রায়পুরে রাজকীয় শতরান ঋতুরাজের (Rituraj Gaikwad),ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিতে অপ্রতিরোধ্য বিরাট (Virat Kohli)। সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডে-তে ভারতীয় দলের (Ind vs SA) পারফরমেন্স কেমন তা শুরুর এই একটা লাইনেই পরিষ্কার বোঝা যায়। শিশির ফ্যাক্টরকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন বাভুমা। হয়তো তিনি খুব একটা ভুল নয়, কারণ ৪০ ওভারের পর থেকে পিচ বেশ কিছুটা স্লো হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে মহাকাব্য রচনা করে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া (Indian cricket team)। সৌজন্যে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও বিরাট কোহলি অনবদ্য দুই শতরান। প্রথমজন পরে ব্যাট করতে নেমে আগে সেঞ্চুরি করে আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। দ্বিতীয় জনও সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারেননি। কিন্তু স্কোরবোর্ড ততক্ষণে বলছে ৪০ ওভারে ভারত ২৮৫, উইকেট হারিয়েছে মাত্র চারটি। ক্রিজে দুরন্ত ছন্দে কে এল রাহুল (KL Rahul)। ৭-এর উপর ভারতের রান রেট।
ভারতের জন্য এদিন শুরুটা খারাপ হয়নি। প্রথম দু ওভারের মধ্যে ১৩ রান এক্সট্রা দিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। চালকের আসনে শুরু থেকেই ছিল নীল জার্সির প্লেয়াররা। হিটম্যানের (Rohit Sharma) শো অবশ্যই এদিন সেভাবে দেখা যায়নি। মাত্র ১৪ রানেই আউট হয়ে যান তিনি। কিন্তু তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ধৈর্য আর অভিজ্ঞতার যে নিপুণ দক্ষতা দেখালেন বিরাট কোহলি (VK) তাতে নেটিজেনদের প্রশ্ন থাকবে গৌতম গম্ভীরের কাছে যে এই প্লেয়ার ছাড়া কি ভারতীয় দলকে ভাবা যায়? অবশ্য সেটাই কাঙ্ক্ষিত ছিল। যেখানে প্রতিপক্ষ পর্যন্ত স্বীকার করছে রোহিত-বিরাট দলে আসায় ভারতীয় টিম শক্তিশালী হয়েছে সেখানে কোচের ব্যক্তিগত পছন্দের প্রাধান্যে একটা গোটা টিমকে নিয়ে ছেলে খেলা করা কোনোভাবেই ক্রীড়া-প্রেমীরা মেনে নেবেন না। এদিন যেন গম্ভীরকে আরও একবার জবাব দিলেন কোহলি। পিচের অবস্থা বুঝে স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে শুরু করেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ নিয়ে এদিন মাঠে নামেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। প্রথম থেকেই রাজকীয় ছন্দে ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের ক্যাপ্টেন। সাউথ আফ্রিকা-A দলের বিরুদ্ধে দুরন্ত খেলেছিলেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিটা করেই ফেললেন। আর সেটা হলো বিরাটেরও আগে। প্রয়োজন মতো বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারির কম্বিনেশনে নিখুঁত নির্বাচন ঋতুরাজের। রাঁচিতে বসে হয়তো মুচকি হাসবেন মহেন্দ্র সিং ধোনিও। তাই বিরাটের লাইমলাইটে অচিরেই ভাগ বসিয়ে দিলেন তিনি। তাই ১০৫ রান করে জানসেনের বলে ঋতুরাজ আউট হতেই পুরো স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানালো।


টানা দু’টি এক দিনের ম্যাচে শতরান কোহলির। এক দিনের ক্রিকেটে ৫৩তম শতরান পূর্ণ করলেন ৯০ বলে। কিং কোহলির ক্যারিশমা এখনও অটুট, অনবদ্য। রাঁচির মতো পাটা পিচ না হলেও উইকেটে টিকে থাকতে পারলে যে রান আসবে সে কথা ব্যাট করতে নেমেই বুঝে গেছিলেন কোহলি। তাই প্রত্যেকটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন। যেখানে ২ রান হওয়াটাও কষ্টকর সেখানে অবলীলায় মিস ফিল্ডের সুযোগ নিয়ে তিন রান নিলেন বিরাট। ৩৭ বছর বয়সটা যে তাঁর অধ্যাবসায়ের কাছে কিছুই নয় সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন গৌতম গম্ভীরকে। রাঁচিতে ঠিক যেখানে শেষ করেছিলেন, রায়পুরে সেখান থেকেই শুরু হয় কোহলি ম্যাজিক। ৮৪ সেঞ্চুরির ‘কিং’ মাঠের সব প্রান্তে অবলীলায় বল পাঠিয়েছেন। কখনও তা গড়িয়ে বাউন্ডারির দড়ি পেরিয়েছে, কখনও বা ছুঁয়ে গেছে আকাশ।এই নিয়ে টানা দু’বার সেঞ্চুরি হাঁকালেন ১১ বার। এই নজির বিশ্বের আর কোনও ব্যাটারের নেই। এদিন একগুচ্ছ রেকর্ড গড়লেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি এই মুহূর্তে একদিনের ক্রিকেটের এক নম্বর রাজা। শেষ মুহূর্তে রাহুলের ৬৬ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংসে ভারত ৫০ ওভারে করল ৩৫৮।


পুনশ্চ, আজ বিরাট-ঋতুর দাপটে সেভাবে হয়তো প্রচারের আলো পড়বে না, কিন্তু যেভাবে অধিনায়কোচিত পারফরম্যান্স করে গেলেন রাহুল সেটা মনে রাখার মতো। শুভমন গিলের (Subhman Gill) পরিবর্তে একদিনের ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব পুরোপুরিভাবে কে এল রাহুলকে (KL Rahul) দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখতে পারে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

–

–

–

–

–

–


