করিমপুরে জয়ের পরে তৃপ্তির হাসি ‘ছোটদি’-র মুখে

রাজ্যের তিন উপনির্বাচনে জয়জয়কার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। আর এই তিন আসনের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল নদিয়ার করিমপুর। সেখানে দাপটের সঙ্গেই জিতে গেল ঘাসফুল শিবির। আর এই জয়ের কৃতিত্বের অধিকারী হিসেবে প্রত্যেকেই মহুয়া মৈত্রকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। এলাকায় তিনি ছোটদি হিসাবেই পরিচিত। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই করিমপুরে শাসক দলের পার্টিকর্মী এবং সাধারণ মানুষ মহুয়াকে দিদির আসনে বসান। এলাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড়দি এবং মহুয়া মৈত্র ছোটদি বলেই পরিচিত।

২০১৬ সালে প্রথমবারের জন্য করিমপুর আসনটি দখল করে তৃণমূল। প্রথমবারই ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন মহুয়া মৈত্র। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই এলাকার মানুষের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় বিধায়ক হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও তাঁর দাপট ও প্রভাব বাড়ে। এলাকার বিধায়কের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এই বিধানসভা অঞ্চলে ধীরে ধীরে দলীয় সংগঠন মজবুত করতে থাকেন মহুয়া।

এনআরসিকে হাতিয়ার করে সংখ্যালঘু ভোটের প্রায় পুরোটাই কব্জা করে ফেলেন মহুয়া। একই ইস্যুতে অসমের উদাহরণ টেনে হিন্দু ভোটও নিজেদের ঝুলিতে নিয়ে আসেন তিনি। এনআরসির বিরোধিতা করে রাজ্য থেকে তৃণমূল নেত্রী যে কয়েকজন নেতা-নেত্রীকে অসম পাঠিয়েছিলেন, তাঁর অন্যতম মুখ ছিলেন মহুয়া।

মাত্র তিন বছরে বিধানসভায় করিমপুরের পক্ষে অনেক সওয়াল করেছিলেন তিনি। লোকসভা ভোটের সময় পাশের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকে দাঁড়িয়ে বড় মার্জিনে জয় পেয়েছেন। এবং সংসদে গিয়ে এনআরসি নিয়ে সরব হয়েছেন।

বিধায়ক হিসেবেও প্রচুর কাজ করেছেন তিনি। করিমপুরে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল যানজট। নতুন বাস টার্মিনাস করে মানুষের দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান করেছিলেন মহুয়া। এই কয়েক বছরে বেশ কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতি করেছিলেন তিনি। প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে বানিয়েছেন অনেক রাস্তাঘাটও। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন ছোটদি মহুয়া। তারই সুফল করিমপুরে এই বিরাট ব্যবধানে জয়।

সাংসদ হয়ে গেলেও, করিমপুরকে অভিভাবকহীন করেননি তিনি। দিল্লি থেকে ফিরলেই মাঝে মধ্যেই এলাকায় আসতেন। পার্টি কর্মীদের সঙ্গে মিটিং করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথা বলতেন। ফলে তাঁর জনসংযোগ এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল করিমপুরবাসীর কাছে।

তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনে এবার তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক বিমলেন্দু সিংহ রায়। আপাদমস্তক ভদ্র মানুষ হলেও, বিমলেন্দুবাবুকে সেভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে খুব বেশিদিন দেখা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি ডাকাবুকো নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। বিজেপি প্রার্থী বড় বড় কিছু মিছিল মিটিং করে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর চেষ্টা করলেও, মহুয়া মৈত্র দাপটের সঙ্গে তৃণমূলের প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। বিমলেন্দু সিংহ রায়কে জেতাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিলেন মহুয়া। মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন করিমপুরে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়ে গেলও করিমপুরে প্রচার শেষ করে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত করেই এলাকা ছেড়েছিলেন তিনি।

তাই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা করিমপুর জয়ের জন্য ছোটদি মহুয়াকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। এদিন করিমপুরে জয়ের পর দিল্লির সংসদ ভবনের সামনে তাঁর প্রতিক্রিয়াতে মহুয়া বলেন, ‘এই জয় করিমপুরের মানুষের জয়। এখানে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই। বিজেপি নিজের কবর নিজেই খুঁড়েছে। ২০২১-এও রাজ্যজুড়ে গো-হারা হারবে বিজেপি।’

Previous articleদিদি আর শুভেন্দুকে কৃতজ্ঞতা জানালেন প্রদীপ
Next articleঝাড়খন্ডও কি ফসকে যাবে বিজেপির হাত থেকে?