Tuesday, December 16, 2025

বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় জঙ্গলরাজ কায়েম হয়েছে, প্রতিবাদে আগরতলায় তৃণমূলের প্রতিনিধিরা

Date:

Share post:

বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা (Tripura) আজ জঙ্গলরাজে পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে এক সন্ত্রাসের নাট্যমঞ্চে। পুলিশের সামনে যেভাবে দক্ষিণী সিনেমার কায়দায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তা শুধু নিন্দনীয় নয়, অরাজকতার নামান্তর। তার প্রতিবাদেই বুধবার ত্রিপুরায় রওনা দেয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে গর্জে উঠলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তৃণমূলের সাফ কথা, বিজেপি শাসিত রাজ্যে জঙ্গলরাজ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর রাজনৈতিক হিংসা পরিণত হয়েছে শাসনের হাতিয়ারে।

তৃণমূল (TMC) জানিয়েছে, মঙ্গলবার আগরতলায় যা ঘটেছে, তা বিজেপি নামক দলটার রাজনৈতিক অবক্ষয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিজেপির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। আর রাজ্য পুলিশ সেখানে নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থাকে। বিরোধী-স্বর দমন ও গণতন্ত্রকে মুছে ফেলার জন্য এক সুনির্দিষ্ট আতঙ্কের অভিযানের অংশ ছিল এটি। এই পরিস্থিতিতে আগরতলায় দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিবেশী দল পাঠানো হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, সায়নী ঘোষ (Sayani Ghosh), সুস্মিতা দেব, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) এবং যুব নেতা সুদীপ রাহা। আগরতলায় পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরা সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াবেন, পরিস্থিতির সার্বিক মূল্যায়ন করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের কাছে তুলে ধরবেন। এ প্রসঙ্গে সাপ কথা, তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে উঠেছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, এবং গণতন্ত্র যখনই বিপন্ন হয়েছে, আমরা সেই লড়াই অব্যাহত রেখেছি। বিজেপির রাজ্যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস যতই বাড়ুক না কেন, আমাদের সংকল্পের আগুন নিভিয়ে দেওয়া যাবে না।

এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, ত্রিপুরায় আমাদের রাজ্য দফতরে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে হামলা হয়েছে বলে বিজেপির কেউ কেউ জাস্টিফিকেশন দিচ্ছেন, সেই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও সংযোগ নেই। নাগরাকাটায় বিজেপির সাংসদ এবং বিধায়কের সঙ্গে যে কুৎসিত ব্যবহার করেছে তা তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে নিন্দা করেছেন। তিনি খগেন মর্মুকে দেখতে পর্যন্ত গিয়েছেন। মানুষের যদি ক্ষোভ থাকে তাতেও কাউকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো সঠিক নয়। আর বিজেপিকেও দেখতে হবে মানুষ কেন তাদের উপরে ক্ষেপে আছে। বিজেপি নেতারা বারবার বলবেন, আমরা দিল্লিকে বলেছি ১০০ দিনের টাকা দেবেন না, আবাসের টাকা দেবেন না। আবার বাংলা ভাষায় কথা বললে বাংলাদেশি বলে পুশব্যাক করানোর চক্রান্ত চলবে। এইসব কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। বিজেপি নেতারা ওই দিন নাগারাকাটা গিয়েছিলেন কোনও ত্রাণ নিয়ে যাননি। শুধুমাত্র ফটোশুট করতে গিয়েছেন, মানুষ রেগে গিয়েছে। কিন্তু তাদের রাগের বহিঃপ্রকাশের পদ্ধতি আমরা সমর্থন করি না। তারপরও যেভাবে ত্রিপুরায় পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে আমাদের টিম সেখানে যাচ্ছে। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা ত্রিপুরায় ভালো নয়। অভিষেকের কনভয়ে হামলা হয়েছে। সায়নী ঘোষকে শুধুমাত্র আটক করা নয় যেভাবে মাঝরাতে তাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা হয় দক্ষিণী সিনেমার কায়দায়, তা ভয়ঙ্কর। আমরা সেদিন কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরেছি। আমরা ডেডবডি হয়েও ফিরতে পারতাম। তা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এবারও তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে শুনে যেভাবে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট চলছে, তা ভয়াবহ। ত্রিপুরার সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে বিপ্লব দেব থাকাকালীন। এখন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারও আমরা দেখেছি পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে হামলাকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা দলের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলব। আরও কিছু কর্মসূচি দল করতে নির্দেশ দিয়েছে, সেগুলিও করব।

সায়নী ঘোষ বলেন, যে বিজেপি সব সময় তৃণমূল কংগ্রেসকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জ্ঞান দেয়, তাদের রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা শোচনীয় অবস্থা। দলের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে কী ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা সবাই জানেন। এখন আমাদের পার্টি অফিসে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের কর্মীরা ওখানে আছে। আমরা তাঁদের বার্তা দিতে যাচ্ছি, তাঁরা একা নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ-সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেস তাঁদের পাশে রয়েছে। নাগরাকাটায় খগেন মুর্ম, শংকর ঘোষদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ। তারপরও আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন তা শিক্ষণীয়। নাম মমতা কাজটাও মমতার সঙ্গেই তিনি করেন। তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে ভয় পায় না। যেকোনও দলের প্রতিনিধিরা যেকোনও রাজ্যে যখন খুশি যেতে পারেন। বিজেপির প্রতিনিধিরাও রাজ্যে আসেন, অক্ষত অবস্থায় এখানে থাকেন। আমরাও বিজেপির ত্রিপুরায় যাচ্ছি, আগামী সময় যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়, তার দায়িত্ব সম্পূর্ণ বিজেপি সরকারের। শুরু থেকেই সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে হুমকি চলছে, তা ভয়াবহ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন দলীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন। কোনওরকম এভিডেন্স ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেসকে দাগিয়ে দিয়েছেন। এ-প্রসঙ্গে কুণাল আরও বলেন, ওড়িশায় বিজেপি সরকার, সেখানে কী করে বিজেপি নেতা খুন হলেন, তার বেলায় তো কোন টুইট থাকে না প্রধানমন্ত্রীর।

spot_img

Related articles

মোটা অঙ্কের বাজেট নিয়ে মিনি নিলামে নামছে কেকেআর, দল পেতে পারেন ঈশ্বরণ

মঙ্গলবার আবুধাবিতে ২০২৬ সালের আইপিএলের মিনি নিলাম(IPL Mini Auction)। ৭৭টি জায়গার জন্য নিলামে উঠবেন ৩৫০ ক্রিকেটার। এই ৩৫০...

বাংলা না কি জ্বলছে! গদি মিডিয়ার অপপ্রচারকে ধুয়ে দিলেন সাধু থেকে আমজনতা

বাংলা না কি জ্বলছে! এখানে খুন-জখমের রাজনীতি চলছে! আক্রান্ত হিন্দু! গদি মিডিয়া এই খবর করতে এসেছিল কলকাতায় আর...

রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা! কেন্দ্রের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে লোকসভায় সোচ্চার তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে বাগে আনতে না পেরে এবার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো লঙ্ঘন করে...

মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা! রাজ্যসভায় বিজেপির পর্দাফাঁস সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের

পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মতুয়াকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছে মোদি সরকার ও বিজেপি—এমনই অভিযোগ তুলে সোমবার...