Wednesday, November 12, 2025

শুভ মহালয়া! শাস্ত্রের শিক্ষা হিন্দুগণ উল্টো বুঝিয়াছে

Date:

শনিবার থেকে ফোন খুললেই হোয়াটস অ্যাপে ভেসে আসছে শুভ মহালয়া। মানে কী? এক সাহিত্যিক বলছিলেন, বাঙালি আর কোথায় কোথায় শুভ খুঁজে বেড়াবে? ‘শুভ’র তোড়ে বিদ্যাসাগরের সেই কথাটা মনে পড়ে : শাষ্ত্রের শিক্ষা হিন্দুগণ উল্টো বুঝিয়াছে।

মহালয়া কেন?

হিন্দু রীতি অনুযায়ী মহালয়ায় প্রয়াত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা, জলদান করা বা তর্পণ করার তিথি। কিন্তু এই তর্পণ এল কোথা থেকে? তাহলে ফিরতে হবে মহাভারতে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত কর্ণ গেলেন স্বর্গে। তাঁকে খাবার বা জলের পরিবর্তে শুধু সোনা-রুপো খেতে দেওয়া হল। বিস্মিত কর্ণ যমরাজকে (মতান্তরে দেবরাজ ইন্দ্রকে) গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, —

তাঁর প্রতি এরকম ব্যবহারের কারন কী? যমরাজ বললেন, — ‘হে কর্ণ, তুমি জীবনভোর শুধু শক্তির আরাধনা করে গেছ। কখনও নিজের পূর্বপুরুষের কথা ভাবোনি, তাঁদের প্রয়াত আত্মাকে খাদ্য-পানীয় দাওনি। তাই পুণ্যফলে তুমি স্বর্গে আসতে পারলেও খাদ্য-পানীয় পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হওনি। কর্ণ বললেন— হে ধর্মরাজ! এতে আমার দোষ কোথায়? জন্ম মুহূর্তেই আমার মা আমাকে ত্যাগ করেন। সূত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী আমাকে প্রতিপালন করেন। তারপর আমার শৌর্য দেখে দুযোর্ধন আমাকে আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ আরম্ভের আগের দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও তার পরে মাতা কুন্তী এসে আমার জন্ম ও বংশ পরিচয় জানিয়ে দেন। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হল এবং মাত্র ষোল সতের দিন বেঁচে ছিলাম। পিতৃপুরুষকে জল দেবার সময়ই তো পাইনি আমি।’ তাহলে উপায়? যমরাজ বললেন,— ‘উপায় অবশ্য আছে একটা। তা হল— তোমাকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জলদান করলে তবেই স্বর্গে খাদ্য-পানীয় পাবে।

আরও পড়ুন – পুজোর সাহিত্যের সেকাল একাল

যমের (বা ইন্দ্রের) নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদ তিথিতে কর্ণ আবার মর্ত্যে ফিরে এসে এক পক্ষকাল থেকে পিতৃপুরুষকে তিল-জল দান করে পাপস্খলন করলেন। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষ জলদান করে কর্ণ স্বর্গে ফিরে গেলেন। এই বিশেষ পক্ষকাল সময়কে শাস্ত্রে পিতৃপক্ষ বলা হয়েছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল মহালয়া। এই সময়কালে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের তিল-জল দিয়ে স্মরণ করার রীতি চালু আছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। একে বলা হয় তর্পণ। প্রয়াতদের স্মরণ করার মধ্যে শুভ আসে কোথা থেকে? এই ভুল ধারণার প্রধান কারণ হল— মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীর মহিষাসুরমর্দিনী গীতিআলেখ্য প্রচার।

১৯৩২ সালের আশ্বিন মাস। দুর্গাপুজোর মহাষষ্ঠীর ভোরে তৎকালীন ‘ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’ নামে খ্যাত কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার হল ‘মহিষাসুরমর্দিনী। রচনা— বাণীকুমার, সুর সংযোজনা:— পণ্ডিত হরিশচন্দ্র, রাইচাঁদ বড়াল ও পঙ্কজকুমার মল্লিক। স্ত্রোত্র পাঠ:— বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বেতার সম্প্রচারের ছিয়াশি বছরের ইতিহাসে এই রকম অনুষ্ঠান আর দ্বিতীয় নির্মিত হয়নি, যার জনপ্রিয়তা এর ধারেকাছে আসতে পারে।

আরও পড়ুন – মহালয়ার ভোরে গান

জরুরি অবস্থার জমানাতেও জনগণের প্রবল দাবিতে মহাষ্ঠীর সকালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল সরকারি প্রচার মাধ্যম ‘আকাশবাণী’।

প্রথম বছর অর্থাৎ, ১৯৩২-এ দুর্গাষষ্ঠীর ভোরে সম্প্রচারিত হলেও পরের বছর থেকে তা মহালয়ার ভোরে সরিয়ে আনা হয় একটাই কারণে যে, মানুষজন ওই অনুষ্ঠান শোনার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন এবং তারপর তর্পণ করতে বেরোবেন।

আর মহালয়া পিতৃপুরুষকে জলদান করার তিথি, এর সঙ্গে দুর্গাপুজোর কোনও যোগ নেই—যোগ নেই মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি আলেখ্যটিরও।

এবার ‘শুভ মহালয়া’ হোয়াটস অ্যাপ পাঠান প্রিয়জনকে!!

আরও পড়ুন – মহালয়াতে কেন তর্পণ

Related articles

ডবল ইঞ্জিনের গোয়ায় কোটি টাকার চাকরি কেলেঙ্কারি! জড়িত বিজেপি মন্ত্রিসভার সদস্য ও উচ্চপদস্থ আমলা

ফের ডবল ইঞ্জিন সরকারের দুর্নীতি ফাঁস। কোটি কোটি টাকার 'চাকরির বিনিময়ে নগদ' কেলেঙ্কারির এক মূল অভিযুক্ত গোয়ার (Goa)...

এখনও গুটখা-তামাকযুক্ত পান মশলা বিক্রি নিষিদ্ধ বাংলায়, মেয়াদ চলবে কতদিন

আরও এক বছর গুটখা ও তামাকযুক্ত পান মশলা (Pan Masala) বিক্রির নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমবঙ্গে (West Banegal)। গত ৭ নভেম্বর...

কেন হাসপাতালে ভর্তি হতে হল, ছাড়া পেতেই নিজেই জানালেন গোবিন্দা

বুধের ভোরে ব্রেকিং নিউজ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা গোবিন্দা (Govinda)। কয়েক ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর তাঁকে...

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কান্দিতে চাঞ্চল্য, দগ্ধ ৬

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে (Gas Cylinder Blast) ভয়ানক দুর্ঘটনা মুর্শিদাবাদের কান্দিতে (Kandi Murshidabad)। বুধবার, রান্নার সময় আচমকা গ্যাস সিলিন্ডার...
Exit mobile version