‘শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল’, থিমে-ইলিশে-প্রদর্শনীতে আপ্লুত মন্ত্রীও

ব্রাত্য বসু মঞ্চে উঠেই বলে ফেললেন, “মোহনবাগানের পাড়ায় এভাবে ইস্টবেঙ্গলের আবেগ উপচে পড়ছে! টাটকা ইলিশ, আমার প্রিয় ক্লাবের ১৯২০, ১৯৩০, ১৯৫০, ১৯৭০ থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীরও এত এত ছবি! এখানে না এলে মিস করতাম বড় কিছু।”

থামছেন না মন্ত্রী। বলেই চলেছেন তাঁর প্রিয় ইস্টবেঙ্গলের নানা কথা। মঞ্চে তখন পাশেই কিংবদন্তিরা। সমরেশ চৌধুরী, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যদের চোখগুলো থেকে যেন লাল-হলুদ দীপ্তি ঠিকরে বেরোচ্ছে। টাইমমেশিনে চেপে সকলেই যেন তখন ফিরে যাচ্ছেন সত্তর-আশির দশকে। ব্রাত্য বসু দৃপ্তকণ্ঠে বলছেন, “দিকপাল পিন্টুদার খেলা দেখিনি মাঠে গিয়ে। তবে এমেকার শট আর ভাস্করদার সেভ কি করে ভুলি! কি করে ভুলি মনাদার সেই এক একটা কড়া ট্যাকল!”

রাজনীতির জটিল অঙ্ক, নাটকের মঞ্চে গড়গড়িয়ে বলে চলা স্ক্রিপ্টের বাইরেও মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ফুটবল-জ্ঞান মুগ্ধ করার মতোই। নাহলে একনাগাড়ে কীভাবেই বা শুনিয়ে যেতেন ইস্টবেঙ্গলের রেকর্ডের বর্ণমালা! কীভাবেই বা শ্বাস না ফেলে টানা বলে যেতেন কোন কোন ম্যাচে গর্জে উঠেছেন সমরেশ-ভাস্কর-মনোরঞ্জনরা! একটু দেরিতে এসেছিলেন সুকুমার সমাজপতি। নাহলে ব্রাত্যর বক্তৃতায় নিঃসন্দেহে মুগ্ধ হতেন এই লাল-হলুদ কিংবদন্তিও।

রামমোহন রায় রোড তরুণ সংঘের কালীপুজোর উদ্বোধনে মন্ত্রী থেকে কিংবদন্তি ফুটবলাররা। একদিকে চাঁদের হাট, অন্যদিকে গোটা রাস্তা ইস্টবেঙ্গলময়। পুজোর থিম যাদের ‘শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল’, সেখানে লাল-হলুদ জনতার “ইস্টবেঙ্গল-ইস্টবেঙ্গল” কলরব উঠবে না তা হয়! মূল মণ্ডপের সামনের রাস্তায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব এবং ‘আজকাল’ পত্রিকার সহযোগিতায় প্রদর্শনী। সঙ্গে লাল-হলুদ পীঠস্থানের জন্মলগ্ন থেকে কত শত অজানা কথা খোদাই করা ব্যানারে, ছবিতে। ১৯২১ সালের ইস্টবেঙ্গল দল দেখতে হলে এ প্রদর্শনী দেখতেই হয়। ক্লাবের প্রথম জার্সি কথা থেকে কীভাবে এসেছিল জানতে হলে একবার পৌঁছতেই হয় রামমোহন রায় রোডে। ১৯৩৬-এর যে ইস্টবেঙ্গল চার গোল দিয়েছিল মোহনবাগানকে, সেই দলের প্রত্যেকে যেন ছবির ভিতর থেকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন লাল-হলুদ জনতাকে। আজও। ফুটবলপ্রিয় বাঙালিকে ১৯৪৩-এর প্রথম শিল্ডজয়ী ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা যেন বলতে চাইছেন, বাংলার ফুটবল দীর্ঘজীবী হোক। ইস্টবেঙ্গলের পঞ্চপাণ্ডব, ১৯৭৫-এর স্বপ্নের এগারো থেকে সুভাষ ভৌমিকের অধীনে আসিয়ান কাপজয় – এ যেন শুধুই প্রদর্শনী নয়, ইস্টবেঙ্গলের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিকথা।

সুকিয়া স্ট্রিট বাজারে রোজ ইলিশ মাছ বিক্রি করেন বাপি-শ্রীকান্ত-পলাশরা। ‘শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল’ থিম শুনে এক্কেবারে পদ্মার ইলিশ নিয়ে ওঁরাও হাজির। বাপি-পলাশদের স্টলে ভিড় তাক লাগিয়ে দেবে। ইস্টবেঙ্গলময় যে পুজোপ্রাঙ্গণ, লাল-হলুদপ্রেমীদের আবেগ ঝরছে যে রাস্তাজুড়ে সেখানে কি আর কাঁচা ইলিশের গন্ধ পেয়েও কেউ মুখ ফেরাতে পারে!

মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর হাতে ইলিশ তুলে দিচ্ছেন তরুণ সংঘের অন্যতম আয়োজক প্রাক্তন সাংসদ-সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। মোহনবাগান যাঁর হৃদয়ে সেই কুণালকে উদ্দেশ্য করে মঞ্চ থেকে ব্রাত্য অবশ্য আগেই বলেছেন, “এসব কুণাল-ই পারে!”

মেরিনার্সদের ঘাঁটিতে পুজোর থিম ‘শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল’। লাল-হলুদের দুর্লভ মুহূর্তের একঝাঁক দলিল। ছবি প্রদর্শনী। টাটকা ইলিশ। ফ্যান ক্লাবের হরেক কর্মকাণ্ড। মঞ্চ থেকে তরুণ গায়কের গলায় “মাছের রাজা ইলিশ আর খেলাতে ফুটবল” – কে বলে বাঙালির ফুটবলবোধে ভাঁটা পড়েছে!

সবুজ-মেরুন বাগানে লাল-হলুদ ফুল ফুটেছে। বাঙালির ফুটবল, বাংলার ফুটবল বেঁচে থাকবে হাজার হাজার বছর। গাড়িতে ওঠার মুখে যখন এ কথা বলছেন সমরেশ চৌধুরী, তখন ভাস্কর নিজেই সুর ধরলেন –

“রামা-শ্যামা, যদু-মধু এল গেল কত
মাঠের ভিতর দাপিয়ে বেড়াই আমরা বাঘের মতো।”

Previous articleদুষ্মন্তকে পাশে পেল বিজেপি, হরিয়ানা হাতের মুঠোয়
Next articleঘরের ছেলেকে রাজকীয় সম্বর্ধনা সিএবির, অতিথি তালিকায় আজহার-লক্ষ্মণ