Thursday, December 18, 2025

পুরীর দেবদাসী ইতিহাস: গৌরব নাকি অবমাননার ছায়া!

Date:

Share post:

ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে এমন বেশ কিছু অধ্যায় আছে যা ঐতিহাসিক হলেও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তার মধ্যে পুরীর জগন্নাথধামের ‘দেবদাসী প্রথা’ অন্যতম। মন্দিরের দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য শূদ্রশ্রেনীর ঋতুমতী কন্যাদের দেবতার নামে উৎসর্গ করা হত। কিন্তু এই কুমারী কন্যারা ধীরে ধীরে হয়ে উঠত মন্দিরের পুরোহিত ও পারিষদ বর্গের বিকৃত যৌন লালসার শিকার।

যদিও সর্বসমক্ষে তাঁদের পরিচয় ‘দেবদাসী’ বা ‘নর্তকী’। ভারতে দেবদাসী প্রথার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। প্রায় ৮০০ বছর ধরে চলে আসা এই প্রথা শেষ হয় ২০১৫ সালে, শেষ দেবদাসী শশীমণির মৃত্যুর সঙ্গে। তবে নব্বইের দশকে মন্দির কর্তৃপক্ষ আরও একবার এই প্রথা জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করেছিল, কিন্ত তা সফল হয়নি।

পুরীর মন্দিরে দেবদাসীকে মহরি নামেও ডাকা হয়। ৩৬ নিয়োগের মধ্যে মহরি সেবা মূলত দেবদাসীদের সেবা। শুরুতে জগন্নাথদেবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরেই তাঁদের নাচগানের জন্য আগের দেবদাসীদের থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হত। তবে দেবদাসীদেরও বিভিন্ন কাজের ভাগ ছিল। গর্ভগৃহে জগন্নাথের খাওয়ার সময় যারা গান করতেন তাঁদের ‘গায়নী’ বলা হত। প্রেক্ষাগৃহে যাঁরা নাচতেন তাঁদের বলা হত ‘নাচুনি’, ‘পাতুয়ারি’ হলেন, যাঁরা ভগবানের যাত্রায় নাচতেন। এছাড়াও গর্ভগৃহের বাইরে গান করতেন তাঁদের বলা হত ‘বাহার গায়নী’।

বিশাল মন্দিরের সম্পত্তির মালিক হয়েও মৃত্যুর পর নিজের বস্ত্র ছাড়া আর কোন কিছুরই অধিকার থাকে না তাঁর। কথিত আছে জীবিত ৫ দেবদাসী প্রভু জগন্নাথের স্বপ্নাদেশে মন্দিরে আসেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। এরপর উক্ত বালিকারা বিভিন্ন প্রথার মাধ্যমে প্রভু জগন্নাথকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নেন। দীর্ঘদিন নৃত্যগীত চর্চা করে শিক্ষা শেষে তাঁরা নিজেদের প্রভু জগন্নাথের পায়ে নিবেদন করে দেন।দেবদাসীদের জন্য প্রচলিত একটি প্রথা ছিল, স্বামীরূপে জগন্নাথকে লাভ করার পর তাঁর সন্তানের জননী যাতে না হতে পারেন তার জন্য ছিন্ন করে দেওয়া হত দেবদাসীদের নাড়ি। প্রধান দেবদাসী অথবা মাহিরী শ্বেত শুভ্র বেশ পরিধান করেন। তাঁদের বাসস্থানের সর্বত্র সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা।

মিথ আছে, এঁদের মৃত্যু হয় বার্ধক্য জনিত কারণে। চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না তাঁদের। এমনকী কখনও কলের জলও ব্যবহার করেন না তাঁরা। রাতের তৃতীয় প্রহরে বস্ত্রে মুখ ঢেকে সমুদ্রের অজানা তটে স্নান সেরে নেন তাঁরা। মৃত্যুর পর দেবদাসীদের দেহ কখনও দাহ করা হয় না। প্রভু জগন্নাথের স্বপ্নাদেশেই তাঁদের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় সমুদ্রে।

এককালে দেবদাসীরা ছিলেন খুবই সম্মানীয়। তাঁদের ছিল না কোনও বৈধব্যের যন্ত্রনা। স্বাধীনতার আগে থেকেই বহু চেষ্টা করে এই প্রথা রদ করা হয়। মদনমহন মালব্য থেকে গান্ধীজি- সবাই দেবদাসীদের ‘পতিতা’ বলেই তুলনা করতেন। তবে, প্রথা উঠে গিয়েছে বলে শোনা গেলেও, এখনও মন্দিরে কান পাতলে শোনা যায় দেবদাসীদের কাহিনি।

আরও পড়ুন – ট্যাংরাকাণ্ডের ছায়া মার্কিন মুলুকে! স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী ভারতীয় উদ্যোগপতি

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

বাংলা সব ধর্মকে সম্মান করে: ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন মঞ্চে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন ভালো থাকার টিপস্

বাংলা সব ধর্মকে সম্মান করে। তবু কেউ কেউ রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন...

২০১৬-র SSC-র গ্রুপ সি-ডির যোগ্য তালিকা প্রকাশে হাই কোর্টের রায় কেপ্ট ইন অ্যাবায়েন্সের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

স্কুল সার্ভিস কমিশন(এসএসসি)-র ২০১৬ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র যোগ্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার জন্য যে...

দলে একঝাঁক তারকা, আসন্ন আইপিএলে নাইটদের নেতা বদল!

মিনি নিলামে(IPL Mini Auction) খাতায় কলমে শক্তিশালী দল গঠন করেছে কেকেআর(KKR)। অজিঙ্ক রাহানে, রিঙ্কু সিংরা ছিলেন সঙ্গে ক্যামেরন...

মনরেগার পরিবর্তে ‘জিরামজি’ বিল পাশ লোকসভায়! উত্তাল লোকসভা

বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও বিক্ষোভ সত্ত্বেও লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে MGNREGA-র নাম বদল বিল লোকসভায় পাশ করাল মোদি সরকার।...