মার্কিন শুল্কের দেড় মাস: দক্ষিণের শহরে কাজ হারালো ৬ লক্ষ পোশাক শ্রমিক

Date:

Share post:

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পরে ভারতের একাধিক শিল্প ব্যাপক ক্ষতির মুখে। তার মধ্যে হিরেসহ গয়না শিল্প যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে পোশাক শিল্পও। মার্কিন বহু ব্র্য়ান্ডের পোশাকই (branded garments) ভারতে তৈরি হয়ে আমেরিকায় গিয়ে শুধুমাত্র লোগো লাগিয়ে আবার ভারতেই এসে বিক্রি করে মুনাফা লুটত মার্কিন পোশাক বিক্রেতারা (garment merchant)। তবে তাতে দক্ষিণ ভারতের একাধিক শহরের বহু ছোট বড় কারখানা থেকে পোশাক শিল্পের (garment industry) সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক, কর্মী, মালিকদের স্থায়ী রোজগারের দিশা মিলত। ছবিটা বদলে গেল মাত্র দেড় মাসে। তামিলনাড়ুর তিরুপুরের (Tiruppur) মতো শহরে পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ৬ লক্ষ কর্মী কাজ হারালেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের (migrant labour) ফিরে যেতে হল নিজেদের রাজ্যে।

তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) তিরুপুর পুরোপুরিভাবে পোশাক তৈরির হাব। এখানে তৈরি পোশাক ওয়ালমার্ট, টার্গেট থেকে হফম্যানের মতো ব্র্য়ান্ডের কাছে বিক্রি হয়। ফলে রোজগার এখানে ডলারে। যে কারণে এই শহরকে ডলারের শহর বলেও অভিহিত করা হয়। শহরের বছরে সর্বমোট রোজগার আনুমানিক ৩২ হাজার কোটি। ২৭ অগাস্ট ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক (tariff) আরোপ করার পর গোটা ছবিটাই এখন বদলে গিয়েছে। গোটা শহরে উৎপাদন কমে গিয়েছে ২৫ শতাংশ।

তিরুপুরে পোশাক শিল্পে কাজ করতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ভিন রাজ্য়ের পরিযায়ী শ্রমিকরাও যোগ দেন। তবে স্থানীয় বা পরিযায়ী – কোনও শ্রমিকের সঙ্গেই কোনও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় না। কার্যত অসংগঠিত শ্রমিক হিসাবেই তাঁরা কাজ করেন। তাতে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা রোজগার হত তাঁদের। কিন্তু মার্কিন শুল্ক (US tariff) আরোপ হওয়ার পরে মালিকপক্ষ এক ধাক্কায় কাজের সময় কমিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মজুরিও (salary)। তাঁদের দাবি, এভাবে ব্যয় সংকোচন না করলে তাঁরা টিকে থাকতে পারবেন না। অন্যদিকে প্রতিটি পোশাকে কাজের উপর রোজগার করতেন শ্রমিকরা। কাজের সময় কমিয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রোজগারও কমেছে। গত দেড়মাসে ২০ হাজার টাকার রোজগার কমে প্রায় ১০ হাজারেরও কম প্রতি মাসে হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে এভাবেও বহু শ্রমিক কাজে টিকে রয়েছেন। কিন্তু এদের থেকেও দুরবস্থা প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিকের। যাদের কোনও নোটিশ না দিয়েই কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মালিক পক্ষ দাবি করছে, এই পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের (recession) পথে যেতে হয়েছে। এমনকি তাঁরা পরিকল্পনা করেই ফেলেছেন, আমেরিকায় রফতানির (export) জন্য যে পোশাক তারা বানাতেন, সেই পোশাকের পরিমাণ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেবেন। তবে অন্তত কোম্পানিগুলির আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ভারতে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান: শাহবাজের মুখোশ খুলে দিলেন ট্রাম্প

যে শ্রমিকরা আচমকাই কাজ হারালেন, তাঁরা সেই মূল্যের তো বটেই, ন্যূনতম মজুরির কাজও পাচ্ছেন না। পোশাক শিল্প তো দূরের কথা, তাঁদের রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হচ্ছে। এক একটি ইউনিটে একসঙ্গে ৬০ জন করে শ্রমিকেরও (garment worker) কাজ গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে। এই পরিস্থিতিতে সরকার শ্রমিকদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না, অভিযোগ শ্রমিকদের। এমনকি মালিক পক্ষও অভিযোগের আঙুল তুলছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে। প্রায় দেড় মাস ধরে লাগাতার অস্তিত্ব সংকট কাটাতে চাওয়া শিল্পের জন্য এখনও কোনও ভাবনা চিন্তা করে উঠতে পারেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

spot_img

Related articles

SIR-এ ভিন রাজ্যে থেকেও নাম তোলা যাবে: পরিযায়ী শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা!

গোটা দেশের বিরোধী দলগুলির প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনী বা এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া দেশ জুড়ে চালু...

কত ধরনের বিচিত্র গাছ: খুঁজতে সুভাষ সরোবরে বৃক্ষসুমারি

রবীন্দ্র সরোবরের (Rabindra Sarobar) পর এবার সুভাষ সরোবরে (Subhash Sarobar) শুরু হচ্ছে বৃক্ষসুমারি। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)...

বিজেপির ত্রিপুরায় ‘বহিরাগত’ই বিধায়ক: অনুপ্রবেশ-আন্দোলনের নেতাই বাংলাদেশি!

বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজেপির মদতে একাধিক বিজেপি রাজ্যে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই ধরনের আন্দোলনে...

কেরলে নিহত পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ নিয়ে গ্রামে পৌঁছল তৃণমূল নেতৃত্ব

রাজ্যে হোক বা রাজ্যের বাইরে। বাংলার মানুষের পাশে প্রতিনিয়ত রয়েছে বাংলার প্রশাসন ও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কেরলেয় নিহত...