ভাষার ‘জাগলারি’তে কোনও দেশ আর্থিক ক্ষেত্রে সবল হয় না

রাত পোহালেই 2020-21 সালের কেন্দ্রীয় বাজেট।অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে দ্বিতীয় বার পেশ করবেন পূর্ণাঙ্গ বাজেট। 2015-16 সালের পরে এ বারও সে দিনের মতো শনিবার।

দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির হাল ফেরাতে নরেন্দ্র মোদি কোন ধরনের পদক্ষেপ করেন, তা দেখতে কৌতূহলি দেশবাসী, করদাতা এবং লগ্নিকারীরা। আর্থিকভাবে কাহিল এবং ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতি আর চলতি অর্থবর্ষের বৃদ্ধির পূর্বাভাসে এমনিতেই মুষড়ে আছেন দেশের মানুষ৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে রেটিং সংস্থা, IMF, বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সকলেই তাকিয়ে মোদির বাজেটের দিকে। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অনুমান, বৃদ্ধির হার এবার আটকে থাকবে 5 শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে বাজেটের অপেক্ষায় সব মহল। অনেকেরই আশা, যা খারাপ হওয়ার হয়তো হয়ে গিয়েছে, এ বার অন্তত ভাল কিছু নিশ্চয়ই ঘটবে। আগামী দিনে যার হাত ধরে ঠিক ঘুরে দাঁড়াবে ভারতবর্ষের হেলে পড়া অর্থনীতি।

সাধারনভাবে বলা যায়, বাজেটের গুরুত্ব কিন্তু ক্রমশ কমে যাচ্ছে
অতীতে বাজেটে একটা বড় জায়গা থাকত পরিকল্পনা খাতে খরচ। কিন্তু যোজনা পরিষদ তুলে দেওয়া হয়েছে।কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে টিঁকে আছে শুধু অর্থ কমিশন। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও নেই। তাই বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্যের সামাল কোন পথে দেওয়া যাবে, তা জানতে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যোজনা পর্ষদ ভেঙে দিলেও উঠে এসেছে GST কাউন্সিল। দু’বছর হতে চলল, এই নতুন কর ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা কিন্তু রয়েই গিয়েছে। আগে বাজেটের দিন ছিল সরকারের আর্থিক ভাবনা জেনে নেওয়ার দিন৷ অতীতে বাজেটেই সরকার তার আর্থিক নীতি ঘোষণা করতো। কিন্তু এখন গোটা বছর ধরেই নতুন নীতি আসছে, যাচ্ছে। ফলে বাজেট বক্তৃতার আর আগের ওজন আর নেই। এর ফলে নিশ্চিতভাবে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। আর সেখানেই ধাক্কা খান লগ্নিকারীরা। লগ্নিকারীরা নির্দিষ্ট নীতি দেখেই টাকা ঢালতে চান। কিন্তু নীতি যদি ঘন ঘন বদলায়, তা হলে তাঁরা বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখেই দাঁড়ান। কোনও লগ্নিকারীই তা মানতে পারেন না৷ সরকারের রাজনৈতিক স্বপ্ন বাজেটে জোর পেলে সমস্যা বাড়ে৷ চলতি আর্থিক বছরেও বাজেটের আগে এবং পরে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক নীতি ঘোষিত হয়েছে। বাজেটের বাইরে গিয়ে এই সব ঘোষণা কিন্তু বাজেটের গুরুত্বই কমিয়ে দিচ্ছে। বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিই হল প্রতিশ্রুতি, বরাদ্দ এবং খরচের মধ্যে সাযুজ্য।
হাবেভাবে যা-ই বোঝান, অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। অর্থনীতি কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে বাজেটের আগে
দফায় দফায় আলোচনা করেছেন শিল্পপতি, অর্থনীতিবিদ, লগ্নিকারী, কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। এসব আলোচনায় লাভ কতখানি হলো, তা বোঝা যাবে শনিবার৷ তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতেই হবে, দেশকে আর্থিক বৃদ্ধির রাস্তায় ফেরাতে হলে বাজেটে একাধিক স্বচ্ছতা জরুরি৷ একাধিক অর্থ হয়, এমন কিছু না থাকাই দরকার৷ কথা বা ভাষার জাগলারিতে কখনও কোনও দেশ আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়নি, হবেও না৷

Previous articleনির্ভয়া দোষীদের ফাঁসির মহড়া দিতে তিহার জেলে এলেন ফাঁসুড়ে পবন, চলছে প্রস্তুতি
Next articleকুণালের পাশে দাঁড়িয়ে বিমান সংস্থাকেই প্রশ্ন পাইলটের