কোচবিহারে রাসমেলার অন্যতম ঐতিহ্য টমটম গাড়ি

“টম-টম-টম-টম” – একটি খেলনা গাড়ির আওয়াজ। গাড়ির বয়স ১০৫ বছর। দুইটি বাঁশের কাঠির ওপরে একটি মাটির পাত্র। তার ওপরে একটি মোটা বেলুন লাল রং এর আঠা দিয়ে লাগানো। তাতেই আরও দুটি কাঠির বাড়ি পরলে ই আওয়াজ ওঠে টম-টম-টম। এই খেলনা গাড়ির। কোচবিহার রাসমেলার অন্য তম ঐতিহ্য এই খেলনা গাড়ি। ১পয়সা থেকে দাম বেড়ে এখন ২০ টাকা প্রতি গাড়ি বিক্রি হয় রাসমেলাতেই।
কোচবিহারে রাসমেলার অন্যতম ঐতিহ্য হল এই টমটম গাড়ি। ১৯১৩ এর সময় থেকে এই খেলনা গাড়ি কোচবিহারে রাসমেলার সময় প্রথম প্রবেশ করে। প্রথমে ভ্যাটাগুড়ি তার পরে কোচবিহারে আসেন কারিগরেরা। বিহারের কাটিহার জেলার মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এই টমটমের কারিগর। কাটিহারে প্রত্যেক বছর বন্যা হয়।

বন্যার সময় জমা পলি মাটি রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় এ খেলনা গাড়ির প্রধান উপকরণ। একটু মোটা কাগজে লাল রং করে তা ওই শুকনো মাটির তালের ওপর লাগানো হয় এই খেলনাতে। আধুনিকতার যুগে কাগজ পালটে বেলুন ব্যবহার করছে কারিগরেরা। যেহেতু এই গাড়িতে প্রধানত সবুজ বাঁশের কঞ্চি হালকা করে সুতোয় লাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ এই টমটমের চাকা ঘুরলেই সুতোয় টান পরলে বাঁশের কঞ্চি দুটি পাতলা কাগজের ওপর ঘর্ষন করলে টমটম আওয়াজের কারণে এই গাড়ির নাম টমটম। প্রথমে (১৯৩০ সালের প্রথম দিকে) এই কারিগরেরা কোচবিহারে এই খেলনা বিক্রী করতে আসেনি। যেহেতু একসময় কোচবিহারের বাঁশ খুব ভাল ছিল বলে এই বাঁশের কঞ্চির সংগ্রহের কারণে এরা কোচবিহারে আসে। কিন্তু প্রথম থেকেই কোচবিহারে বাঁশ নিতে আশা এই কারিগরদের খেলনার প্রেমে পরে যায় কোচবিহার। তাই আজ ওদের কেউ আমন্ত্রন না জানালেও ঠিক রাসের সময় কোচবিহারে এসে যায় এই কারিগরেরা। যদিও চাহিদা কম এখন তবুও টমটম ছাড়া কোচবিহারের রাসের মেলা অসম্পূর্ন। তিন চার পুরুষ ধরে এই শিল্পীরা বানিয়ে চলছে টমটমগাড়ি। খোলা আকাশের নীচে অনাদরে, তবুও ওরা কোচবিহারে ঐতিহ্য এর টানে বানিয়ে চলে টমটম গাড়ি। ব্যবসায়ী তেজান্মুল হসেন বলেন, এখন তাঁরা মাটির পাত্র হাতে বানান না –কুমোর পাড়া থেকে কিনেই আনেন। বিগত ৪০ বছর থেকে তারা আসছেন এই মেলাতে। তার বাবার হাতে এই গাড়ি কোচবিহারে এসেছিল। আজও তারা আসছেন নিয়মিত।

রাস মেলা শুরুর পঞ্চম দিনেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হল রাস মেলা ময়দান এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এম জে এন স্টেডিয়াম। রাসমেলা থেকে জমা করা সমস্ত নোংরা আবর্জনা নিয়ে এসে রাখা হচ্ছে সাংস্কৃতিক মঞ্চের সামনে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, দুপুর বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত এই আবর্জনা পড়ে থাকছে মাঠের মাঝখানে। যা একদিকে ছড়াচ্ছে দূষণ অপরদিকে নষ্ট করছে পরিবেশ। হেলদোল নেই পুরসভার। প্রতিদিন সাফাই কার্য সম্পন্ন করতে ১৭ জন সাফাই কর্মীকে রাসমেলায় নিযুক্ত করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাফাই কর্মী বলেন, আমাদের এখানেই জমা করে রাখতে বলা হয়েছে আবর্জনা। তাই পুরসভার নির্দেশেই আমরা কাজ করছি। বিকল্প অবশ্যই রয়েছে। স্টেডিয়ামের পিছনে সার্কাস ময়দান এর কোনায় বেশ কিছুটা জায়গা রয়েছে যেখানেই এই আবর্জনা রাখা সম্ভব। একই সাথে বড় গাড়ি এসে সেই আবর্জনা অনায়াসে তুলে নিয়ে যেতে পারে। এরপরেও আবর্জনা ফেলে মাঠ ও পরিবেশ দূষণের দায় ভার কাঁধে নিচ্ছেন পুরসভার কর্তৃপক্ষরা। পুর প্রধান ভূষণ সিং মন্তব্য করে বলেন, আমাদের আবর্জনা নেওয়ার চেয়ে বড় গাড়িটি রয়েছে তা যাতে অনায়াসে মাঠে প্রবেশ করতে পারে সেই কারণেই সাময়িকভাবে মাঠেই আবর্জনাগুলো রাখা হচ্ছে। প্রতিবছরই তাই হয়। আজ হয়তো কোন কারণে আবর্জনা তুলে নিয়ে যেতে কিছুটা দেরি হয়েছে, কিন্তু ও নির্দেশ দেওয়া আছে দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে রাসমেলার মাঠে থাকা সমস্ত আবর্জনা তুলে নিয়ে যেতে হবে। শনিবার থেকে এই নির্দেশিকা যাতে পালন হয় সেদিকে নজর রাখবে পুরসভা।

আরও পড়ুন-পরিযায়ী শ্রমিকদের জেরে ডেঙ্গু আতঙ্ক হরিহরপাড়ায়

 

Previous articleপরিষেবার শিকেয়, কিন্তু তিন ট্রেনের খাবার আরও দামি হচ্ছে
Next articleহারানিধি ফিরে পেয়ে আপ্লুত দম্পতি