বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-শহরে বর্ষবরণের অদ্ভুত রীতি, যা জানলে চমকে উঠবেন!

নতুন বছর মানেই নতুন কিছু স্বপ্ন। নতুন বছর মানেই নতুন কিছু সংকল্প! আর ইংরাজি নববর্ষ মানেই নতুনকে বরণ করা। যা গোটা বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। শুরু কাউন্ট-ডাউন। আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। ২০১৯-কে বিদায় জানিয়ে ২০২০-কে বরণ করে নেবে বিশ্ববাসী। তার আগে দেখে নেওয়া যাক, বিভিন্ন দেশ নিজেদের রীতি ও সংস্কৃতি মেনে যেভাবে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। মেতে ওঠে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনে! বিশ্বের নানা দেশের নানা রকম অদ্ভুত নববর্ষ উদযাপনের সংস্কৃতি আছে।

নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের ইতিহাস:

নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের প্রথম রেকর্ড পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন ব্যাবিলনে। সে উৎসব ব্যাবলিনীয়রা পালন করত বসন্তে, মার্চের শেষভাগে যখন বিষুব অঞ্চলে দিন ও রাত সমান দৈর্ঘ্যে উপনীত হতো। দিনটি তারা স্মরণীয় করে রাখত ‘আকিতু’ নামে জাঁকজমকপূর্ণ এক ধর্মীয় উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে। ব্যাবিলনীয়নদের পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, আকাশের দেবতা মারদুক এক ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সমুদ্রের পিশাচিনী তিয়ামাতকে পরাজিত করেন। ব্যাবিলনীয়দের আকিতু উৎসব ছিল সে বিজয়গাথাকে স্মরণ করার উৎসব। এটিকেই তারা নববর্ষ হিসেবে পালন করত। উৎসবটির রাজনৈতিক তাৎপর্যও কম ছিল না। এদিন নতুন ব্যাবিলনীয় রাজাকে মুকুট পরিয়ে দেওয়া হতো অথবা পুরাতন রাজার শাসন দ-কে প্রতীকীভাবে নবায়ন করা হতো। বছর গণনা সম্পর্কে এখানে একটি তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন। রোমান ক্যালেন্ডারকে সূর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে জুলিয়াস সিজার তাতে অতিরিক্ত ৯০টি দিন যোগ করেছিলেন। এভাবেই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের উদ্ভব হয়। এ রকমই প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন সভ্যতার বিভিন্নভাবে দিনপঞ্জি প্রণয়নের নিদর্শন পাওয়া গেছে। তবে সব সভ্যতায় একটি ব্যাপারে মিল ছিল, বছরের প্রথম দিন কিংবা মাস নির্ধারণ করা হতো নবান্নের বা নতুন ফসল তোলার দিন-তারিখের সঙ্গে মিল রেখে। ব্যতিক্রমও যে ছিল না, তেমন কিন্তু নয়! প্রাচীন মিসরে বছরে সর্বশেষ বার নীলনদের বান ডাকলে পরে আয়োজন করা হতো নববর্ষের, কাকতালীয়ভাবে ওই সময়টি ছিল লুব্ধক নক্ষত্রের উদয়কাল। চৈনিকরা শীতকাল শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পূর্ণ চন্দ্রের দিনে নববর্ষ পালন করত।

এবার দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন দেশ ও শহরের এক বর্ষবরণের ইতিহাস–

ইকুয়েডর:

যেমন, কাকতাড়ুয়া পোড়ানোর মাধ্যমে নতুন বছরে খারাপ ভাগ্যকে বিদায় দেন ইকুয়েডরের মানুষরা। কাকতাড়ুয়া তৈরি করে প্রতিটি পরিবার মাঝরাতে তা পোড়ায়। আর এই কাকতাড়ুয়া পোড়ানোর মাধ্যমে তাঁরা গত এক বছরের সব অমঙ্গল ও অশুভকে বিদায় দেয়। তাঁদের বিশ্বাস, কাকতাড়ুয়া পোড়ালে তা সকলের জন্য নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনবে।

ডেনমার্কে:

