দিল্লির ভোট : মোদি, শাহকে ব্যর্থতা মানতেই হবে, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

১) দিল্লিতে সফল কেজরিওয়াল। সর্বশক্তি দিয়েও ক্ষমতাদখল পারে নি বিজেপি।

২) কেজরিওয়াল নিশ্চয়ই উন্নয়নের ঢালাও কাজ করেছেন, কিন্তু বিজেপি যদি এই ফলকে স্থানীয় পরিষেবাকেন্দ্রিক বলে শীর্ষনেতৃত্বকে আড়াল করার চেষ্টা করে, ভুল হবে।

৩) এটা নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহর নীতি, দৃষ্টিভঙ্গির পরাজয়। ভোটের ইস্যুতে উন্নয়নের বাইরে যেভাবে জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম, নাগরিকত্বের তাস খেলা হয়েছে, তার ব্যর্থতা।

৪) বিজেপির কটা আসন বাড়ল বা কমল, সেটা গৌণ। যে পরিমাণ শক্তিতে তারা দিল্লিদখলের চেষ্টা করেছে, তাতে সরকার গঠন না করাটাই ব্যর্থতা।

৫) একইসঙ্গে লক্ষ্যণীয়, দিল্লির বুকে সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার কংগ্রেসের মর্মান্তিক অবস্থা।

৬) আপের জয় বিজেপিবিরোধীদের কাছে আনন্দের। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল, এলাকাভিত্তিতে টুকরো টুকরো সাফল্য। জাতীয় স্তরে পূর্ণাঙ্গ বিকল্প এখনও অধরা। এটা বিজেপির প্লাসপয়েন্ট। সেই বিকল্পটা হতে পারে আসল চ্যালেঞ্জ। দেশে এত রাজ্য। এত ভোট। আজ জয়। কাল হার চলতে থাকবে। দরকার জাতীয় স্তরের স্থিতিশীল বিকল্প।

৭) বিজেপিকে মানুষের আসল সমস্যা- উন্নয়ন, আর্থিক নীতি, কর্মসংস্থান ভাবতেই হবে। এসবে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। নাগরিকত্ব ইস্যু বা দেশপ্রেমের জিগির তুলে এই ক্ষত পূরণ করা যাবে না।

৮) বিজেপি এখনও মোদি বা শাহ নির্ভর রাজনীতি করছে। লোকসভায় তা কিছুটা কাজে দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজ্যভিত্তিক মুখ নেই। বাংলাতেও যে কারণে লোকসভার ফল আর পরবর্তী ফল আলাদা হচ্ছে এবং হবে।

৯) দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের ইস্যুতে মানুষ কী ভাবছেন, তার শিক্ষা এই জনরায় থেকে স্পষ্ট।

১০) মানুষ সবার আগে চান সুস্থ ও নিরাপদ অর্থনীতি। চান শান্ত স্থিতিশীল সামাজিক কাঠামো। এই জায়গাটা অস্থির ও অনিশ্চিত হলে শুধু অন্য আবেগের ফাস্ট ফুড খাইয়ে মানুষের পেট ও মন ভরানো অসম্ভব। তাছাড়া একটা দেশে প্রায় গোটা মুসলিম সমাজকে ক্ষুব্ধ করার রাজনীতিটা কোনো বুদ্ধিমান দলের রাজনৈতিক রণকৌশল হতে পারে?

১১) আবার এই ফলাফলে বিজেপি উঠে গেল ভাবাটাও বোকামি। এখানে কেজরিওয়াল প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হাওয়া উঠতে দেন নি। কিন্তু যেখানে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হাওয়া থাকবে, সেখানে বাড়তি টোটকা মিশিয়ে বিজেপি আবার কোথাও সফল হতেই পারে। তাছাড়া দিল্লি মূলত শহরকেন্দ্রিক ভোটারদের জায়গা। এখানে কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তি ও কাজ একটা রসায়ন দেখিয়েছে। ভোটারের এই চরিত্র সর্বত্র থাকবে না। ফলে বিজেপিবিরোধী দলগুলির আত্মসন্তুষ্টির কোনো অবকাশ নেই।

আরও পড়ুন-বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মানুষ, দাবি অধীরের

Previous articleবিজেপিকে দিল্লির রাস্তায় তুলে আছাড় মারলো মানুষ, প্রতিক্রিয়া সুজনের
Next articleহার মেনে নিয়ে অবশেষে ‘পাল্টি’ খেলেন দিল্লি বিজেপির প্রধান মনোজ তেওয়ারি