বিতর্ক যতই হোক, দিল্লিও জানে দিলীপের মত লড়াকু সংগঠকের আকাল বঙ্গ-বিজেপিতে

বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের সোজাসাপটা বাচনভঙ্গি ও ভণিতাহীন আক্রমণাত্মক ভঙ্গির কথাবার্তায় তথাকথিত শহুরে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে কিঞ্চিৎ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলেও গ্রামাঞ্চলে, বিশেষত রাজনৈতিক সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় ও বিজেপির প্রভাবযুক্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপি রাজ্য সভাপতির এখন যে জনপ্রিয়তা, তার ধারেকাছেও নেই বিজেপির অন্য কোনও নেতা। দিলীপবাবুর ‘গুলি করে মারা উচিত’ মন্তব্য নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে ব্যাপক জলঘোলা হলেও এই কথাটা যে তিনি আক্ষরিক অর্থে বলেননি, তা তাঁর সমালোচকরাও জানেন। সরকারি সম্পত্তি নষ্টের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের যৌক্তিকতা বোঝাতে গিয়ে তিনি যা বলেছেন তা জনসভার উত্তেজক ভাষণে মানানসই হলেও রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ হিসাবে নিশ্চয়ই আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল দিলীপ ঘোষের। দেখা যাচ্ছে, জেলায় জেলায় গ্রামের সভাগুলিতে দলীয় কর্মী বা সাধারণ মানুষের সামনে বক্তব্য রাখার সময় সহজ ভাষায় জটিল পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সময় দিলীপবাবু প্রায়শই যা বলেন তা সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেলেও তথাকথিত শিক্ষিত নাগরিক সমাজে তা নিয়ে জলঘোলা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই মূল ভাষণের খণ্ডিত অংশ হিসাবে প্রচার হওয়ার ফলে শুধু বিতর্কিত অংশ নিয়েই সমালোচনা শুরু হয়। বক্তৃতার মূল বিষয় চলে যায় আড়ালে।

কিন্তু এসবের পরেও বাস্তবটা হল, দিলীপ ঘোষই এযাবৎকালে রাজ্য বিজেপির একমাত্র সভাপতি, যিনি নিয়মিত রাজ্য চষে বেরিয়ে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং দলকে শুধু কলকাতা-কেন্দ্রিক প্রচারসর্বস্ব না করে গ্রামে সংগঠন বাড়ানোর দিকে মন দিয়েছেন। তাঁর কিছু কথাবার্তা বিতর্কিত বা তাঁর বক্তৃতায় তথাকথিত শহুরে পালিশের অভাব থাকলেও সোজাসাপটা দিলীপ ঘোষের মত পরিশ্রমী বিকল্প রাজ্য সভাপতি পদে এই মুহূর্তে যে একজনকেও পাওয়া যাবে না, তা অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারাও জানেন। কারণ ট্যুইটারে যুদ্ধপ্রিয় নেতার চেয়েও মানুষের মধ্যে ঘুরে কাজ করা লড়াকু নেতার প্রয়োজন বঙ্গ-বিজেপিতে অনেক বেশি। তাই একাংশের জনমানসে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ধাক্কা খেলেও বিধানসভা ভোটের আগে প্রাক্তন সঙ্ঘপ্রচারক দিলীপ ঘোষকে যথাযথভাবেই ব্যবহার করতে চান দিল্লি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

Previous article‘জতুগৃহ’ রাজধানীতে ফের অগ্নিকাণ্ড
Next articleরাজ‌্যপাল এখন ‘অপম্যান’