জিয়াগঞ্জ খুন : একাধিক সম্ভাবনার দরজা খোলা। কুণাল ঘোষের কলম।

কুণাল ঘোষ

প্রসঙ্গ: জিয়াগঞ্জে সপরিবার শিক্ষকের নৃশংস খুন

1) ভয়ঙ্কর ঘটনা। নিন্দার ভাষাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। খুনি ও ষড়যন্ত্রীদের যথাযথ শাস্তি চাই।

2) শিক্ষক আরএসএসের সমর্থক যদি বা হন, এমন কোনো বড় নেতা ছিলেন না যাঁকে সরাতে এই ভয়ানক সপরিবার খুন। ফলে রাজনীতি বা ধর্মের যুক্তিটা জোরদার বলে এখনও মনে হচ্ছে না।

3) এমএলএ হস্টেলে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক রমজান আলি খুনের পর রাজনীতি এসেছিল। ফরওয়ার্ড ব্লক বলেছিল রাজনৈতিক খুন। কংগ্রেস বাংলা বনধ করেছিল। ইঙ্গিত ছিল সিপিএমের দিকে। শেষে দেখা গেল রমজানের স্ত্রী তালাত সুলতানা ও সচিব নিজেরা সম্পর্কে জড়িয়ে বিধায়ককে খুন করেছে। আজও দুজনেই জেলে। আমার মতে, জিয়াগঞ্জ নিয়ে কোনো পক্ষকে দোষারোপের আগে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত।

4) খুনের নৃশংসতা থেকে গভীর ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রতিফলিত হচ্ছে। গর্ভস্থ সন্তানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে।

5) যে কারণেই খুন হোক, এমন খুন পৈশাচিক। সমাজে চিন্তার কথা। দোষীদের ধরতেই হবে। আবার এটাও ঠিক, কোনো ব্যক্তিগত সমীকরণে এই কান্ড হলে প্রশাসন বা পুলিশ কী করে ঠেকাবে? এটা তো সামাজিক সমস্যা আর অবক্ষয়।

6) কে সে খুনি, কী তার উদ্দেশ্য যে দম্পতি, গর্ভস্থ শিশু এবং ছবছরের ছেলেকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে? সুপারি কিলারের সম্ভাবনা থাকছে। রাজনীতি না হলে টাকা আর সম্পর্ক, এর বাইরে কারণ হতে পারে না। রইল বাকি সাধারণ ডাকাতি, এক্ষেত্রে অসম্ভব । পারিবারিক সম্পত্তিবিবাদও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। উত্তরাধিকারসহ শেষ করে দেওয়ার মোটিভ কাজ করছে। ঐ পরিবারে প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষ জনিত চোরাস্রোতও আছে।

7) খুনি কজন ছিল? একজন? অসম্ভব। তাহলে এতগুলো খুন হয়? চিৎকার, বাধা হবে না? ঢুকলই বা কী করে? তাহলে খুনি একাধিক। অথবা, একজন খুনি ঢুকেছিল। বাড়িতে সবাই ঘুমন্ত। এটা ভাবা কঠিন।

8) সম্ভাবনা একাধিক। খুনিকে ডেকেছিল বাড়িরই একজন। কিন্তু খুনি শেষে তাকেও মেরে দিয়ে গেছে। অথবা, সম্পূর্ণ তৃতীয় কেউ খুনিদের নিয়ন্ত্রক।

9) ” ছেলেকে পারলে তুমি রেখো। পেটেরটা আমার কাছে থাকবে।” কেন স্বামীকে এধরণের কথা লিখেছিলেন স্ত্রী? পেটের সন্তানকে নিয়ে সমস্যা? আমার কাছে থাকবে মানে কী? দাম্পত্য ভেঙে আলাদা থাকার পরিকল্পনা? কার ভরসায় বা মদতে?

10) রামপুরহাটের ছেলেটিকে পাওয়া যাচ্ছে না কেন? তার সঙ্গে এই পরিবারের সম্পর্ক ঠিক কী ছিল?

