‘প্রতিদান’-লিচের জন্য আজীবন চশমা ফ্রি

ইংরেজ সাংবাদিক অলিভার হারবোর্ড লিখেই ফেললেন, “আগামী এক বছর স্পেকসেভারস-এর প্রতিটা বিজ্ঞাপনে যদি লিচকে না দেখা যায়, তাহলে মনে করব, এই প্রথিবীতে যোগ্য বিচার হয় না।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে একটা বাক্য। “বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা এক রান।”

রবিবাসরীয় লিডসের বাইশ গজে মহাকাব্য লিখে যদি মহানায়ক হয়ে ওঠেন বেন স্টোকস, তাহলে পার্শ্বনায়ক যে অবশ্যই জ্যাক লিচ। ক্রিকেট দুনিয়া অন্তত এ কথা একবাক্যেই স্বীকার করে নিচ্ছে। অ্যাশেজে তৃতীয় টেস্ট প্রায় যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েই উঠেছিল ইংরেজদের কাছে। যদি না ওই ‘মিরাকল’ ঘটত। হ্যাঁ, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতই ক্রিকেট ‘আনসার্টেন গেম’ হোক, রবিবারের ঘটনা মিরাকল-ই বটে!

কেমন যেন সবকিছু ম্যাজিক হয়ে গিয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছে। বেন স্টোকস কেমন যেন ‘অতিমানব’ হয়েই আতলান্তিকের অতলে তলিয়ে যাওয়া অনুভূতিকে টেনে তুলে পূর্ণতা দিয়ে গেলেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। আর তাঁর অপরাজিত ‘ম্যাচ উইনিং’ সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে নিতে ক্রিকেট বিশ্ব যেন অস্ফুটে বলতে লাগল, ‘লিচ, সেলাম তোমায়।” শেষ উইকেটে ব্যাট করতে এসে জ্যাক লিচ করলেন হয়তো ১৭ বলে এক রান, কিন্তু সেই ইনিংসটিও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনার আলোকমালায় সাজানো থাকল। ওঁর সঙ্গত না থাকলে কোথায় স্টোকসের সেঞ্চুরি! কোথায় বা ইংরেজদের অসাধ্যসাধনের বিজয়োল্লাস!

উল্টোদিক থেকে ধেয়ে আসছে প্যাটিনসন-কামিন্স-হ্যাজেলউডদের একেকটা আগুনে ডেলিভারি। আর প্রায় প্রতিটা বলের আগেই চশমা খুলে তা মুছে নিচ্ছেন স্টোকসের ‘রক্ষাকর্তা’ জ্যাক লিচ। ব্যাট হাতে পাক্কা এক ঘণ্টা ক্রিজে ছিলেন ইংল্যান্ডের বাঁ হাতি অর্থোডক্স বোলারটি। অজিদের একেকটা ডেলিভারি সামলানো তো নয়, যেন গোটা দেশের অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে নিয়ে ইংরেজদের বাঁচিয়ে রাখছিলেন। প্রায় প্রতিটা বল সামলানোর আগেই নিজের চশমা মুছে যেন লক্ষ্য স্থির রাখতে মরিয়া ছিলেন লিচ। তা নাহলে যে প্যাট কামিন্সের ৯০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা বলগুলোর একটা যে কোনও মুহূর্তে কোমায় থাকা ব্রিটিশদের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিত।

বিবিসি-র ক্রীড়া সাংবাদিক ট্যুইট করেন, “কেউ লিচের চশমাটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখার ব্যবস্থা করে দাও।” তবে লিডসের ঐতিহাসিক ম্যাচশেষে মহানায়ক বেন স্টোকস কিন্তু ভুলে যাননি বাইশ গজে সতীর্থ লিচের ‘অতিপ্রাকৃতিক’ অবদান। লিচ যে কোম্পানির চশমা পরেন, সেই ‘স্পেকসেভারস’-কে উদ্দেশ্য করে স্টোকস ট্যুইট করেন, “স্পেকসেভারস, আপনারা একটা কাজ অন্তত করুন। বাকি জীবনের জন্য বিনামূল্যে আপনারা লিচকে চশমা সরবরাহ করুন।” চশমা প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফে সে ট্যুইটের জবাব আসতে দেরি হয়নি।

সদম্ভে স্পেকসেভারস-এর পাল্টা ট্যুইট, “আমরা কথা দিচ্ছি। লিচকে আজীবন বিনামূল্যে চশমা দেব আমরা।”

Previous articleজগন্নাথের কাণ্ড দেখুন!
Next articleসারদা কাণ্ডে সিবিআই দফতরে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন