সিএএ-বিরোধী তৃণমূল আসলে দলিতবিরোধী, প্রচার বিজেপির

রবিবার দিল্লির সভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে অভিযোগ তুলেছিলেন, কলকাতার সমাবেশে তারই পুনরাবৃত্তি করলেন বিজেপি কার্যনির্বাহী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে আসলে বাংলার কয়েক লক্ষ গরিব দলিত মানুষের নাগরিকত্বের অধিকার পাওয়ারই বিরোধিতা করছে তৃণমূল, সেই প্রচার এবার রাজ্যজুড়ে করতে নামল বিজেপি। একইসঙ্গে তৃণমূলের গায়ে অনুপ্রবেশকারীদের বন্ধুর তকমাও লাগাতে চায় গেরুয়া শিবির। আর এই কাজে তাদের হাতিয়ার 2005 সালে সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংস এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় তাঁর এখনকার অবস্থান।

বিজেপির প্রচারে তৃণমূলকে বিঁধে যে বিষয়গুলি উঠে আসবে সেগুলি হল:

1) নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ অধিকার কেড়ে নেওয়ার আইন নয়, অধিকার দেওয়ার আইন। সর্বোপরি এই আইন কোনও ভারতীয় নাগরিকের (তা তিনি হিন্দু হোন বা মুসলিম হোন বা অন্য কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ভুক্ত) জন্য প্রযোজ্যই নয়। এই আইন তিনটি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে আসা দরিদ্র শরণার্থীদের ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র প্রযোজ্য। এই
আইনের কোথাও ভারতের কোনও নাগরিকের কোনও অধিকার কেড়ে নেওয়া বা সংকুচিত করার কথা বলাই হয় নি। বিজেপির বক্তব্য, নতুন আইন নিয়ে অযথা ভয় ছড়ানোর চেষ্টায় প্রকৃত তথ্য গোপন করছে তৃণমূল।

2) নতুন নাগরিকত্ব আইন লাগু হলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে শরণার্থী হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে আসা মতুয়া, নমঃশুদ্র ও রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত কয়েক লাখ মানুষ ভারতের নাগরিক হিসাবে অধিকার পাবেন। বিজেপির বক্তব্য, মতুয়া, নমঃশুদ্র ও রাজবংশীরা ভারতীয় নাগরিকের অধিকার পান, চায় না তৃণমূল।

3) বিজেপির বক্তব্য, মতুয়া, নমঃশুদ্র, রাজবংশীরা তৃণমূলের চোখে ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া কিছুই নয়। গত কয়েক বছর এই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তৃণমূল। অথচ মোদি সরকার যখন এদের সবচেয়ে বড় দাবি নাগরিকত্বের অধিকার পূরণ করার আইন CAA এনেছে, তখন মমতা ব্যানার্জি বলছেন তিনি পশ্চিমবঙ্গে এই আইন প্রয়োগ করবেন না। বিজেপির প্রচার, আসল সময়ে তৃণমূলের কার্যকলাপই বুঝিয়ে দিয়েছে, তারাই মতুয়া, নমঃশুদ্র ও রাজবংশীদের অধিকার পূরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।

4) বিজেপির বক্তব্য, এরাজ্যের মতুয়া, নমঃশুদ্র ও রাজবংশীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এখনও পিছিয়ে। তৃণমূল এই গরিব, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের স্বার্থরক্ষায় বাধা দিচ্ছে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে।

5) বিজেপির প্রচার, তৃণমূল বৈধ শরণার্থীদের নাগরিকত্বে বাধা দিলেও এরাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্নে নীরব।

6) বিজেপির অভিযোগ, বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করতে গিয়েই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভুল বোঝাচ্ছে তৃণমূল।

Previous articleএনআরসি, সিএএ-র বিরোধিতায় অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি মমতার
Next articleঝাড়খণ্ডের ফল-পরবর্তী প্রশ্ন, বিজেপি কি এখন স্লগ-ওভারে ব্যাট করছে ?