ড্যানিশরা নববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনে বাসনকোসন ছোড়ে। তাদের বিশ্বাস, যার বাড়ির সামনে সবচেয়ে বেশি বাসন থাকবে, সে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান, কারণ তার সবচেয়ে বেশি ভালো বন্ধু আছে।

জার্মানি:

‘ডিনার ফর ওয়ান’ দেখে নববর্ষ উদযাপন শুরু করে জার্মানরা। প্রতিবছর নিউ ইয়ার ইভ, অর্থাৎ নববর্ষের আগের রাতে জার্মানরা ব্রিটিশ শো ‘ডিনার ফর ওয়ান’ দেখে নববর্ষ উদযাপন শুরু করে। ১৯৭২ সাল থেকে আজ অবধি এই একটি শো দেখে নববর্ষ উদযাপন করছে তারা।

স্পেন:

স্পেনের মানুষও একটু ভিন্নভাবে শুরু করে নতুন বছর বরণের আয়োজন। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার আগেই মাদ্রিদের প্লাজা ডি এস্পানায় জড়ো হয় অসংখ্য মানুষ। তার পর বছরের শেষ ১২ সেকেন্ড, অর্থাৎ ১২টা বাজার আগের শেষ ১২ সেকেন্ডে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে আঙুর খাওয়া হয়। এভাবেই নতুন বছরকে বরণ করে নেয় স্প্যানিশরা।

ফিলিপাইন:

সব গোল! ফিলিপাইনের মানুষরা গোল আকৃতিটিকে! সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করে। তাই নববর্ষে তারা সবকিছু ‘গোল’ চায়। কয়েন ‘গোল’, তাই উপহার হিসেবে কয়েন দেয়। খাবারও গোলাকৃতির খেতে ভালোবাসে নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার অনুষ্ঠানে।

দক্ষিণ আমেরিকা:

রঙচঙে আন্ডারওয়্যারে অদ্ভুতভাবে পালিত হয় দক্ষিণ আমেরিকার উৎসব। মানুষ বিশ্বাস করে, আন্ডারওয়্যারের রঙের সঙ্গে ভাগ্যের সম্পর্ক আছে। তাই নতুন বছরকে বরণ করতে তারা চাহিদা অনুযায়ী আন্ডারওয়্যারের রঙ বেছে নেয় এবং সেটা পরে। যেমন যার ভালোবাসার মানুষ প্রয়োজন, সে লাল আন্ডারওয়্যার পরে। যার শান্তি প্রয়োজন সে বেছে নেয় সাদা এবং যার সম্পদ প্রয়োজন সে পরে সোনালি রঙের আন্ডারওয়্যার।

জাপান:

জাপানের মানুষরা নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ঘণ্টা বাজিয়ে। মন্দিরের ঘণ্টা ১০৮ বার বাজিয়ে নতুন বছরের আগমন উদযাপন করে তারা। তারা বিশ্বাস করে, ১০৮ বার ঘণ্টা বাজালে জীবনের ১০৮টি ইচ্ছা পূরণ হবে এবং ১০৮টি বিপদ কেটে যাবে।

সুইজারল্যান্ডের

খুব আয়েশ করে কোনও আইসক্রিম খেতে গিয়ে পড়ে গেলে মন খারাপ হয় নিশ্চয়ই? সুইজারল্যান্ডের মানুষরা ইচ্ছা করেই কাজটি করে। নতুন বছরের শুরুতে আইসক্রিম ফ্লোরে ফেলে দেয় তারা। তাদের বিশ্বাস, এতে তাদের জীবনে সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি আসবে।

চিলি:

মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপনের রীতি রয়েছে চিলিতে। ১৯৯৫ সালে দেশটির টালকা নামক এক ছোট শহরে একটি কবরস্থানের বেড়ার ওপর দিয়ে লাফিয়ে বাবার সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করতে ভেতরে ঢুকেছিল একটি পরিবার। এর পর থেকে প্রতিবছর এই শহরের মানুষরা মাঝরাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে শুরু করে নতুন বছরটি।

মেক্সিকো:

