প্রদেশ কংগ্রেস: একটি দল না ফ্রন্ট?

কণাদ দাশগুপ্ত

AICC-অনুমোদিত প্রদেশ কংগ্রেস কি এখনও একটি দলই আছে ? না’কি ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার লোকজনকে নিয়ে তৈরি একটি ফ্রন্ট ?
প্রদেশ নেতারা নিজের নিজের মর্জিমাফিক, একদমই পার্সোনাল অ্যাজেণ্ডায় যা খুশি করছেন, বলছেন।
দলের নিজস্ব কোনও দৃষ্টিভঙ্গি নেই। শীর্ষনেতারা নিজেদের নিজস্ব ভাবনাকে দলের পলিসি বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন ‘স্বাধীনতা’ পাঁচমেশালি ফ্রন্টের শরিকরাও ভোগ করেন না। এরপরেও কি এই দলটিকে ‘একটি দল’ বলা যায় ?

প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু নেতাকে দেখে এবং শুনে মনে হচ্ছে তাঁরা সিপিএম করেন। এনারা দলের নেতাদের থেকে বেশি ভরসা করেন আলিমুদ্দিনের নেতাদের ওপর। এই মনোভাবের নেতারা বেছে বেছে বাম আমলে কুখ্যাত লোকজনদের হাতে কংগ্রেসের পতাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের প্রার্থী করছেন। ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, ওই কেন্দ্র যিনি জয়ী হয়েছেন, তিনি পেয়েছেন 7,24,433 ভোট। আর নানা ঘাটের জল খাওয়া ওই
দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী (!) কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন 16,007 জন। ফারাকটা সাত লক্ষেরও বেশি। অথচ দলে নেওয়া বা প্রার্থী করার সময় বলা হয়েছিলো, ইনি এবার কড়া লড়াইয়ে ফেলবেন সিটিং-সাংসদকে।

আবার কিছু নেতার কথা শুনে এবং দৌড়ঝাঁপ দেখে ধারনা হচ্ছে, গায়ে এদের কংগ্রেসের জার্সি থাকলেও, এনারা মনে মনে এবং সক্রিয়ভাবে তৃণমূল-ই করছেন। এদের কথাবার্তা, আচরণ দেখলে ধন্দ লাগবেই এরা কোন দলের সঙ্গে যুক্ত! নিজের নিজের পদ বাঁচাতে সব ইস্যুতেই এরা তৃণমূলপন্থী। এদের কেউ কেউ চান্স পেলেই তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন, আবার অনেকে তৃণমূলে যাওয়ার জন্য সলতে পাকাচ্ছেন। তিন উপনির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেস অফিসিয়ালি কংগ্রেসের কাছে সমর্থন চেয়েছে বলে কেউ শোনেনি। তাতে কী? ‘আমি তো মিডিয়ায় আমার মনোভাব স্পষ্ট করে তৃণমূলনেত্রীকে জানিয়ে দিলাম’। এটা হয়তো এক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট, পরে কাজে লাগলেও লাগতে পারে।
এবং কমেডি এটাই, এত কিছুর পরেও এনারা বলছেন, “কংগ্রেসের স্বার্থে, কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে”ই তাঁরা সিপিএম বা তৃণমূলের তল্পি ধরেছেন। এ সবের পরেও বহাল তবিয়তে এরাই প্রদেশ কংগ্রেসের ‘মুখ’ হিসেবে থেকে যাচ্ছেন।

