Monday, August 25, 2025

বামেরা করলে বিপ্লব আর বাকিরা অসভ্য? কুণাল ঘোষের কলম

Date:

Share post:

কুণাল ঘোষ

জে এন ইউতে মুখ ঢেকে বহিরাগত গুন্ডাদের হামলার তীব্র নিন্দা প্রথমেই করেছি। আবার করছি। ঐশী ঘোষসহ আহতদের রক্তাক্ত ছবি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

কিন্তু সেই সঙ্গেই বলতে চাই:

1) বামেরা মার খেলে গণতন্ত্র বিপণ্ণ আর বামেরা হামলা করলে বিপ্লব, এটা কে ঠিক করে দিল? দিল্লিতে যোজনা পর্ষদের সামনে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে চূড়ান্ত লাঞ্ছনা ভুলে গেলেন কমরেড? সেই অসভ্যতার ক্ষমা চেয়েছেন কেউ?

2) এস এফ আই বা বামেদের উপর আক্রমণ অবশ্যই নিন্দার। কিন্তু তারা কোনোদিনও মারে নি? পুলিশের মদতে আক্রমণ চালায় নি? বাংলায় ছাত্র পরিষদ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা ডি এস ওর অভিজ্ঞতা কী বলছে? সেসব আজ ভুলিয়ে দিয়ে শুধু নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার ছবিটা দিলে চলবে? সিপিআইএমের সন্ত্রাসের বিষয়টা এখানে উল্লেখ করলাম না।

3) নতুন প্রজন্মকে নিয়ে এস এফ আইর এত চিন্তা। দেশ বাঁচানোর লড়াই। প্রশ্ন, বাংলায় যখন বামফ্রন্ট সরকার সরকারি স্কুলে প্রাথমিক থেকে ইংরেজি তুলে দিচ্ছিল বা বামেরা কম্পিউটার ঢুকতে দেবে না বলে আন্দোলন করছিল, তখন নতুন প্রজন্মের স্বার্থে এস এফ আই কী করছিল?

4) আমি বিজেপি নই। কিন্তু এটা বলব, যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব কর্মসূচিতে বাবুল সুপ্রিয় ঢুকছিলেন, তখন বিনা প্ররোচনায় তাঁকে বাধা দেওয়া, শারীরিক নিগ্রহ করাটা যদি সমর্থনযোগ্য বিপ্লব হয়; তাহলে এমন বিপ্লব তো বামেদেরও হজম করতে হবে। তা সে লালঝান্ডার যে শাখাপ্রশাখাই হোক না কেন।

5) জে এন ইউ বা নামি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে হামলা হলে শিরোনাম হয়। আর প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলিতে যখন দখলদারির তান্ডব চলে, তখন মিডিয়ার চোখ বন্ধ থাকে। 34 বছর এবং তার পরেও এটা চলে আসছে। বৈষম্য শুধু ব্র্যান্ড নেমে?

6) তৃণমূল অত্যন্ত সঠিকভাবে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে। ছাত্র রাজনীতিতে লাগামের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে বিজেপিকে তুলোধনা করা তাদের স্বাভাবিক। কিন্তু রাজ্যেই তো কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ। তাহলে ছাত্রদের কাজ কি শুধু কলেজের বাইরে রাস্তায় বিজেপির বিরুদ্ধে মিছিল করা? ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটাও সর্বত্র রূপায়ণ হোক।

7) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে বিজেপির দমনপীড়ন নীতি নিন্দনীয়। এবিভিপি এরাজ্য দূরের কথা, দিল্লির বহু স্থানে পরাজিত। এসব হামলায় জড়ালে তাদের আরও ষোলআনা ক্ষতি। কিন্তু আজ যারা মার খেয়ে সহানুভূতির হাওয়া কাড়ছে, তাদের সেই সহানুভূতি প্রাপ্য তো? অমিত মিত্রর প্রকাশ্য নির্যাতনের পর কিন্তু সারা বাংলায় ধিকৃত ছিল এই এস এফ আই, ছবিতেও ছিলেন তাদের শীর্ষনেতৃত্ব। কেউ ক্ষমা চান নি। ভুলে গেলে চলবে?বাংলার সরকারের শীর্ষনেতৃত্বকে মাঝরাস্তায় ঘিরে অসভ্যতা করার নিন্দে করেছিলেন একজনও বাম নেতা?