মেক্সিকানরা নিউ ইয়ার ইভ-এ মৃত ব্যক্তিদের আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে ও তাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। তারা বিশ্বাস করে, প্রিয় ব্যক্তিদের আত্মা তাদের কথা শুনতে পায়। সে জন্য নববর্ষে সবচেয়ে আগে মৃত প্রিয় ব্যক্তিদেরই শুভেচ্ছা জানায় তারা।

আয়ারল্যান্ড:

আয়ারল্যান্ডের অবিবাহিত মেয়েরা নববর্ষের আগের রাতে তাদের বালিশের নিচে মিস্টলটো নামক লতানো গাছের পাতা রেখে দেয়। তারা বিশ্বাস করে, এই পাতা বালিশের নিচে রাখলে তারা ভালো বর পাবে এবং দুর্ভাগ্যের কবল থেকে রেহাই পাবে।

হংকং:

ভিক্টোরিয়া হারবারে দিগন্তজুড়ে আতশবাজির মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ বরে নেওয়া হয়। আতশবাজির এ দৃশ্য যারা নাকি একবার দেখেছে তাদের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব না। হংকংয়ের বিভিন্ন হোটেল থেকেও দৃষ্টিনন্দন এসব আলোকসজ্জা উপভোগ করা যায়। মনোরম এ দৃশ্যটি দেখতে অসংখ্য জুটি কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই সেখানে হাজির হয়।

দুবাই:

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বাড়ি দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফায় নিউ ইয়ার উদযাপনের নানা আয়োজন করা হয়। আলোকসজ্জা ও আতশবাজির মাধ্যমে সেখানে নতুন বছর উদযাপন করা হয়ে থাকে। এর কিছুটা দূরে বুর্জ প্লাজাতেও বিপুল পরিমাণ আতশবাজির মধ্য দিয়ে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হয়।

সিডনি :

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণভাবে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে সিডনি অপেরা হাউস ও হার্বার ব্রিজে বিপুল পারমাণ আতশবাজি পোড়ানো হয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সেখানে লোকজন আসে নতুন বছর বরণ করতে। অপেরা হাউসের ব্যাকগ্রাউন্ডে আতশবাজির ফলে এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া নিউ ইয়ারের এই সময়টাতেই অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালের শুরু বলে নিউ ইয়ার উদযাপনের সঙ্গে সমুদ্রসৈকতে ইচ্ছামতো ঘুরতে পারে পর্যটকরা।

ব্যাংকক :

এশিয়ার অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ একটি শহর ব্যাংকক। রাত যত গভীর হয়, শহরটিও তত জেগে ওঠে। এ কারণেই বর্ষবরণ যে এখানে ভিন্নমাত্রা পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাংককের সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড প্লাজা ও এশিয়াটিক শপিং সেন্টারের আশপাশে ভিড় জমে ওঠে নববর্ষ উদযাপনের। এ ছাড়া ব্যাংককের বিখ্যাত কিছু বার ও রেসস্টুরেন্ট থেকেও নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করা হয়।

মস্কো :

বিশ্বের অন্যতম ঠা-া স্থান রাশিয়ার মস্কো শহরের রেড স্কয়ারে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ও আতশবাজির মাধ্যম নতুন বছরকে বরণ করা হয়ে থাকে।

কেপটাউন :

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে নিউ ইয়ার পালন করা হয় দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জার মাধ্যমে। এ ছাড়া নানা রকম সুস্বাদু খাবার-দাবারের ব্যবস্থাও থাকে সেখানে।

লন্ডন :

জাঁকজমক বর্ষবরণের তালিকায় লন্ডনের অবস্থান বেশ ওপরে। ইংল্যান্ডের টেমস নদীর ওপরের আলোকসজ্জা দেখার মতো দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া নিউ ইয়ারের রাতে টেমস নদীতে ‘রিভার ক্রজ’ বিশেষভাবে আকর্ষণ করে দর্শকদের।

( সংগৃহীত)

Previous articleব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleহিন্দি জাতীয় ভাষা! প্রেসিডেন্সির ওয়েবসাইটের লেখায় বিস্ময়, আশঙ্কা