দলের এক নেতা সম্প্রতি দিল্লিতে চিঠি লিখে খড়গপুর-সদর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে নিজেরা প্রার্থী না দিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই চিঠির কথা প্রকাশ্যে আসা মাত্রই দলের তরফে খড়গপুর-সদর কেন্দ্রের উপনির্বাচন পরিচালনা করার জন্য 20-25 জনের একটি কমিটি ঘোষনা করে দিয়েছেন। যদিও ভোট হচ্ছে তিন কেন্দ্রে, কিন্তু তড়িঘড়ি এ ধরনের কমিটি গঠন করা হলো শুধুই খড়গপুর-সদর কেন্দ্রের জন্য, বাকি দু’কেন্দ্র ভাঁড়ে যাক। কারন, যেহেতু দলের এক নেতা এই কেন্দ্রটি তৃণমূলকে ছাড়তে বলেছেন। প্রদেশের ক্ষমতার বিন্যাস যদি ঠিক উল্টো হতো, তাহলে করিমপুর আসন বামেদের ছাড়ার কথা বলামাত্রই করিমপুরের জন্য ফৌজি তৎপরতায় এ ধরনের কমিটি হয়তো ঘোষনা হয়ে যেতো। দলের সাধারন কর্মীরা এখন বিভ্রান্ত। কোনটা দলের সিদ্ধান্ত? খড়গপুরে তৃণমূলকে সমর্থন করা? না’কি ওই কমিটির ছাতার তলায় কংগ্রেসপ্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামা ? দুটি ঘটনাই কর্মীরা জানতে পারলেন সংবাদমাধ্যম মারফত। পরিস্থিতি কতখানি হাস্যকর, একই দলের দুই নেতার দু’ধরনের সিদ্ধান্ত সবাই জানতে পারলেন। ওই কেন্দ্রে হয় কংগ্রেস লড়বে অথবা লড়বে না, কিন্তু তা ঠিক হওয়ার আগেই দুই মত সামনে এলো। এবার তো একপক্ষকে থুতু চাটতে হবে। সেক্ষেত্রে তাঁর ঠিক কী ‘শাস্তি’ হবে?

যে কোনও মানুষের যে কোনও রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করার স্বাধীনতা আছে। ওনাদেরও আছে। কিন্তু একটি দলের পদাধিকারী হয়ে, একটি দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে অন্যদলের পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় কি ? যারা করেন, তাঁরা কোনও দলের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হননা।
অথচ, এই সব চরিত্রকে সামনে রেখে এবং নানা প্রলোভন, প্ররোচনা, প্রতিহিংসা হেলায় উপেক্ষা করে গ্রাম-শহরে আজও কংগ্রেস কর্মী বলে পরিচয় দেওয়া সাধারন কর্মীদের অনেকেই আশা করছেন, দল ঘুরে দাঁড়াবেই। কিন্তু এই ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র রসায়ন কি?

যে দলের নেতৃত্ব নিজের দলের থেকে, অন্য দলকে যোগ্য মনে করছেন, অন্য দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, নিজের দলের যোগ্য, নিষ্ঠাবান কর্মীদের উপেক্ষা করে অন্য দলের কলঙ্কিত লোকজনের মধ্যে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মার ছায়া দেখতে পান, দীর্ঘদিন ধরে মাঠ-ময়দান দাপিয়ে কংগ্রেস পতাকা তুলে ধরার কাজ চালিয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীদের যারা ন্যূনতম স্বীকৃতি দিতেও কুন্ঠিত হন, তাঁদের হাত ধরেই নাকি দল ঘুরে দাঁড়াবে ? হুডিনি বা পিসি সরকারও এদের দক্ষতা দেখলে লজ্জা পেতেন।

জানা নেই, রাজনীতি করে যেতেই হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ কাউকে দিয়েছেন কিনা। বিজ্ঞান বলছে, একটা বয়সের পর মানুষের স্বাভাবিক বোধ ঠিকঠাক কাজ করেনা। সব পেশাদার ক্ষেত্রের মতো রাজনীতিতেও তাই একটা বয়সের পর ‘অবসর’ সিস্টেম চালু করা একান্তই জরুরি বলে ইদানিং মনে হচ্ছে।
তাহলে কিছু নেতার সত্যিই সোনালি এবং গৌরবোজ্জ্বল
রাজনৈতিক অতীত এভাবে ভুলুন্ঠিত হওয়ার সুযোগই পেতো না।

আরও পড়ুন-বেতন চেয়ে দম্পতির সঙ্গে বচসা, কী করলেন গাড়ির চালক?

 

Previous articleবেতন চেয়ে দম্পতির সঙ্গে বচসা, কী করলেন গাড়ির চালক?
Next articleবাংলাদেশ ক্রিকেটে জুয়াড়ি-ছায়া, নিষেধাজ্ঞার মুখে তারকা ক্রিকেটার