একজন প্রার্থীও পছন্দের নয়, এই প্রথমবার খেল দেখাল NOTA

পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এই প্রথমবার NOTA বা None of the above দাপট দেখাল।

নোটা-র অবস্থান দৃঢ় হওয়ার অর্থ একটাই, বর্তমান রাজনীতি বা রাজনীতিকদের সাধারন মানুষ আর পছন্দ করছেন না। সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ইঙ্গিতটা বিপজ্জনক। এবং এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন রাজনীতিকদের একটা অংশ। অপছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার থেকে নোটায় ভোট দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন ভোটাররা। EVM-এর সব থেকে তলার বোতামটি চিহ্নিত হয় NOTA নামে। এই বোতামটি টিপে যারা ভোট দেন, তাঁরা বুঝিয়ে দেন, উপরে নাম-প্রতীক থাকা কোনও প্রার্থীকেই তিনি পছন্দ করছেন না। তবুও ভোটারটি ভোট দিতে এসেছেন এবং বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁর মনের এই কথা। ভোটে দাঁড়ানো কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে, ভোটাররা এই নোটা-তেই ভোট দেন। এই সুযোগ চালু হয়েছে কিছুদিন আগে।

সদ্যসমাপ্ত মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে EVM-এ NOTA বোতামের ব্যবহার হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবেই।
বেশ কিছু আসনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের হেলায় হারিয়েছে নোটা। দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এই ছবিই দেখা গিয়েছে। হরিয়ানার 6 কেন্দ্রে জয়-পরাজয়ে ঠিক করেছে এই নোটা। আবার মহারাষ্ট্রের 3 বিধানসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে নোটা।

বৃহস্পতিবার হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর দেখা গিয়েছে, হরিয়ানার 6টি কেন্দ্রে এই নোটা-ই জয়-পরাজয়ের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই রাজ্যের থানেশ্বর কেন্দ্রে বিজেপির সুভাষ সুধা মাত্র 842 ভোটে কংগ্রেসের অশোক কুমার অরোরাকে পরাজিত করেছেন। আর ওই কেন্দ্রে 951 ভোট পেয়েছে নোটা। তেমনই সিরসা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী গোকুল সেতিয়াকে 602 ভোটে হারিয়েছেন হরিয়ানা লোকহিত পার্টির গোপাল কান্ডা। ওই কেন্দ্রে 579 ভোট পেয়েছে নোটা। হরিয়ানার রতিয়া কেন্দ্রে বিজেপির লক্ষ্মণ নামা কংগ্রেসের জার্নেল সিংহকে 1216 ভোটে হারিয়েছেন। নোটা পেয়েছে 1086 ভোট। বড়খালে কংগ্রেসের বিজয়প্রতাপ সিংহকে 2545 ভোটে হারান বিজেপির সীমা ত্রিখা। সেখানে নোটা পায় 2274 ভোট। কৈথলে বিজেপির লীলা রামের কাছে 1246 ভোটে পরাজিত হন কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। সেখানে 561 আসন পায় নোটা। নির্দল প্রার্থীদের দখলে যায় 1800 ভোট। পুনহানায় কংগ্রেসের মহম্মদ ইলিয়াসকে 816 ভোটে পরাজিত করেন নির্দল প্রার্থী রহিশ খান। সেখানে নোটায় 611 ভোট পড়েছে।

ওদিকে মহারাষ্ট্রে নোটার দাপট আরও প্রবল। লাতুর- গ্রামীণ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের ছেলে তথা কংগ্রেস নেতা ধীরজ বিলাসরাও দেশমুখ। 1 লক্ষ 33 হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি। আর মাত্র 13 হাজার 335 ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শিবসেনা প্রার্থী। এবং তৃতীয়স্থানে থাকা রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে পিছনে ফেলে
দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে নোটা। নোটা-তে পড়েছে 27 হাজার 287 ভোট। আবার মহারাষ্ট্রের পালুস-কোড়েগাঁও কেন্দ্রেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নোটা। সেখানে কংগ্রেস এবং শিবসেনার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও, প্রাপ্ত ভোটের 10 শতাংশই পেয়েছে নোটা। এই কেন্দ্রে 1 লক্ষ 71 হাজার ভোট পেয়ে কংগ্রেস প্রার্থী কদম বিশ্বজিৎ পতঙ্গরাও জয়ী হয়েছেন। 8 হাজার 976 ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শিবসেনা। আর শিবসেনাকে ছাপিয়ে 20 হাজার 631 ভোট পেয়েছে নোটা।
অক্কলকুয়া বিধানসভা আসনেও শিবসেনাকে ছাপিয়ে 4 হাজার 856 ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে নোটা। সেখানে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের কেসি পড়ভি।

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দেশের রাজনীতিতে নোটা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। লড়াই এখন আর দল বনাম দলে থাকছেনা। ভোট এখন প্রার্থী বনাম জনতার মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। এর কারন, ভোটাররা এখন অধিকতর সচেতন। অপছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার কথা বুথে গিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। রাজনীতিকদের কাছে ক্রমশই নোটা ‘আতঙ্কজনক’ হয়ে উঠছে। সাধারন মানুষ যে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীদের পছন্দ করেনা, বুথে গিয়ে সেকথাই স্পষ্ট করলো হরিয়ানা ও মহারাষ্টের সচেতন ভোটদাতারা।

আরও পড়ুন-রাজ্যের ৩ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা

 

Previous articleরাজ্যের ৩ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা
Next articleসিবিআই-এর নজরে সীমান্তে গরু পাচার