Wednesday, December 17, 2025

নারদ মামলায় অবশেষে জামিন পেলেন আইপিএস মির্জা

Date:

Share post:

নারদ মামলায় অবশেষে জামিন পেলেন আইপিএস
এসএমএইচ মির্জা। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট এর সিবিআই বিশেষ আদালত স্পেশাল পুট আপে মির্জাকে জামিন দিল। যদিও আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মির্জার জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু গ্রেপ্তারির ৫৬ দিনের মাথায় তিনি জামিন পেয়ে গেলেন।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে সর্বপ্রথম গ্রেফতার করা হয় আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে। ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি দমন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে সিবিআই। নারদ মামলায় এটাই প্রথম গ্রেফতার।

তৎকালীন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন মির্জা। নারদ কাণ্ডের ভিডিয়ো ফুটেজে এই প্রসঙ্গ এসেছে। তাঁর গ্রেফতারের পরে মুকুলকেও ডাকে সিবিআই। পর্যবেক্ষকদের মতে যা তাৎপর্যপূর্ণ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে ১৪ মার্চ স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করে ওয়েব পোর্টাল ‘নারদ নিউজ’। তাতে দেখা যায় প্রভাবশালী একঝাঁক রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী এবং আইপিএস মির্জার সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলছেন নারদ-এর ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলস। তাঁদের কেউ কেউ তাঁর কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে এই অপারেশন করা হয়েছিল বলে জানান নারদ-কর্তা ম্যাথু।

সিবিআইয়ের দাবি, ওই ভিডিয়োয় বর্ধমানের তৎকালীন পুলিশ সুপার মির্জাকে সরকারি বাসভবনে বসে ৫ লক্ষ টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। ম্যাথুর কথায় ইঙ্গিত ছিল, মুকুলের হয়েই টাকা নিচ্ছেন তিনি। নারদের অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, বেসরকারি সংস্থার কর্তা সেজে আসা সাংবাদিক ম্যাথুকে মির্জার কাছে পাঠাচ্ছেন মুকুল।

এই কাণ্ডের তদন্তে নেমে মির্জাকে একাধিকবার তবে করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রতিবারই হাজিরা দেন আইপিএস। কিন্তু অষ্টমবার হাজিরার পর বয়ানে অসঙ্গতি মেলায় তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

২৬ সেপ্টেম্বর ফের নিজাম প্যালেসে মির্জাকে ডেকে পাঠায় সিবিআই। এরপর গ্রেফতার করা হয়। তারপর ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে একাধিক জামিনের আবেদন খারিজ হয় তাঁর। অবশেষে স্বস্তি। অনেক আইনি লড়াইয়ের পর জামিন পেলেন তিনি। এর মাঝে আইনজীবীরও পরিবর্তন করে মির্জার পরিবার।

এদিকে, সিবিআই-কে দেওয়া ম্যাথুর বয়ান অনুযায়ী, তিনি যে দিন মির্জার কাছে যান, সে দিন একাধিক ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। মির্জা তাঁদের একের পর এক ডেকে টাকা নিচ্ছিলেন। মির্জার টেবিলে ছিল টাকার স্তূপ। তাঁর উপস্থিতিতে মির্জার কাছে ফোন এলে মির্জাকে বিভিন্ন টাকার অঙ্কের কথা বলতে শোনা যায়। ম্যাথুর দাবি, ‘‘মির্জা আমার থেকে শুধু টাকাই নেননি, একাধিক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন।’’

সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি, মির্জা ঘুষচক্রের অন্যতম পাণ্ডা ছিলেন। ম্যাথুর সঙ্গে মির্জার কথোপকথনে জানা যায়, মির্জা দু’জনের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে কোনও এক প্রভাবশালীর হাতে তুলে দেন। কাদের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছিলেন, তা পরে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানতে চাওয়া হলেও মির্জা তা জানাননি। তবে জেরায় নাকি তিনি মুকুল রায়ের নাম জানিয়েছেন বলে অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে।

আদালতে জামিনের পক্ষে সওয়াল করে মির্জার আইনজীবীরা বলেন, গত দু’বছরে সিবিআই মির্জাকে আট-নয় বার ডেকেছে এবং তিনি সব সময় তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। যে ভিডিয়ো ফুটেজে মির্জাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও যাচাই হয়নি। তা ছাড়া, মির্জা আইপিএস অফিসার। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা বলেন, টাকা নেওয়ার ফুটেজ মিলেছে। কোথা থেকে ওই টাকা মিলেছিল, তার সন্তোষজনক উত্তর মির্জা দেননি। অভিযুক্ত জানিয়েছেন, কয়েকজনের সঙ্গে তাঁকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার প্রয়োজন।

নারদ মামলা শুরুর পরে মির্জা প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে জানান, একটি অনাথ আশ্রমের জন্য তিনি ওই টাকা নেন। শুধু সিবিআই নয়, এই যুক্তি মনঃপুত হয়নি রাজ্য সরকারেরও। ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর সাসপেন্ড হন তিনি।

spot_img

Related articles

NCRT-র সিলেবাসে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস রাখার দাবি ঋতব্রতের

এনসিইআরটি-র পাঠ্যবইয়ে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের (Bengali Freedom Fighters) ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত...

অস্কার নমিনেশনে শর্টলিস্টেড ‘হোমবাউন্ড’! উচ্ছ্বসিত করণ শুভেচ্ছা জানালেন টিমকে

অ্যাকাডেমি পুরস্কার জেতার স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় বিনোদন জগত (Indian Entertainment Industry)। মঙ্গলবার ৯৮তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার...

সুপ্রিম নির্দেশে সরলো আর জি কর ধর্ষণ-খুন মামলা: শুনানি এবার কলকাতা হাই কোর্টে

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে (R G Kar Medical College And Hospital) চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের মামলার এবার নতুন মোড়।...

টাকার দামে পতন অব্যাহত! আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি ঘিরে ধোঁয়াশা বাড়ছে

ভারতীয় টাকার দামে (Indian Rupee Rate) আবারও বড় পতন দেখা গেল। বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ডলার প্রতি টাকার...