8) বিজেপি বা আর এস এসের ছাত্র সংগঠন হামলায় অভিযুক্ত। আর এদিকে বিরোধীরাও বিভ্রান্ত। নেতারা গুলিয়ে ফেলছেন সব। জামিয়ার ক্ষেত্রে বলছেন, পুলিশ কেন ক্যাম্পাসে ঢুকল? জে এন ইউতে বলছেন, পুলিশ কেন ক্যাম্পাসে ঢুকল না? নাও, বোঝো ঠেলা!

সমস্যা হল, দোষারোপ বা পাল্টা দোষারোপের চক্রব্যূহে আমরা সবাই ঢুকে পড়ছি।
কিন্তু এর থেকে বেরোব কী করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশান্তি ঠেকানোর ফর্মুলাটা কী, আমাদের দলাদলির গণতন্ত্রে সেটা এখনও অধরাই।

সেইজন্যেই একদল অসভ্য গুন্ডা, তা সে এবিভিপি হোক আর যেই হোক, এইভাবে ঢুকে ছাত্রী, অধ্যাপিকাদের উপরেও তান্ডব করতে পারে। ছাত্র সভানেত্রীর মাথা ফেটে রক্ত ঝরে।
এ লজ্জা রাখব কোথায়?
এ কোন গণতন্ত্রের উত্তরাধিকারী হয়ে উঠছি আমরা?

কেন্দ্রীয় সরকার যতটা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে এসেছিলেন এই কমাস আগেই; তাঁরা কি দেশটাকে সেই অনুপাতে স্থিতিশীল রাখতে পারছেন?
গণতন্ত্রে সংখ্যাটা নিশ্চয়ই শেষ কথা। কিন্তু শুধু সংখ্যাটাই কি শেষ কথা?

আর কমরেড, মনে পড়ে, 1988র বিকেল। বিজেপি তখন লোকসভায় মাত্র 2. অন্ধ কংগ্রেসবিরোধিতা থেকে রাজীব গান্ধীকে সরাতে শহিদ মিনার ময়দানে হাতে হাত ধরে ভিপি সিং, জ্যোতি বসু, অটলবিহারী বাজপেয়ীর সভা? জাতীয় স্তরে ঐক্য! বিজেপি 2 থেকে 84. দায় এড়াবেন?

কমরেড মনে পড়ে, আবার বিশ সাল বাদ 2008। পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে আপনারা মনমোহন সিংএর নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ সরকারকে ফেলে দিতে গেলেন। কার লাভ হত? পারলেন না। কিন্তু পরের সময়টা সমানে সংসদে ও সংসদের বাইরে মনমোহন সরকারকে কলঙ্কিত করে গেলেন, বিজেপির সঙ্গে একসুরে। 2014-তে কংগ্রেস বিদায় নিল। বিজেপি এলো।

বোতলের দৈত্যকে বোতল থেকে বার করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এখন চোখের জল ফেলে বিপ্লবী সাজলে চলবে?

আসলে রাজনীতি বড় বালাই। তখন বামেরা যাদেরই মেরে থাকুক, এখন বিজেপির বিরোধিতার অগ্রাধিকারে বাকি সকলকে এক থাকতে হবে।
সময়ের সঙ্গে এই মেরুকরণের মেরুগত অবস্থানগুলোই শুধু পাল্টে চলেছে বলে আসল সমস্যার সমাধান আর হয়ে উঠছে না।
সোনার লঙ্কা আছে, থাক।
আমি যখন যাব, আমিও তো রাবণ হয়ে ওঠার সুযোগ পাবো!

spot_img

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...