“পঞ্চপান্ডব”, আপনাদেরই দরকার। কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

কোচবিহারের জামালদহ থেকে ফেস বুক লাইভ করেছিলাম আগেই। ইচ্ছে ছিল পরে লিখব। এখন তাই পাঠকপাঠিকাদের জন্য প্রতিবেদন।

এক অন্য “পঞ্চপান্ডব” খুঁজে পেলাম। আমি অভিভূত। জীবনপথের ধারে কত যে মণিমাণিক্য পড়ে থাকে !

তখন শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার যাচ্ছিলাম। জামালদহে এসে মনে হল একটু চা বিশেষ প্রয়োজন। চালক গাড়ি দাঁড় করালেন। সামনে একটি বেশ জমজমাট দোকান।
-” দাদা, চা হবে তো?”
-“হবে, আসুন।”
অতঃপর প্রবেশ। দোকানের নাম রামকৃষ্ণ সুইটস্। বোঝা গেল চা, নানারকম মিষ্টি, ভুজিয়ার বেশ চালু দোকান। থরে থরে সাজানো খাবার। ভিড়ও যথেষ্ট। “আমদই”ও পাওয়া যাচ্ছে।

আমরা ক’জন। শ্যামলদা, সঞ্জয়, দেবাশিস ভেতরে চা নিয়ে বসলাম। সঙ্গে টাটকা গাঠিয়াভাজা, বাদামসহ।

হঠাৎ সঞ্জয়রা দেখালো,” দেখো কী লেখা।”

ঘুরে দেখি একাধিক বিজ্ঞপ্তি। এই দোকানে ক্যানসার আক্রান্তরা বিনামূল্যে খেতে পারেন। এখানে অন্ধদেরও বিনামূল্যে আপ্যায়ণ। এখানে গরিবদের দুপুরের আহারের একটি বিজ্ঞপ্তিও উজ্জ্বল। প্রতিটিতেই একটি সংগঠনের নাম: পঞ্চপান্ডব।

কৌতূহল।
জানা গেল, দোকান সামলানো মালিক লোকটি পঞ্চপান্ডবের অন্যতম পান্ডব ! কথা বলতেই হয়।
দেখা গেল তিনি যথেষ্ট সচেতন। আলাপের আগেই বলছেন,” কুণালবাবু তো। কোচবিহার যাচ্ছেন সেতু উদ্বোধনে। জানি। হাত একটু ফাঁকা করেই আসছি।”

এলেন তিনি। মৃন্ময় ঘোষ।
তিনি দোকান চালান। চার বন্ধু শিক্ষক। পঞ্চপান্ডব নানা কাজ করেন।
নমুনা: এখানে দৃষ্টিহীন ও ক্যান্সার আক্রান্তদের বিনামূল্যে খাওয়া। এলাকার গরিবদের মধ্যাহ্নভোজ।

এঁরা 21 জন ডাক্তারি ছাত্র, 23 জন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে পড়ান। আর্থিক সঙ্কটে এই মেধাবীদের থেমে থাকতে হয় নি।

এলাকায় কোনো গরিব অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনায় পড়ে বিপণ্ণ হলে ছুটে গিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত। এই নজিরও আছে, পায়ে সংক্রমণ। পোকা ভর্তি। মৃন্ময় নিজে হাতে পরিষ্কার করে তারপর হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। আপাতত সেই রোগী আবার সুস্থ হয়ে ছোটখাটো ব্যবসাতে। আর তাতেও পঞ্চপান্ডবের মদত। দারিদ্রে যে টু হুইলার বিক্রি করে দিতে হয়েছিল, তা আবার তাঁকেই কিনে দিয়েছেন তাঁরা।

মৃন্ময় সবিনয়ে বলছেন,” এই তো জীবন। এই কাজটুকুই থাক। আমরা বড় কোনো সংগঠন নই। পাঁচ বন্ধু মিলে যতটা পারি, চেষ্টা করি।”

কে বলল বড় সংগঠন নয়? মৃন্ময়, আপনারা যা করছেন, তা বড়। অনেক বড়। আজকের এই প্রচারের যুগে উত্তরবঙ্গের জামালদহের গঞ্জে বসে যে কাজ আপনারা করে চলেছেন, তা বেনজির।

শুধু এই সংবাদটি তুলে ধরার জন্যই আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে ধন্য। “বিশ্ব বাংলা সংবাদ”-এর সুপর্ণা এখন জানালো, দোকান থেকেই যে ফেস বুক লাইভটি করেছিলাম, এই মুহূর্তে তার পৌঁছসংখ্যা 89092. দর্শকসংখ্যা 42,000 ছাড়িয়েছে। শেয়ার 604. এর বাইরে ইউ টিউব, পোর্টাল আলাদা। অর্থাৎ মানুষও এই ইতিবাচক সংবাদকে স্বাগত জানাচ্ছেন। পঞ্চপান্ডবকে সাবাশি দিচ্ছেন।

মৃন্ময়বাবু, আপনাদের এই অভিযান চলতে থাকুক।
সেলাম জানাই।

সঙ্গের ছবিগুলি তুলেছেন সঞ্জয় বিশ্বাস।

Previous articleরশ্মি নিভল বিজ্ঞাপন জগতের
Next articleআজ, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নিষ্ফলা পার হলেই মারাঠাভূমে রাষ্ট্রপতি শাসন !