11) শিক্ষক তাঁর চাকরির বাইরে কোন্ ব্যবসার চেষ্টা করছিলেন? কার সঙ্গে? লেনদেনের চাপ ছিল কি না?

12) যদি পাওনাদারের চাপ হয় বা রাজনীতি বা ধর্ম, শিক্ষক রাস্তাঘাটেই শত্রুর মুখে পড়তে পারতেন। বাড়ি এসে সপরিবার নৃশংস খুন হবে কেন? এই কায়দাটাই বলছে, গভীর ব্যক্তিগত আক্রোশ। টাকা, সম্পত্তি, না সম্পর্ক? এর বাইরে বিষয়টি যাওয়া কঠিন।

13) তদন্ত চলছে। সব সম্ভাবনার দরজা খোলা। তবুও সাততাড়াতাড়ি ঐ ব্যক্তি আরএসএস এবং খুন করেছে জেহাদিরা; অর্থাৎ পরোক্ষভাবে মুসলিমদের দিকে আঙুল তোলাটা বিপজ্জনক অপপ্রচার। এই বিষটা ছড়ানো ঠিক নয়। যদি আদৌ পরে দেখা যায় কোনো সুপারি কিলার টাকা নিয়ে মেরেছে এবং সে ঘটনাচক্রে মুসলিম; তাহলেও কিন্তু সুপারি যে দিয়েছে তার হিন্দু নামটাই বেরোবে। ফলে কোনো ব্যক্তিগতস্তরের ঘটনার সঙ্গে প্রমাণ ছাড়া জাতিধর্ম মেলানোটা অপরাধ।

14) রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দেহগুলির ছবির দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ছবছরের শিশু। তার ঘাড়ে কোপ। বিস্ফারিত চোখ। এই মৃত্যু তার প্রাপ্য ছিল? গর্ভস্থ সন্তানের পোস্ট মর্টেম করতে হল। ভাবা যায়? আমার অনুমান ডি এন এ টেস্ট করার সব উপাদান পুলিশ সংগৃহীত রাখছে। যে কোনো তদন্তের জন্যে। অবিলম্বে দোষীদের ধরা প্রয়োজন।

15) এবং বাংলা মূলস্রোত সংবাদমাধ্যম আর বুদ্ধিজীবীরা। রাজনীতি থাক বা না থাক, এই ভয়ঙ্কর হত্যা কেন যথাযথভাবে খবরে জায়গা পাবে না? কেন দায়সারা কভারেজ, অনেকের প্রথম পাতাতেও নেই। বুদ্ধিজীবীরা বেশির ভাগই এখন অন্ধ। আরে, পক্ষ বিপক্ষের বাইরেও তো একটা নিরপেক্ষ মঞ্চ আছে। সেখান থেকে তো অন্তত খুনের নিন্দে করে দোষীদের শাস্তি দাবি করা যায় ! সোশ্যাল মিডিয়ায় একপ্রস্থ খোঁচা খেয়ে অপর্ণা তবু টুইট করলেন। বাকিগুলো আরও নির্লজ্জ। পুজোর কার্নিভালে সেজেগুজে যাওয়ার আগে অন্তত একটা বিবৃতিও দিতে মন চাইল না? আপনাদের মন বলে আর কি কিছু নেই?

16) এখনও পর্যন্ত যা খবর পাচ্ছি, পুলিশি তৎপরতা ঠিকঠাক আছে। পুলিশ সর্বশক্তিতে নেমেছে। আশা করি রহস্যের জাল খুলবে আর খুনিরা শিগগিরই গ্রেপ্তার হবে।

আরও পড়ুন – কেন খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন বন্ধুপ্রকাশের পরিচিত শৌভিক?

Previous articleমন্দার ধাক্কায় রাষ্ট্রপুঞ্জে বন্ধ এসকালেটর
Next articleজিয়াগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে আটক বন্ধুপ্রকাশের বাবা