Friday, November 14, 2025

নটি বিনোদিনীর মঞ্চ ছাড়ার দিনে কুণাল ঘোষের কলম

Date:

Share post:

২৫ ডিসেম্বর, ১৮৮৬.

শেষবারের মত মঞ্চে উঠেছিলেন নটি বিনোদিনী।
মুখে ছিল মন্ত্র: ” হরি গুরু, গুরু হরি।”
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মৃত্যু ১৬ অগাস্ট ১৮৮৬. তার ঠিক ১৩০ দিন পর বঙ্গনট্টমঞ্চের নক্ষত্র বিনোদিনীর অকাল অবসর। সকলের সব অনুরোধ ফিরিয়ে মঞ্চের আলো থেকে সরে যান তিনি। স্বেচ্ছায়। আমরা বাঙালিরা সুচিত্রা সেনের অবসর নিয়ে কথা বলি; বিনোদিনীর নিজেকে সরিয়ে নেওয়া আমাদের কাছে উপেক্ষিত।
এক অদ্ভুত জীবন।

পতিতাপল্লী থেকে উঠে এসে গিরিশ ঘোষের প্রিয়তমা শিষ্যা, বঙ্গরঙ্গমঞ্চের সম্রাজ্ঞী।
প্রবল সামাজিক প্রতিকূলতা উড়িয়ে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ যাঁর অভিনীত নিমাই চরিত্রটি দেখে বলেছিলেন,” আসল নকল একাকার।” সেটা ছিল ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৮৪. নাটক: চৈতন্যলীলা। নাটক দেখার পর আলাদা করে বিনোদিনীর সঙ্গে দেখা করে গেছিলেন ঠাকুর।

পরে, মৃত্যুপথযাত্রী শ্রীরামকৃষ্ণ যখন শ্যামপুকুরের বাড়িতে, প্রবেশের কড়াকড়ি এড়াতে ছদ্মবেশে কোট প্যান্ট টুপিতে পুরুষ সেজে একটিবার দেখতে গেছিলেন বিনোদিনী। সঙ্গে কালীপদ ঘোষ।
কেউ চিনতে না পারলেও ঠাকুর একবারেই দেখে চিনতে পেরে কাছে ডেকে বলেছিলেন,” মা তোর চৈতন্য হোক।”
সেদিনই বোধহয় মন ঠিক করে নেন ঠাকুর চলে গেলে তিনিও নিজেকে সরিয়ে নেবেন মঞ্চ থেকে।
২৫ ডিসেম্বর তাই নটি বিনোদিনীর শেষ অভিনয়।

একসময় স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর নিজের নামে মঞ্চ হবে। গিরিশবাবুর থিয়েটারকে বাঁচাতে এবং নিজের নামের মঞ্চের প্রতিশ্রুতির উত্তেজনায় তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন গুর্মুখ রায়ের হাতে। নতুন হল হয়েছিল বটে। কিন্তু তখন বিনোদিনীকে শুনতে হয়েছিল পতিতার নামে থিয়েটার হলে সাধারণ দর্শক আসবে না। তাই বিনোদিনী থিয়েটার থেকে গেছিল তাঁর কল্পনাতেই।

তখনকার সমাজ, গিরিশ ঘোষের সাহস, শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদ, বিবেকানন্দের উৎসাহ, পতিতাপল্লী থেকে আসা ব্যক্তিগত জীবনের ভাঙাগড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা, থিয়েটার বাঁচাতে আত্মত্যাগ ও বঞ্চনার যন্ত্রণা – বিনোদিনী সব মিলিয়ে হয়ে উঠেছেন বাংলা অভিনয়জগতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চরিত্র।

নটি বিনোদিনীর উদ্দেশে জানাই প্রণাম।
আমার ” পূজারিনি” উপন্যাসটিতে এই গোটা সময়টিকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ:
অতীন জানা। কথাসত্য। ৯/৩, টেমার লেন। কলকাতা ৯.
ফোন: ৯৬৭৪০৮২৭৭৪.

জীবনে আমি বহু ধরণের বহু লেখা, বই লিখেছি। কিন্তু আমার কাছে এটা এখনও পর্যন্ত আমার সেরা লেখা। সেরা কাজ। আমি তৃপ্ত। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এটা আমাকে লেখার সুযোগ দিয়েছেন। যাঁরা এখনও পড়েন নি, যদি মনে হয়, পড়ে দেখবেন।

আজ ২৫ ডিসেম্বর। একসময়ে ইচ্ছা ছিল বিনোদিনীর অবসরের দিনটিকে ঘিরে তখনকার সময়ের দর্পনে একটি অনুষ্ঠান করব। নানা সমস্যার মধ্যে আর হয়ে ওঠে নি। তবে ইচ্ছে থাকলই। আয়োজন করতেই হবে -” নটি বিনোদিনী সন্ধ্যা।”

spot_img

Related articles

সরকারি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীর শ্লীলতাহানি! গ্রেফতার RG Kar আন্দোলনের ‘বিপ্লবী’ ডাক্তার

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে সরকারি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে। ঘটনায় গ্রেফতার বারাসাত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের...

আন্দুল রোডে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড! ভস্মীভূত দুই স্পঞ্জ কারখানা 

রাতের হাওড়ায় ভয়াবহ আগুনে কার্যত ছারখার হয়ে গেল আন্দুল রোডের পাশে হাঁসখালি পোল এলাকার দুটি স্পঞ্জ তৈরির কারখানা।...

সোনারপুরে শুরু হচ্ছে প্রবীণদের জন্য বিনামূল্যে নিউমোনিয়া ও ফ্লু টিকাকরণ কর্মসূচি

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে রাজ্যজুড়ে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই রোগ অনেক সময় প্রাণঘাতী...

প্রকাশিত হল আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার সময়সূচি

প্রকাশিত হল আগামী বছরের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার সময়সূচি। কাউন্সিলের তরফে এদিন বিজ্ঞপ্তি জারি...