Friday, December 5, 2025

শুভ মহালয়া! শাস্ত্রের শিক্ষা হিন্দুগণ উল্টো বুঝিয়াছে

Date:

Share post:

শনিবার থেকে ফোন খুললেই হোয়াটস অ্যাপে ভেসে আসছে শুভ মহালয়া। মানে কী? এক সাহিত্যিক বলছিলেন, বাঙালি আর কোথায় কোথায় শুভ খুঁজে বেড়াবে? ‘শুভ’র তোড়ে বিদ্যাসাগরের সেই কথাটা মনে পড়ে : শাষ্ত্রের শিক্ষা হিন্দুগণ উল্টো বুঝিয়াছে।

মহালয়া কেন?

হিন্দু রীতি অনুযায়ী মহালয়ায় প্রয়াত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা, জলদান করা বা তর্পণ করার তিথি। কিন্তু এই তর্পণ এল কোথা থেকে? তাহলে ফিরতে হবে মহাভারতে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত কর্ণ গেলেন স্বর্গে। তাঁকে খাবার বা জলের পরিবর্তে শুধু সোনা-রুপো খেতে দেওয়া হল। বিস্মিত কর্ণ যমরাজকে (মতান্তরে দেবরাজ ইন্দ্রকে) গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, —

তাঁর প্রতি এরকম ব্যবহারের কারন কী? যমরাজ বললেন, — ‘হে কর্ণ, তুমি জীবনভোর শুধু শক্তির আরাধনা করে গেছ। কখনও নিজের পূর্বপুরুষের কথা ভাবোনি, তাঁদের প্রয়াত আত্মাকে খাদ্য-পানীয় দাওনি। তাই পুণ্যফলে তুমি স্বর্গে আসতে পারলেও খাদ্য-পানীয় পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হওনি। কর্ণ বললেন— হে ধর্মরাজ! এতে আমার দোষ কোথায়? জন্ম মুহূর্তেই আমার মা আমাকে ত্যাগ করেন। সূত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী আমাকে প্রতিপালন করেন। তারপর আমার শৌর্য দেখে দুযোর্ধন আমাকে আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ আরম্ভের আগের দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও তার পরে মাতা কুন্তী এসে আমার জন্ম ও বংশ পরিচয় জানিয়ে দেন। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হল এবং মাত্র ষোল সতের দিন বেঁচে ছিলাম। পিতৃপুরুষকে জল দেবার সময়ই তো পাইনি আমি।’ তাহলে উপায়? যমরাজ বললেন,— ‘উপায় অবশ্য আছে একটা। তা হল— তোমাকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জলদান করলে তবেই স্বর্গে খাদ্য-পানীয় পাবে।

আরও পড়ুন – পুজোর সাহিত্যের সেকাল একাল

যমের (বা ইন্দ্রের) নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদ তিথিতে কর্ণ আবার মর্ত্যে ফিরে এসে এক পক্ষকাল থেকে পিতৃপুরুষকে তিল-জল দান করে পাপস্খলন করলেন। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষ জলদান করে কর্ণ স্বর্গে ফিরে গেলেন। এই বিশেষ পক্ষকাল সময়কে শাস্ত্রে পিতৃপক্ষ বলা হয়েছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল মহালয়া। এই সময়কালে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের তিল-জল দিয়ে স্মরণ করার রীতি চালু আছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। একে বলা হয় তর্পণ। প্রয়াতদের স্মরণ করার মধ্যে শুভ আসে কোথা থেকে? এই ভুল ধারণার প্রধান কারণ হল— মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীর মহিষাসুরমর্দিনী গীতিআলেখ্য প্রচার।

১৯৩২ সালের আশ্বিন মাস। দুর্গাপুজোর মহাষষ্ঠীর ভোরে তৎকালীন ‘ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’ নামে খ্যাত কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার হল ‘মহিষাসুরমর্দিনী। রচনা— বাণীকুমার, সুর সংযোজনা:— পণ্ডিত হরিশচন্দ্র, রাইচাঁদ বড়াল ও পঙ্কজকুমার মল্লিক। স্ত্রোত্র পাঠ:— বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বেতার সম্প্রচারের ছিয়াশি বছরের ইতিহাসে এই রকম অনুষ্ঠান আর দ্বিতীয় নির্মিত হয়নি, যার জনপ্রিয়তা এর ধারেকাছে আসতে পারে।

আরও পড়ুন – মহালয়ার ভোরে গান

জরুরি অবস্থার জমানাতেও জনগণের প্রবল দাবিতে মহাষ্ঠীর সকালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল সরকারি প্রচার মাধ্যম ‘আকাশবাণী’।

প্রথম বছর অর্থাৎ, ১৯৩২-এ দুর্গাষষ্ঠীর ভোরে সম্প্রচারিত হলেও পরের বছর থেকে তা মহালয়ার ভোরে সরিয়ে আনা হয় একটাই কারণে যে, মানুষজন ওই অনুষ্ঠান শোনার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন এবং তারপর তর্পণ করতে বেরোবেন।

আর মহালয়া পিতৃপুরুষকে জলদান করার তিথি, এর সঙ্গে দুর্গাপুজোর কোনও যোগ নেই—যোগ নেই মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি আলেখ্যটিরও।

এবার ‘শুভ মহালয়া’ হোয়াটস অ্যাপ পাঠান প্রিয়জনকে!!

আরও পড়ুন – মহালয়াতে কেন তর্পণ

spot_img

Related articles

কুণালে হাত ধরে ‘অরণ্যবহ্নি রানি শিরোমণি’ বইয়ের প্রচ্ছদ প্রকাশ

তাঁর লেখা 'রানি সাহেবা' বইয়ের মাধ্যমে চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী রানি শিরোমণিকে আবার পাদপ্রদীপের নিয়ে এসেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তথা...

বাংলা সম্পর্কে সংসদে অসত্য বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী! তীব্র ধিক্কার দোলাদের

রাজ্যসভায় সেন্ট্রাল এক্সাইজ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের উপর আলোচনার শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হল।...

সন্দেশখালি কাণ্ডে আরও চাপে শেখ শাহজাহান! হাইকোর্টে বিস্ফোরক রিপোর্ট সিবিআইয়ের

আরও বিপাকে সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা। কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া সিবিআই–এর সর্বশেষ অনুসন্ধানী রিপোর্টে দাবি করা...

আর জি কর চিকিৎসক অনিকেত মামলায় নতুন মোড়! সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের এসএলপি

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডাঃ অনিকেত মাহাতোর যোগদান সংক্রান্ত মামলায় নয়া মোড়। আগামী ৮ই ডিসেম্বর এই...