Friday, November 7, 2025

কোলাহলের অরণ্য’, উৎপল সিনহার কলম 

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

” আমি এমন এক স্থানে বাস করি যেখানে জল নেই কিন্তু রক্ত আছে , যেখানে আকাশ ভরা ড্রোনে , কিন্তু মাটিতে কোনো রুটি নেই । ”

” আমার প্রতিবেশী একটি তাঁবুতে জন্মেছে , আমার বন্ধু একটি তাঁবুতে জন্মেছে , আমি নিজেও একটি তাঁবুতে জন্মেছি , তাহলে আমার সন্তানদের জন্ম কোথায় হবে ? ”

এই লাইনগুলো শুধু ফিলিস্তিনিদের নয় , বিশ্বের সমস্ত শরনার্থীদের অব্যক্ত যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি । অবরুদ্ধ জীবনের প্রতি ক্ষোভ অথচ সহিংস নয় , বরং মানবতার জন্য গভীর আকুতি ।

” আমরা যারা রাস্তায় হাঁটছি ,তারা কখনোই শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যাব না । আমাদের পদধ্বনি এখনও প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের যুদ্ধের কাহিনী বলে যাবে । ”

ধ্বংসাবশেষ , শরনার্থী শিবির , ক্রমাগত অবরোধ , বিপর্যস্ত মানবতা , জীবনের অপচয় , মনুষ্যত্বের অবমাননা , মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ইত্যাদির মধ্যেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেন না কবি মোসাব আবু তোহা ।

” গাজায় , আমরা রুটির স্বপ্ন দেখি , স্বাদের জন্য নয় , কিন্তু আমাদের ক্ষুধার্ত হাতে এর গুরুত্বের জন্য । ”

” ধ্বংসস্তূপের নিচে আমি একটি নোটবুক খুঁজে পেলাম। এটি একটি বালকের  , যে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতো , ধ্বংসস্তূপ তার স্বপ্নকে চাপা দিতে পারে নি ।”

রক্তে লেখা এইসব কবিতা মানবতার পুণর্জন্মের প্রতীক।

” আমি স্বপ্ন দেখি একটি আকাশের , যেখানে ড্রোন নেই । একটি আকাশ , যেখানে শিশুরা মেঘ আঁকে , বোমার ভয়ে পালায় না । ”

” ছাইয়ের মধ্যেও একটি ফুল ফুটতে পারে । সবচেয়ে অন্ধকার রাতেও একটি মোমবাতি জ্বলে উঠতে পারে । ”

আবু তোহা ( ১৭ নভেম্বর , ১৯৯২ ) জন্মেছেন গাজা উপত্যকায় । তিনি একজন ফিলিস্তিনি কবি । তাঁর কবিতায় ফিলিস্তিনিদের দুর্গতি , বিপন্নতা ও সঙ্কট , রোজকার জীবন সংগ্রাম এবং মানবতার জন্য তাঁদের আকাঙ্খার ছবি মূর্ত হয়ে ওঠে ।

” আমাদের সন্তানদের মুখের ক্ষতচিহ্ন খুঁজে বেড়ায় তোমাদের । আমাদের শিশুদের কাটা যাওয়া পা ধাওয়া করে তোমাদের পিছন পিছন । ”

এ তো কবিতা নয় , যেন আমাদের শান্তিসুখ লুটে নেওয়া যুদ্ধবাজ হানাদার বাহিনীর প্রতি অভিশাপ।

” আমি ঘরের দরজা খুলে রাখি , যাতে আমার বইয়ের সব শব্দ তাদের শিরোনাম , লেখক আর প্রকাশকের নাম পালাতে পারে বোমার শব্দ শুনলেই । ”

যুদ্ধের চূড়ান্ত বিভৎসতায় এইসব বুকচেরা বিলাপের কি অসামান্য অভিঘাত ! তবু ভরসা জাগে , এই অন্তহীন শোকগাথার মধ্যেও ঝলসে ওঠে মানবসম্পর্কের অনির্বাণ আলোকরশ্মি ।

বিমান হামলা চালিয়ে খুন করা হয়েছিল আরেক ফিলিস্তিনি নারী কবি ও ঔপন্যাসিক , যাঁর নাম আবু নাদা , যিনি লিখেছিলেন , ” রকেটের আলো ছাড়া গাজা অন্ধকার , বোমার শব্দ ছাড়া গাজা নীরব , প্রার্থনা ছাড়া আর সবকিছুই ভয়ঙ্কর , শহীদের আলো ছাড়া সবকিছুই কালো । শুভরাত্রি , গাজা ! ”

হেবা আবু নাদা নিহত হন । কিন্তু মোসাব আবু তোহা ইসরাইল সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া সত্ত্বেও এখনও বেঁচে আছেন । পশ্চিমের সংবাদপত্রগুলো তাঁর গ্রেপ্তার ও নির্যাতিত হওয়ার খবর ছাপানোর ফলে ইসরাইলের সেনাবাহিনী তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় । তবে তাঁর লেখা কিন্তু থামে না ।

” আমার শহরের রাস্তাগুলোর নাম নেই , যদি কোনো ফিলিস্তিনি নিহত হয় স্নাইপারের গুলিতে বা ড্রোন হামলায় , আমরা তখন তার নামে সড়কের নাম রাখি । আমাদের শিশুরা সবচেয়ে ভালো গুনতে শেখে ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি বা স্কুলের সংখ্যা গুনতে গিয়ে , কত বাবা-মা হতাহত হলো বা জেলে গেল সেই হিসাব রাখতে গিয়ে । ”

আরও পড়ুন – চড়ছে উন্মাদনার পারদ, একমঞ্চে একসঙ্গে ধরা দেবেন তো দেব-শুভশ্রী!

spot_img

Related articles

একটি কঙ্কালের অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনি

জয়িতা মৌলিক ১২৯৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) লেখা 'কঙ্কাল' ছোটগল্পটির মঞ্চনাট্যরূপ দেখলাম ১৪৩২ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে,...

KIFF: চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনেই সত্যজিৎ স্মরণ, নন্দনে শ্রদ্ধার্ঘ্য ঋত্বিক ঘটককে

মহানগরীতে সিনে উৎসবের মেজাজ, শুরু হয়ে গেল ৩১-তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (31st Kolkata International Film Festival)। বৃহস্পতিবার...

রাজারহাটে যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে দুর্ঘটনা, আহত বহু

শুক্রবার সাত সকালে রাজারহাটের হাড়োয়া খালি উল্টে গেল যাত্রীবোঝাই বাস (Bus Accident in Rajarhat)। বেড়াচাঁপার দিক থেকে করুণাময়ীর...

আজ স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের ফলপ্রকাশ

সুপ্রিম রায়ে চাকরি হারানো থেকে এসএসসির (School Service Commission) নতুন করে পরীক্ষার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এবার রেজাল্টের...