জয়িতা মৌলিক
১২৯৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) লেখা ‘কঙ্কাল’ ছোটগল্পটির মঞ্চনাট্যরূপ দেখলাম ১৪৩২ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে, ‘কনকচাঁপা নামে।’ মূলত বাংলা অপেরার উদ্যোগ, সাংসদ পার্থ ভৌমিক (Partha Bhoumik) ও তাঁর নাট্যসহকর্মীদের নতুন দল। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে (Academy of fine arts) দেখা নাটকটি নজর কাড়ল নানা দিক থেকে।

ক) রবীন্দ্র আমেজ সঠিক রেখে নাট্যরূপ বড় কম কথা নয়। চরিত্র, ভাবনা, সমাজ, পোশাক, ভাষা, সবেতেই রবীন্দ্রসৃষ্টিকে যথাযথ চালচিত্রে পুনর্গঠন কঠিন কাজ, এঁরা সেটা ঠিকঠাকভাবে করেছেন।


খ) নাটকের মঞ্চে ভিডিও ব্যবহার, স্ক্রিনেও চরিত্রদের পারফরমেন্স ও আউটডোর ব্যবহার, এই পরীক্ষা সফল। ফলে বৈচিত্র বেড়েছে, মঞ্চে নদী, পাহাড়, প্রকৃতির ছোঁয়া লেগেছে। রক্ষণশীলরা বলতে পারেন মঞ্চের নিজস্বতা আহত হল কিনা। কিন্তু সময়োপযোগী পরীক্ষনিরীক্ষা তো প্রয়োজন, বিশেষ করে সেই নতুনত্ব যদি ভালো লাগার মত হয়।

গ) আলো, মঞ্চভাবনা, শব্দ, এবং বিশেষভাবে মঞ্চে বৃষ্টিকণা, দর্শক ভিস্যুয়ালি বৈচিত্রের উপাদান পাবেন। নাটক শেষের পরেও আলোচনা চলেছে বৃষ্টিকণা এলো কীভাবে? এটা প্রযোজক পরিচালকদের কৃতিত্ব।

ঘ) রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার অপূর্ব। যেভাবে বারবার গানের ব্যবহার, দৃশ্যমত বাছাই এবং প্রয়োগ, কোনোটি রেকর্ডেড, স্ক্রিনে ভিডিও অ্যালবামের মোড়কে, কোনোটি মঞ্চেই, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

ঙ) অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মাতিয়ে দিয়েছেন। সেই অর্থে সিনিয়ররা এখানে নামেননি। নতুনদের ব্যবহার করেছেন। যাঁরা করলেন, প্রশংসা প্রাপ্য। কনকচাঁপা দেবলীনা সিংহ অনেকরকম শেড ফুটিয়ে তুলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। সূত্রধর যুবক সায়ন্তন মৈত্রর কথাও আলাদা করে বলতে হয়। দাদার চরিত্রে ঋক দেব যথাযথ। বাকি ভূমিকায় অনুরণ সেনগুপ্ত, অতনু মিত্র, দেবাশিস চ্যাটার্জিসহ প্রত্যেকে সাবলীল।


নির্দেশক রঞ্জন দত্ত ও সহ নির্দেশক দেবযানী সিংহ, নেপথ্যটিম গোটা প্রযোজনাকে সমৃদ্ধ করেছে। গৌতম রায় চমৎকার নাট্যরূপ লিখেছেন। কঙ্কাল চমৎকারভাবে তার অপূর্ণ প্রেমের গল্প শুনিয়েছে। কিছু কিছু মুহূর্ত দর্শককে আবেগে ভাসানোর মত। সব মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের গল্প থেকে একটি ভারি সুন্দর নাটক। এই প্রবণতা ইতিবাচক। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প থেকেও যদি এভাবে উন্নতমানের নাটক শুরু হয়, তাতে নাট্যমঞ্চে ভালো কন্টেন্ট এবং এক্সপেরিমেন্টের আরেকটি দিক খুলে যাবে।

–

–

–
–


