বাংলা থেকে মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ কেন করবে – দুর্গাপুরের মঞ্চ থেকে প্রশ্ন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তারপরেই বাংলার মহিলাদের দিল্লি থেকে সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হল বাংলাদেশে (Bangladesh)। কারো সঙ্গে দুই সন্তান। কেউ সন্তানসম্ভবা (pregnant)। ভিন রাজ্য শুধু নয়, একেবারে অন্য দেশে কপর্দকশূন্য অবস্থায় দিশাহারা মহিলারা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইলেন দেশে ফেরার জন্য। কোনওক্রমে সেখান থেকে ভিডিও বার্তায় তুলে ধরলেন মারধর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কাহিনী। কার্যত প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরেই যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর অত্য়াচার বেড়ে যাবে, আশঙ্কা করেছিল তৃণমূল। সেই আশঙ্কাকেই সত্য করল দিল্লি পুলিশ।

নির্লজ্জ দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসেও বাংলার মানুষদের ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে হেনস্থা নিয়ে একটিও নিন্দা বাক্য খরচ করেননি। যার ফল, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি নির্যাতন। এবার তার শিকার বীরভূমের মহিলারা। ভিডিও বার্তায় তাঁরা জানান, বীরভূমের মুরারই এলাকার বাসিন্দা সুইটি বিবি ও সোনালি খাতুন তাঁদের পরিবারসহ দিল্লিতে কাজের জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে গেলে তাঁরা জানান তাঁরা ভারতের বাসিন্দা। দিল্লি পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশের বাসিন্দা করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়, এমনটাও অভিযোগ ওই মহিলাদের। এরপর তাঁদের বায়োমেট্রিক নমুনা সংগ্রহ করে, মেডিক্যাল টেস্ট করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশের অজ্ঞাত কোনও এক জায়গায়। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের পরিচয়পত্র, মোবাইলও। সন্তানসহ তাঁরা একটি মাত্র পোশাক অবলম্বণ করে বিদেশের মাটিতে দিশাহারা হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) কাছে বাড়ি ফেরার আবেদন জানান।

প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে আসার পরদিনই বাংলার নারীদের এই পরিস্থিতিতে সরব শাসকদল তৃণমূল। এর মধ্যে সুইটি বিবির সঙ্গে রয়েছে তাঁর দুই সন্তান। সোনালি খাতুন আট মাসের সন্তান সম্ভবা। তাঁদের ভিডিও তুলে ধরে সাংসদ সামিরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, আপনি বলেছেন দেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেবেন – সব রকম উপায়ে সেটা নিন। কিন্তু প্রকৃত বাসিন্দাদের নথি না দেখে তাঁদের কেন দেশে অনুপ্রবেশকারী ধরে নেওয়া হচ্ছে। যদি অনুপ্রবেশ হয়, তবে কেন বিএসএফ-কে তার জন্য দায়ী করা হচ্ছে না।

দুর্গাপুরে দাঁড়িয়ে বাংলার যে উন্নয়নের কথা বলেছিলেন মোদি তাকেই পাল্টা সামিরুলের প্রশ্ন, কীভাবে আপনি বাংলার উন্নয়ন করবেন যেখানে আপনার দলের নেতারাই বাঙালিদের রোহিঙ্গা বলে দাবি করে। যদি বাঙালিদের বহিরাগতই মনে করেন বিজেপির নেতারা তবে তাঁদের উন্নয়ন কীভাবে বিজেপির দ্বারা সম্ভব? তৃণমূলও অনুপ্রবেশের বিরোধী। কিন্তু প্রকৃত নাগরিকদের রক্ষার জন্য আপনি কী করেছেন, প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদের। সেই সঙ্গে তুলে ধরেন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে হেনস্থা ও অত্যাচারের শিকার হওয়া বাঙালিদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেননি নরেন্দ্র মোদি।

সাম্প্রতিক সময়ে বারবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বিজেপি নেতাদের বাংলাকে ছোট করে দেখাতে প্রচার করা রোহিঙ্গা তত্ত্ব। সেই তথ্য তুলে তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ প্রশ্ন করেন, আপনার দল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে ধৃতরা সবাই মুসলিম ও রোহিঙ্গা। আপনি কী একবারও তাঁদের পরিচয় দেখার চেষ্টা করেছেন? বাঙালি হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হওয়া মানুষের অসংখ্যা উদাহরণ রয়েছে যাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের, রাজবংশী বা মতুয়া সম্প্রদায়ের। তারাও কী রোহিঙ্গা? নতুন বাংলা গঠনের দাবি করেছেন আপনি। তাহলে সেই নতুন বাংলাতে কী বাংলা ভাষা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে?

বাঙালির মন জয়ে দুর্গাপুরের ভাসনে মা কালি, মা দুর্গার নাম নেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। অথচ সেই বিজেপির সরকারের হাতেই লাঞ্ছনার শিকার বাঙালি মহিলারা। তাঁদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, কীভাবে মা কালী বা মা দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা সম্ভব যখন সেই কালী-দুর্গার শক্তি বহন করা মহিলারাই লঞ্ছিত হচ্ছেন। আশ্চর্যজনকভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নতুনভাবে বাঙালিদের প্রতি লাঞ্ছনা শুরু হয়েছে নরেন্দ্র মোদির বঙ্গ সফরের পরে। এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত কি না, প্রশ্ন সামিরুলের।

আরও পড়ুন: আর কবে? ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি ট্রাম্পের: জবাব চাইল তৃণমূল

বিভেদের রাজনীতি করা প্রধানমন্ত্রীকে যে বাংলার মানুষ চায় না, তা স্পষ্ট করে সামিরুলের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নিরীহ এই বাংলাভাষী ভারতীয়দের পক্ষে তৃণমূল লড়াই চালাচ্ছে। সেই লড়াই জয়ের মধ্যে দিয়েই বাংলা বিরোধীদের বাংলা থেকে বিতাড়নের বার্তা দেন তৃণমূল সাংসদ।

Prime Minister @narendramodi, you came to Bengal and spoke extensively about infiltration. Let me introduce you to a woman named Sweaty Biwi, an Indian citizen from Birbhum—the land of Rabindranath Tagore.
In the video, she shares the painful ordeal she’s going through.Sweaty… pic.twitter.com/fRKVxkSvAU
— Samirul Islam (@SamirulAITC) July 19, 2025
–

–

–
–
–