সুপর্ণা দে
মহালয়ার দিন থেকে কলকাতার বড় পুজোগুলিতে (kolkata Puja) উপচে পড়া ভিড়। তবে সজাগ প্রশাসন। নেই কোনও দুর্ঘটনার খবর। পুলিশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় উচ্চ প্রশংসিত। আর এখন কলকাতার পুজো মানেই নতুন কিছু দেখা। প্রত্যেকটি পুজো আলাদা আলাদা বার্তা দেয়। কেন মানুষ প্রত্যেকটি বড় পুজো দেখতে উৎসাহী? ঝড়-বৃষ্টি কোনো কিছুই মানুষকে পুজো প্যান্ডেল দেখতে যাওয়া থেকে আটকাতে পারে না। যে প্যান্ডেলগুলিতে জনপ্লাবন হয়, তার মধ্যে যেমন-শ্রীভূমি, নলিন সরকার স্ট্রিট, শিকদার বাগান, বাবুবাগান, সেলিমপুর, একডালিয়া এভারগ্রিন, যোধপুর পার্ক সর্বজনীন, মুদিয়ালি, কুমারটুলি পার্ক সর্বজনীন, সিমলা ব্যায়াম সমিতি, চালতা বাগান সর্বজনীন, রামমোহন সম্মিলনী, কলেজ স্কোয়ার, কালীঘাট সঙ্ঘশ্রী, বেহালা নতুন দল। কিন্তু এর মধ্যে বড় প্রশ্ন হল কলকাতার বড় পুজোগুলিতে কী এমন আছে যে জনস্রোত বয়ে যায়? ভিড় কীভাবে টানতে হয়? এর ব্যাখ্যা মিলেছে। হাতিবাগান সর্বজনীন, সুরুচি সংঘ, কাশী বোস লেন, বেলেঘাটা ৩৩ পল্লীর কর্মকর্তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন-ফুচকা খেলেন, সেলফি তুললেন: নাগেরবাজারে ‘প্যান্ডেল হপার’ মুডে অভিষেক

হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্যোক্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সভাপতি শাশ্বত বসু জানান, “কলকাতার দুর্গাপুজো (kolkata Puja) আজ বিশ্বজনীন। কলকাতার দুর্গাপুজো আজ শুধু উৎসব নয়, গত ১০ দিন ধরে ওপেন হার্ট ফেস্টিভ্যাল চলছে, মানুষের একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কলকাতা পুলিশ, আমাদের পুজো কমিটিগুলিকে সাহায্য করছে, সেই কারণে মানুষের এত ভিড়। সবমিলিয়ে একটা ভালো পরিবেশ। রাস্তায় জ্যাম হবেই কিন্তু ট্রাফিক মুভমেন্ট ভালো আছে। কলকাতায় একটা ভালো পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং মানুষ বুঝতে পারছে যে তারা নির্বিঘ্নে ঠাকুর দেখতে পারবে। হাতিবাগান সর্বজনীন গঙ্গার ঘাট নিয়ে কাজ করেছে। ঘাট নিয়ে আগে কলকাতায় দুর্গপুজোয় কাজ হয়নি। কলকাতার ঘাটগুলির আলাদা ঐতিহ্য, তৃণমূল সরকার আসার পর কলকাতার ঘাটগুলি আরও পরিবর্তন হয়েছে। মিলিনিয়াম পার্ক, বাবুঘাট সমস্ত ঘাটগুলি আরও সুন্দর হয়েছে।”

সুরুচি সংঘের পুজো উদ্যোক্তা তথা ফেডারেশন অফ টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্কাস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন,”আমাদের পুজোর ভিড়ের তেমন কোনও ম্যাজিক নেই। আমরা প্রতি বছরই মানুষের কাছে বার্তা দিই। যা সামাজিক বার্তা হয়। এ বছর বার্তা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আহুতি। এই বার্তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই এত মানুষ আমাদের পুজো মণ্ডপে আসছেন। যে বার্তা দিচ্ছেন সেটা সমাজের সঙ্গে কতটা প্রাসঙ্গিক এবং সময়ের সঙ্গে কতটা প্রাসঙ্গিক সেটা করলে মানুষ আসবেন, আশীর্বাদ করবেন।”

কাশীবোস লেন পুজোর সাধারণ সম্পাদক সৌমেন দত্ত জানান,”আমরা এমন একটা বিষয় বেছে নিয়েছি যা সব মানুষই এটা পছন্দ করবে। দুর্গাপুজো মানে রঙের উৎসব, মানুষের উৎসব, মজা থাকবে। দর্শনার্থীরা আনন্দ পাচ্ছেন। আর যা সহজলভ্য। একইসঙ্গে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও খুব ভালো সমর্থন পাচ্ছি। সেই কারণে মণ্ডপে আরও ভিড় বাড়ছে।”

আরও পড়ুন-মহাঅষ্টমীতে বেলুড় মঠে ঐতিহ্যমণ্ডিত কুমারী পূজা, ভক্তদের ঢল

বেলেঘাটা ৩৩ পল্লীর কনভেনার হিমাদ্রি ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যে চাহিদা-অন্ন, বস্ত্র এবং বাসস্থান। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। কারণ আমরা যাতে আমাদের পরিবারকে ভালো রাখতে পারি, বেঁচে থাকতে হলে অন্নের প্রয়োজন, সভ্য সমাজে থাকতে হলে বস্ত্রের প্রয়োজন এবং আমাদের মাথার ওপর ছাদ না থাকলে কোনও কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারব না। এটা শুধু নিজের পরিবারের জন্য নয়, গোটা পৃথিবীর সকলের জন্য এটা জরুরি।

_

_

_
_