কোমা-রোগীর ওষুধ ‘মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’! গবেষণা চলছে দিল্লির লোহিয়া হাসপাতালে

এই পরীক্ষা ‘সফল’ হলে আপনার পারিবারিক পুরোহিত বা গুরুদেব-ই আপনার চিকিৎসক হতে পারেন। তাঁকে শুধু কিছু মন্ত্র জানতে হবে।

দিল্লির লালবাহাদুর শাস্ত্রী রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে কোমায় যাওয়া রোগীদের কানে 7 দিনে সওয়া লক্ষ বার ‘মহামৃত্যুঞ্জয়’ মন্ত্র শোনাচ্ছেন। এতেই রোগীরা ফিরতে পারেন কোমা থেকে। এমনই দাবি মাথাচাড়া দিয়েছে ওই হাসপাতালে। ‘সিরিয়াস গবেষণা’ চলছে। এর পিছনে আছেন হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের গবেষক অশোক কুমার। তিনি বিশ্বাস করেন, রাম-সেতু তৈরির আগে রাম ‘মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’ পড়েছিলেন। সেই মন্ত্রে আহত সৈনিকেরা সুস্থ হয়ে উঠতেন। তাই এ কালেও কোমায় চলে-যাওয়া রোগীদের কানে ওই মন্ত্র দিলে তিনি সেরে উঠতে পারেন।

এই বিশ্বাস কতখানি বিশ্বাসযোগ্য, তা দেখতেই লোহিয়া হাসপাতালে চলছে রোগীদের মন্ত্র শোনানো। এই ‘গবেষণা’-র জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ বা ICMR গত 3 বছর ধরে অশোককে মাসিক ভাতা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন ICMR-ই চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণার উন্নতি ও দিশা নির্দেশের দায়িত্বে। কলকাতার স্নায়ুশল্যবিদ আশিস ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনও মান্যতা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি-র রোগীদের ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপির একটা ভূমিকা আছে। হেডফোনে পছন্দের সঙ্গীত শুনে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন, এমন নজির রয়েছে। তবে তার সঙ্গে মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রের সম্পর্কের প্রমাণ রয়েছে বলে জানা নেই।’’

ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, গণেশের মাথায় হাতির মাথা বসানোর সময়ে এ দেশে নিশ্চয়ই প্লাস্টিক সার্জারির লোক ছিলেন। পোখরিয়াল বলেছিলেন, মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার হয় ভারতে, এতে নিউটনের ভূমিকাই নেই। বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর দাবি করেন, গোমূত্র খেয়েই তাঁর স্তনের ক্যান্সার সেরেছে। বিরোধীদের কটাক্ষ, যে দেশে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এ সব দাবি করেন, সে দেশে গবেষণাও তেমন হবে!

নিউরো-ফার্মাকোলজিস্ট অশোক আগে দিল্লির AIIMS-এ চাকরি করার সময়ে সেখানকার রোগীদের উপরে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে তাঁর প্রস্তাব খারিজ করে দেন। পরে লোহিয়ায় চাকরি করতে এসে গবেষণার ছাড়পত্র আদায় করেন তিনি। গত তিন বছরে 40 জন রোগীর কানে মন্ত্র পাঠ করিয়েছেন অশোক। তাঁর দাবি, ‘‘নাটকীয় উন্নতি হয়েছে।’’ তবে বিভাগীয় প্রধান অজয় চৌধুরি জানান, প্রাথমিক ভাবে এই মন্ত্রের ‘সুফল’ স্পষ্ট নয়। চূড়ান্ত ফল না-আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

কলকাতায় স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ রবীন সেনগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘এ রকম কিছু হতে পারে বলে জানা নেই। তবে গবেষণা অনুমোদন যখন পেয়েছে, তখন নিশ্চয়ই তার কোনও ভিত্তি রয়েছে। সেটা কী, তা জানতে হবে।”

আরও পড়ুন-ফের বেকায়দায় মুকুল, প্রতারণা মামলায় বিকেলের মধ্যেই থানায় হাজির দিতে হবে মুকুলকে

 

Previous articleফের বেকায়দায় মুকুল, প্রতারণা মামলায় বিকেলের মধ্যেই থানায় হাজির দিতে হবে মুকুলকে
Next articleরুদ্ধশ্বাস “পেন্ডুলাম” ফাইনালের পর US OPEN নাদালের