অভিষেক হাল ধরার যোগ্য হয়ে উঠছে, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

আমাকে অনেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। আমার স্পষ্ট জবাব:

1) ওকে ছোটবেলায় দেখেছি। কৈশোরে দিল্লিতে পড়ুয়া অবস্থায় দেখেছি। পরে 2011র ব্রিগেডে মমতাদি বলেছিলেন ওর নেতৃত্বে “যুবা” ঘোষণা করতে। করেছি। কিন্তু আমি যখন সক্রিয় ছিলাম, ওর সেভাবে কাজ করার সুযোগ বা পরিস্থিতি হয় নি।

2) 2013র সময়ে যে কারণে দলের প্রতি আমার ইস্যুভিত্তিক অভিযোগ, অভিমান, প্রতিবাদ, বক্তব্য; তার মধ্যে ও কখনই ছিল না। কারণ অভিষেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় এসেছে আমার শ্রাদ্ধের পর!! ফলে ওর প্রতি আমার ওসব নিয়ে কোনো বক্তব্য থাকার কথা নয়। নেই। বরং দলের উদীয়মান নেতা হিসেবেই ওকে দেখা ভালো বলে মনে করি।

3) আমি নির্দ্বিধায় বলছি, একাধিক তদন্তকারী এজেন্সিকেও বলেছি, সারদা বা এই ধরণের কোনো ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অভিষেকের কোনো ভূমিকা ছিল বলে আমি জানি না। সারদার ত্রিসীমানায় আমি ওর নাম কখনও শুনি নি।

4) এখন অভিষেক সম্পর্কে মিডিয়ার কিছু বন্ধু, দলের কিছু নেতার সূত্রে দুরকম ধারণা পাই। এর মধ্যে একরকম পজিটিভ। অন্যশিবিরের কান্ডকারখানায় বিরোধীদের কুৎসার হাত শক্তিশালী হয়। তিলকে তাল করে কেউ কেউ দেখাতে চায় কত গোপন কথা জানে !! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা : ও নিজেকে দারুণভাবে তৈরি করছে। সিস্টেমে চলতে চায়। কথার মধ্যে আবেগ, যুক্তি ও বাস্তবের মিশ্রণ দেখি। এটা বাইরে থেকে বোঝা কঠিন ছিল। বক্তৃতায় উন্নতি করছে। কাজের পদ্ধতিটাও যা বুঝছি, স্বচ্ছভাবে দলের মঙ্গল চায়। ও যদি পাল্টে না যায়, তাহলে দল ভবিষ্যতে যোগ্য হাতেই থাকবে। দল সম্পর্কে ওর যা দৃষ্টিভঙ্গি, পরিকল্পনা, তা রীতিমত বিজ্ঞানসম্মত। তবে আমার ধারণা, যে কোনও দল বা স্রোতেই যা হয়, নতুনকে সামান্য কূপমন্ডুকতার বাধার পাহাড় টপকানোর অপ্রিয় কাজটা থাকেই। তবু অভিষেক নিজগুণেই দলীয় কর্মী, বিশেষত নতুন প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

5) মমতাদির ভাইপো বলে অভিষেক রাজনীতি করলে কটাক্ষ, এটা মানি না। সব পেশায় এই আত্মীয়তা বা উত্তরাধিকারসূত্রে একই পেশায় থাকার বহু উদাহরণ আছে। একজন তরুণের ক্ষেত্রে সেটা দোষ হতে পারে না। আমি উল্টো বলি: কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুকে দেখার পরও তাঁর পুত্র চন্দন বসু কমিউনিস্ট পার্টি না করে শিল্পপতি হলেন; আর মমতাদিকে দেখে তাঁর ভাইপো পেশায় যাই ব্যবসা করুন, ভালোবেসে তৃণমূলটাই করল, এর মধ্যে প্রশংসাযোগ্য কোনটাকে বাছবেন ? শুধু ঈর্ষা বা গায়ের জ্বালায় আক্রমণ বা সমালোচনা বোধহয় ঠিক নয়। অভিষেকের কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ ভুল হলে সমালোচনা হতেই পারে; কিন্তু শুধু পারিবারিক পরিচয়ের জন্য কটূক্তি ঠিক নয়। ওর বয়স অল্প। রাজনীতিতে এসেছে। খারাপ কী? ফলতায় এনআরসি আতঙ্কে মৃতের বাড়িতে অভিষেকের ছবিটা দেখলাম। প্রতীকী। অভিভাবকের মতো। নেতার মত। মমতাদির সেই উদ্দাম উত্থানের সময়ের মত। এই ছবি আগামীর ইতিহাসের বীজবপনের ক্ষমতা রাখে।

আমার গণ্ডিতে এইটুকুই বুঝেছি। বাকিটা সময় বলবে। অভিষেক তার ইতিবাচক দিকগুলো বাড়ালে সাফল্য বাড়বে। আর যদি কোনো বিভ্রান্তিকর ভুলভুলাইয়ার মধ্যে পড়ে, তাহলে তার কাজটা কঠিন হবে।
এবং আমার মনে হয়, ধৈর্য ধরে বিষয় বিশ্লেষণের ক্ষমতা অভিষেকের ক্রমশ বাড়ছে। মমতাদির যোগ্য দক্ষিণহস্ত হিসেবে ও নিজেকে প্রমাণ করছে পদবিতে নয়, পারফরমেন্সে।

আরও পড়ুন-রাজীবকুমারকে কার্যত খোলা চিঠি কুণাল ঘোষের, রাজীবকুমার শুনছেন?

Previous articleমহালয়ার সাতদিন আগেই শারোদৎসবে মেতে ওঠে শেওড়াফুলি রাজবাড়ি
Next articleবাধা নেই ‘গুমনামী’-র মুক্তিতে