রাজনীতির ময়দানে মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনামে এসেছেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল।শাসকদলের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য হামেশাই শোনা যায়। অথচ খোদ বিজেপি নেত্রী বেমালুম হলফনামায় সম্পত্তি লুকিয়েছেন বলে অভিযোগ। কী করেন নি তিনি। পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়েছেন। আঙুল উঁচিয়ে, চোখ বড় বড় করে রনং দেহী মেজাজে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিককে হুমকি দিয়েছেন। সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ ও থানার গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি নেত্রী তথা মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও রুজু হয়েছে।অগ্নিমিত্রা কার্যত অগ্নিশর্মা হয়ে পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়েছিলেন।কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা, হুমকি, জোরপূর্বক আটকে রাখা, হেনস্থা করা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলাও রুজু হয়েছে।

এবার নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্রের হলফনামায় এক এক সময় এক এক রকম তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠল। নয়াদিল্লিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগ জমা পড়েছে।মেদিনীপুরের এক ভোটার শ্যামল রায় অভিযোগ জানিয়ে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছেন। তার অভিযোগ, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রেই ২০২৪ সালে প্রার্থী হয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা।কিন্তু নির্বাচনী মনোনয়নপত্রের হলফনামায় কিছু সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, যা ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩৩এ ধারাকে লঙ্ঘন করেছে।

এই বিষয়ে ওই ভোটার উল্লেখ করেছেন, দুটি সম্পত্তির মালিকানা নেত্রী বেমালুম চেপে গিয়েছেন, হলফনামায় উল্লেখ করেন নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বালিগঞ্জ, কলকাতা কর্পোরেশনের, ৫০বি, হাজরা রোডের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১১৭১.৫৭ বর্গফুটের একটি জমি আছে। এমনকী, ওই একই ওয়ার্ডে ২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। দুটি সম্পত্তির দলিল নং: ১-১৬০৩১০৪৫৮/২০২২, পৃষ্ঠা: ৩৭৭৬৮৭ – ৩৭৭৭২৯ । এই দললিগুলি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ডিএসআর – ৩ দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।  ২০২২ সালের ৮ জুলাই ওই সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ হয়েছে অগ্নিমিত্রার নামে। নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ওই বছরেরই ১২ জুলাই। যা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ।এই সম্পত্তির মূল্য সহ আর্থিক বিবরণ নেত্রী প্রকাশ করেননি, যা একটি উল্লেখযোগ্য ভুল।

১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য অগ্নিমিত্রা পলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছেন। এরই পাশাপাশি তিন জায়গায় অগ্নিমিত্রার নামে তিনরকম তথ্যের হদিশ মিলেছে। আসানসোল দক্ষিণ পশ্চিম (বর্ধমান কেন্দ্রের ) জয়ী হিসেবে উল্লেখ আছে স্বামী পার্থ পাল, নেত্রীর বয়স ৪৮ বছর এবং তিনি ১০১ কলকাতার বালিগঞ্জের ২৬ নম্বর পার্টের সিরিয়াল নম্বর ৬৩-এর ভোটার। আবার আরেক জায়গায় উল্লেখ আছে তার বয়স ৪৯ বছর, তিনি ২৮১ আসানসোল কেন্দ্রের ৪৩ নম্বর পার্টের সিরিয়াল নম্বর ৮৬০-এর ভোটার। মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে তার বয়স উল্লেখ আছে ৫১ বছর, তিনি আসানসোল কেন্দ্রের ৪৩ নম্বর পার্টের সিরিয়াল নম্বর ২৮১-এর ভোটার। এই তথ্য সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।এখন দেখার যে তথ্য সম্বলিত এই অভিযোগের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেয় কিনা।