আইনি জটিলতায় ফাঁসতে চলেছে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আর্জি

প্রসঙ্গ, রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন। রাজীব-শিবিরের দাবি, এই পুলিশকর্তা ইতিমধ্যেই বারাসত কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন পেশ করেছেন। আর তাঁর এই আবেদন ঘিরেই উঠে এসেছে একাধিক আইনি-এক্তিয়ারের প্রশ্ন।

■ মূল সারদা মামলা বা RC-4, বারাসতের যে বিশেষ আদালতে চলছে, সেই আদালতের এক্তিয়ার-ই নেই আগাম জামিনের কোনও আর্জি শোনার। সুতরাং ‘ফেরার’ রাজীব কুমার যদি সেই বিশেষ আদালতেই আগাম জামিনের আবেদন করে থাকেন, তাহলে ওই আবেদন আদালতে গ্রাহ্যই হবেনা। এই আদালত জামিনের আর্জির বিচার করতে পারে, কিন্তু আগাম জামিনের কোনও আবেদন শোনার অধিকার এই আদালতকে দেওয়া হয়নি। ফলে, রাজীব-শিবির যাই দাবি করুক, বারাসতের বিশেষ আদালতে রাজীবের আগাম জামিনের শুনানি হতে পারে না।

■ সেক্ষেত্রে রাজীব কুমার বারাসতের মুখ্য বিচারকের এজলাশে তাঁর আগিম জামিনের আর্জি জানাতে পারেন। রাজীব-শিবিরের দাবি অনুসারে শনিবার যদি আদালতের রেজিস্ট্রারের কাছে তাঁর আর্জি পেশ হয়ে থাকে, তবে তা আজ, সোমবার মুখ্য বিচারকের এজলাশে পেশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মুখ্য বিচারক ওই আর্জি দেখার পর স্থির করবেন, কবে সেটির শুনানি হবে এবং কোন আদালত সেটি শুনবে। মুখ্য বিচারক নিজে না শুনে অন্য কোনও এজলাশেও মামলাটি পাঠাতে পারেন। ফলে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আর্জির শুনানি কোন আদালতে, কবে হবে। ততদিন CBI চুপ করে বসে থাকবে, এভন ভাবার কোনও কারনই নেই।
■ আরও একটি আইনি জটিলতা রয়েছে রাজীব কুমারের আর্জিতে। শোনা যাচ্ছে, তিনি গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিন চেয়েছেন আদালতে। বড়সড় আইনি প্রশ্ন এখানেই দেখা দিয়েছে। CBI রাজীবকে তলব করেছে সম্ভবত 41 অথবা 160 ধারার ভিত্তিতে। এই ধারায় কোনও মামলার সাক্ষী হিসেবে কাউকে ডাকা হতে পারে। রাজীব কুমারকেও সাক্ষী হিসেবেই CBI তলব করেছে। সাক্ষী হিসেবে যাকে তলব করা হয়েছে, তিনি গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করতেই পারেন না। ফলে কোনও সাক্ষী আগাম জামিনের আবেদন করতেই পারেন, কিন্তু আইনি নজরে তার ভিত্তি খুবই দুর্বল। রাজীবকে প্রমান করতে হবে, CBI তাঁকে হেফাজতে নিতে আগ্রহী। রাজীবের আবেদনে এমন কোনও নথিই নেই।

■ তবে সাক্ষী হিসেবে কাউকে তলব করে, তাঁকেই গ্রেফতার করার একাধিক নজিরও আছে। আজ যে ভয় রাজীব কুমার পাচ্ছেন,
ঠিক সেই কাজ তো এই রাজীব কুমারই করেছেন। সারদা-মামলায় সাক্ষী হিসাবে তলব করে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করেছিলেন এই রাজীব কুমারই, তখন তিনি বিধাননগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন। গ্রেফতার করার আগে 10 বার কুণালকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছিলো। প্রতিবারই কুণাল নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার পর এই রাজীব কুমারের নির্দেশেই ‘সাক্ষী’ কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। ভাগ্যের পরিহাসে, আজ ঠিক একই ধরনের পুলিশি বা তদন্তকারী সংস্থার জালে ফেঁসেছেন রাজীব। গ্রেফতারি এড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

■ বারাসতে আগাম জামিনের আর্জি জানালেও রাজীবের মূল ছক, যে ভাবেই হোক কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্রের সাম্প্রতিক রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যাওয়া। সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজু করে তার ‘প্রসেস’-কে বিলম্বিত করার পরিকল্পনা রাজীব-শিবির নিয়েছে। তবে হাইকোর্টের যে রায়ের বৈধতা রাজীব চ্যালেঞ্জ করতে চাইছেন, আইনজীবীদের নজরে সেই রায় পূর্ণাঙ্গ, বিস্তৃত এবং স্বচ্ছ। রায়ের একটা অংশে রাজীব কুমারকে CBI-এর তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশও আছে। আর সেই নির্দেশ ইতিমধ্যেই লঙ্ঘন করে রাজীব কুমার আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্তও হয়ে গিয়েছেন। CBI ঠিক এই বিষয়টি শীর্ষ আদালতের নজরে এনে রাজীবের মামলা খারিজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

■ এতকিছু আইনি জটিলতায় একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে, এবার রাজ্যের ADG-CID রাজীব কুমারের CBI-এর ‘আমন্ত্রণ’ এড়ানো কার্যত অসম্ভব।

Previous articleভারতের কাছে হারতে হবে জেনেও ‘বেআক্কেল’ ইমরানের মুখে শুধু যুদ্ধের কথা
Next articleআইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মগডালে ভারত